অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


তারুয়ার বন উজারে বাঁধা দেয়ায় ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তাকে মারধর


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১ই নভেম্বর ২০২২ সকাল ০৮:০৭

remove_red_eye

৪১০

বাংলার কন্ঠ প্রতিবেদক।। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নে চর তারুয়া দ্বীপে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটতে বাঁধা দেয়ায় রেঞ্জ কর্মকর্তার ওপর হামলা ও মারধর করার অভিযোগ ওঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢালচর লঞ্চঘাট এলাকায় এ হমালার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর ঢালচর থেকে চরফ্যাশনে চলে আসেলেও পরবর্তীতে পুনরায় তিনি ওই চরে ফিরে যান।
 
ভোলা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাল চরের ইউনিয়নের তারুয়া সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক হাজার গাছ এক্সকাভেটর দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। তারপর সেখানে বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে। বনের গাছ উজাড় করার খবর পেয়ে ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর সেখানে গিয়ে তাঁদেরকে বন ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। এতে সেখানে থাকা স্থানীয় শাজাহানের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে বন বিভাগের এ কর্মকর্তাকে ধাক্কা দিয়ে সেখান থেকে সরে যেতে বলে। এক পর্যায়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে বন ধ্বংসকারীরা। তবে এঘটনায় কোনো মামলা না করা হলেও বিষয়টি বন বিভাগের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরে ঢালচরের সংরক্ষিত বন কেটে উজার করে বাড়িঘর নির্মান করছেন স্থানীয় কমান্ডার বাহিনী নামের একটি চক্র। সরকারি বন ধ্বংসের অভিযোগে বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগ এক ডজনেরও বেশী মামলা দিয়েছে এদের বিরুদ্ধে। এর পরও তাদের থামানো যাচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে কথা বলা বা বাঁধা দিতে গেলেই বিভিন্ন সময়ে লাঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে সেখানে দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তারা। 
 
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢালচরে সংরক্ষিত বনের ২৫ থেকে ৩০ একর ভূমির কয়েক হাজার গাছ এক্সকাভেটর (মাটিকাটার যন্ত্র) দিয়ে উপড়ে ফেলেছে চক্রটি। বৃহস্পতিবার সকালে সদ্য যোগদান করা ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর বন দেখার জন্য তারুয়ার গহীন বনে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় স্থানীয় একটি চক্র এক্সকাভেটর দিয়ে বিশাল যায়গা জুড়ে গাছ ওপরে ফেলছে। এসময় তিনি তাদেরকে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তাঁর কথা না শুনে তাঁরা গাছ কাটা চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা তাদের সাবধান করলে তাদের মধ্য থেকে শাজাহান নামের একজন ওই কর্মকর্তার ওপর হামলা চালায়। এমনকি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বলে।
পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা সেখান থেকে চলে এসে দুপুরের দিকে চরফ্যাশন যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢালচর লঞ্চঘাটে আসলে ওই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তফা কমান্ডারের নেতৃত্বে বনধ্বংশ করা চক্রটি চার দিক থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাম হাওলাদারের ভাতিজা রাকিব রেঞ্জ কর্মকর্তাকে পিছন দিক থেকে কিলঘুষি মেরে লাঞ্চিত করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত দিয়ে আসে।    
 
ঢালচরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢালচর এলাকার কমান্ডার বাহিনী নামে একটি চক্র বনের গাছ কেটে দোকান ও বসতি নির্মাণ করছে‌। সেই স্থাপনা মোটা অংকের টাকায় বিক্রি হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের মদদে বন উজার করে আসছে। কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। এমনকি স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
 
এ ব্যাপারে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম হাওলাদার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাঁর কাছে ঘটনাস্থল থেকে ফোনে জানানো হয়েছে স্থানীয়রা কেওড়া গাছের ডাল কাটতে ছিল। এসময় রেঞ্জ কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে এদেরকে থাপ্পর দিলে সেখানে থাকা লোকজন তাঁর সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কমান্ডার গিয়ে লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়।
 
বন ধ্বংস করে বাড়িঘর নির্মানের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এগুলো গত বছর করা হয়েছে। এসব বিষয়ে সে সময় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তবে এবছর কোনো বাড়িঘর করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অপ প্রচার চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
 
তবে এব্যাপারে ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর এর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়চার জানান, বিষয়টি ভোলা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে বন ধ্বংস করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানে থাকা এক্সকাভেটর অপসারণের পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।