অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় তিন মাসেও উদ্ধার হয়নি ওবায়দুল হত্যার রহস্য


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ই অক্টোবর ২০২২ রাত ১০:০১

remove_red_eye

৩৫০



ইব্রাহিম আকতার আকাশ : ১০ মাস বয়সে বাবা হারানো ওবায়দুল (১৭) বড় হচ্ছিলেন নানা-নানির কাছে। চলতি বছর তাঁর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাস তিনেক আগে কে বা কারা যেন বাড়ির পাশে গলা কেটে হত্যা করে রেখে গেছে তাকে। এরপর থেকে নাতি হত্যার বিচার চেয়ে ঘুরছেন নানি হেনা বেগম ও নানা কাঞ্চন শিয়ালী। কিন্তু খুনের রহস্য এখনো অন্ধকারে।

ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ভোলা থানা পুলিশ এ হত্যার কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি। সবশেষ অগ্রগতির খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটকে। এ সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম কামাল বলছেন, ঘটনার ক্লু উদঘাটনে কাজ করা হচ্ছে।

গত ১৩ জুলাই সকালে ৯৯৯ ফোনে জেলার সদর উপজেলা আলীনগর ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে একটি সুপারি বাগান থেকে ওবায়দুলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে ভোলা থানা পুলিশ।

ঘটনার পর ওবায়দুলের নানা কাঞ্চন শিয়ালী এ ঘটনায় অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মাসের পর মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এ খুনের রহস্যবৃত্ত থেকে গেছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন খুব দ্রæতই এ খুনের রহস্য উন্মোচন হবে।

ভোলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফরহাদ সরদার জানান, এ ঘটনাটির তদন্ত নিয়ে তিনিও কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ২২ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এবং ২ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কয়েকদিন জেলে থাকার পর বর্তমানে তাঁরা দু'জন জামিনে রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে এ হত্যার কোন ক্লু উদঘাটন করা যায়নি।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় আরো বেশ কয়েকজনকে সন্দহের তালিকায় রাখা হয়েছে। যাদের অবস্থানও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ভোলায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় ওবায়দুল হত্যার ঘটনাটির ক্লু উদঘাটনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। খুব দ্রæই সন্দেহভাজন অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ভোলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল ইসলাম কামাল জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনাটির তদন্তভার তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন এ খুনি জড়িত থাকতে পারে এরকম বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রেখেছে। খুব দ্রæতই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আশাব্যঞ্জক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ওবায়দুলের জন্মের ১০ মাস পর তাঁর বাবা আবদুল্লাহ লিভারজনিত কারনে মারা যান। এরপর সে তাঁর নানি হেনা ও নানা কাঞ্চন শিয়ালীর কাছে বড় হোন। এ বছর সে ভোলা পশ্চিম রুহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। মা ফাতেমা বেগম স্বামী আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার এক বছর পর অন্যত্রে বিয়ে বসেন। নানা নানীর সঙ্গে রুহিতা গ্রামেই থাকতো ওবায়দুল।

ঘটনার আগের দিন রাত ৮টার দিকে সে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ১২টার পরেও বাড়িতে ফিরে না আশায় স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরদিন সকালে বাড়ির পাশে একটি সুপারি বাগানে তাঁর গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।
নিহত ওবায়দুলের নানি হেনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, 'ওবায়দুল হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে গড়িমসি করছে, '৩ মাসেও জানতে পারলাম না কে বা কারা আমার এতিম নাতিটাকে গলা কেটে হত্যা করলো। আমার নাতির খুনিরা যাতে খুব দ্রæত গ্রেফতার হয়, সেজন্য প্রতি শুক্রবার আমি মসজিদে টাকাও দান করি'। আল্লাহ আমার নাতির হত্যাকারিদের বিচার করবে।

নানা কাঞ্চন শিয়ালী বলেন, মামলা হওয়ার পর পুলিশ মাঝেমধ্যে তাকে থানায় ডেকে নেন। এ ঘটনায় কাউকে সন্দেহ হয় কিনা জিজ্ঞেস করেন। তিনি দাবি করছেন, এ ঘটনায় তাদের সন্দেহ করা কাউকেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।

ওবায়দুলের মা ফাতেমা বেগম মোবাইল ফোনে বলেন, আমার এতিম ছেলেটাকে কারা খুন করলো আজ পর্যন্ত তাদেরকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ১০ মাস বয়সে ওবায়দুলের বাবা ওবায়দুলকে আমার কোলে রেখে পরপারে চলে যান। আর আজ আমার বুক থেকে খুনিরা আমার ছেলেকে কেড়ে নিল। আমি এ হত্যার ঘটনায় খুব দ্রæত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

ভোলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফরহাদ সরদার বলেন, পুলিশ এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। এ কারনে থানা থেকে মামলাটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে আনা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখনো এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারিনি। তবে আমরা আশা করছি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারবে এবং তা খুব দ্রæত সময়ের মধ্যেই হবে।





আরও...