অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


ইলিশায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২২ রাত ০৯:৫৬

remove_red_eye

৩৩৮

বাংলার কন্ঠ প্রতিবেদক: ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ৮নং পূর্ব চর ইলিশা রেবা রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম ও পাঠদান। ভবনের জরাজীর্ণ দশায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন আছে আতঙ্কে, তেমনী শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঝুঁকির মধ্যেই এই ভবনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১লক্ষ টাকার একটি ক্ষুদে মেরামতের অনুদান পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যায়গাগুলো মেরামত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এবং ২০২০ সালে ২ লক্ষ টাকার অনুদান পেয়ে এককক্ষ বিশিষ্ট একটি শিশু পাঠদানের শ্রেনীকক্ষ চালু করেন। এদিকে দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রæত ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি দ্রæত নজর দিলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা হতে পারে বলে ধারনা সকলের।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৯১/৯২ অর্থ বছরে এলজিইডির   মাধ্যমে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা সরকারি ভবন নির্মাণ করা হয়। চারটি কক্ষের মধ্যে একটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। অপর তিন কক্ষে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বর্তমানে স্কুলটিকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯২ সালে নির্মিত এ ভবনটিতে ২০১৭ সালে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে শ্রেণি কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ভবনটির অধিকাংশ স্থানে ফাটল। শিক্ষক রুমে বিশাল ফাটল। পুরনো মরিচা ধরা রড বের হয়ে গেছে। আরসিসি পিলার, গ্রেট বিমগুলো ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতরের দেয়ালে বিস্তৃত ফাটল ধরেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ার কারণে দেওয়ালগুলো শ্যাওলা ধরে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। ফলে সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবস্থা দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এবং অনেক শিক্ষার্থীরা ভয়ে রীতিমতো স্কুলে আসছেন না।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে এস,এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভবনটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ভবনের এ অবস্থা দেখে ভয়ে অনেক শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে চায় না। দিনে দিনে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অভিভাবকদের মধ্যেও ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অনীহা দেখা দিয়েছে। তাই এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পাশাপাশি একটি নতুন ভবন জরুরি হয়ে পড়েছে।

৫ম শ্রেনীর একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, সামনে আমাদের সমাপনি পরীক্ষা। তাই স্কুলের ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে ক্লাস করছি। সবসময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভবনটি ধসে পড়ার আতঙ্কে থাকি। যেকোনো সময় কোনো দুঘর্টনা হতে পারে। স্কুলের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুল ভবনটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। জায়গায়-জায়গায় বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। স্কুল ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেকোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে নতুন ভবনের বিকল্প নাই। তাই আমাদের একটি নতুন ভবনের দাবি।
কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভের সুরে বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ যেখানে মানুষ গড়া হয়, সেই জায়গাটাকে গড়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন, ঝুকিপূর্ণ ভবনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুঘর্টনা।

এবিষয়ে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।





আরও...