অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


নার্সারি হাবিবের সাফল্যের গল্প


বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮ই সেপ্টেম্বর ২০২২ রাত ০৮:১৭

remove_red_eye

৬৩৪

বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি: ভোলা জেলায় গত ৫-৬ বছর আগেও নার্সারির দেখা পাওয়া যায়নি। বন বিভাগ অথবা কৃষি বিভাগ স্বল্প পরিসরে প্রদর্শনীর জন্য কিছু চারা উৎপাদন করত। স্থানীয়রা গাছ লাগানোর মৌসুমে স্বরূপকাঠি থেকে আসা চারার উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন জেলার অনেক স্থানেই নার্সারি গড়ে উঠেছে।বোরহানউদ্দিন উপজেলায় প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারির কারিগর মো. হাবিব।
উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ছাগলা গ্রামের এক সময়ের বর্গাচাষি হাবিবের পড়াশোনা বলতে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। কিন্তু ধৈর্য আর পরিশ্রমে তিনি কালক্রমে প্রায় পৌনে চার একর জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল নার্সারি। নার্সারির আয়ে তার পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। অন্যদিকে তিনি প্রমাণ করেছেন, অন্য জেলা থেকে গাছের চারা বা কলম না এনে চেষ্টা, একাগ্রতা ও পরিশ্রম থাকলে নার্সারিতে উৎপাদিত চারা দ্বারা এলাকার চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব। হাবিবের অনুপ্রেরণায় স্থানীয় যুবকরা এখন নার্সারি করার দিকে ঝুঁকছেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে মিয়াবাড়ি-ঘোলপাড়-দালালবাজার সড়ক। সড়কের একপাশে ছাগলা হাসনাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা, অন্যপাশে ছাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সড়কের পশ্চিম পাশে সারি সারি ফলদ গাছের চারা, কলম আর মৌসুমি সবজির চারা। বিভিন্ন প্রজাতির কলমে বারোমাসি আম, আমড়া, জাম্বুরা, আমলকি, পেয়ারা, লেবুসহ নানা ফল ধরে আছে। এটিই হাবিবের নার্সারি।
প্রায় দুই শতাধিক প্রজাতির ফলদ চারায় সমৃদ্ধ তার নার্সারি। দিন দিন তার নার্সারিতে গাছের প্রজাতির সংখ্যা বাড়ছে। থেমে নেই বিভিন্ন জাত সংগ্রহ। নতুন প্রজাতি বা গাছের খবর শুনলেই সেদিকে ছোটেন তিনি। এছাড়া প্রতি মৌসুমে প্রায় পঁচিশ প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন।
হাবিব বলেন, বোরহানউদ্দিনসহ গোটা ভোলা জেলায় জলপথে স্বরূপকাঠি থেকে গাছের চারা আসত। এখনো আসে। ২০০২ সালে আমার মনে প্রশ্ন জাগল স্বরূপকাঠিতে চারা উৎপাদন হলে আমাদের এখানে কেন হবে না। এরপর আমি স্বরূপকাঠি যাই। রাতে হোটেলে থাকতাম, আর দিনে ওদের নার্সারিতে চলে যেতাম। ওরা কিভাবে গুটিকলম, শাখাকলম, গ্রাফটিং করে তা মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। কাজটা আমি আস্তে আস্তে শিখে ফেলি। তারপর স্বরূপকাঠি থেকে কিছু গাছ কিনে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, নিজের জমি না থাকায় আট শতক জমি বর্গা নিয়ে কলম করার কাজ শুরু করি। কিন্তু মাত্র চার ভাগের মধ্যে এক ভাগ কলম হয়েছিল, বাকিগুলো হয়নি। আবার স্বরূপকাঠি যাই। ওদের পরামর্শ নেই। ভুলগুলো শুধরাই। আর সমস্যা হয়নি। এরপর বগুড়া, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের অনেক এলাকায় কলম করা শিখতে গিয়েছি। যেখানে যাই সেখান থেকেই আসার সময় মাতৃগাছ কিনে বাড়ি ফিরেছি। এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে থাই-১ জাতের পেয়ারার জাত এনেছি।
তিনি জানান, নার্সারিতে আমের ১৭টি, কমলার ৫টি, বড়ই'র ৭টি, মাল্টার ৪টি, পেয়ারার ৬টি প্রজাতির কলমের চারা আছে। এ রকম প্রায় সব ফলের ৫-৬টি প্রজাতির চারা আছে। জাত-প্রজাতি বাড়ার কারণে নার্সারির জায়গা বাড়াতে হয়েছে। ফল গাছের পাশাপাশি তিনি উন্নত জাতের পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, বেগুন, টমেটো, মরিচ, লাউ, সিমসহ নানা প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদন করেন। গাছের কলম, চারা, সবজি চারা বেশির ভাগই ক্রেতারা নার্সারি থেকে কিনে নিয়ে যায়। তবে উপজেলার বিভিন্ন হাটেও বিক্রি করেন তিনি।
হাবিব আরও জানান, নার্সারির আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এর থেকে কিছু সঞ্চয় করেন। এছাড়া দেড় একর জমিও কিনেছেন। গড়ে প্রতিদিন তার নার্সারিতে ৭ জন লোক কাজ করে। গেল বছর ১৮ লাখ টাকা বিক্রিতে সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ টাকার গাছের চারা, কলম ও সবজি চারা বিক্রি করেছেন। লাভের হিসাব হয়নি।
হাবিবের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম শুরুর দিকে স্বামীর সঙ্গে নার্সারিতে সমানতালে কাজ করত। এখন আর করেন না। তাদের ২ ছেলে ২ মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বছর খানেক আগে। অন্যরা পড়াশোনা করে। মনোয়ারা জানান, নিজে এসএসসি পাস করে আর পড়াশোনা করা হয়নি। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত করবেন।
নার্সারির বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এইচএম শামীম জানান, হাবিব খুব পরিশ্রমী। তাঁর এ নার্সারি বিশেষ করে বেকার যুবকদের জন্য একটি প্রেরণার বড় উদাহরণ।