অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষ : ভোলায় ৩৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১লা আগস্ট ২০২২ রাত ১০:৫৭

remove_red_eye

৩০৩

 


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক  :  ভোলায় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে  আবদুর রহিম নামে সেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী  নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে পৃথক দুটি মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে সোমবার রাত ১১ টায় ভোলা মডেল থানার ওসি এনায়েত হোসেন নিশ্চিত করেন। জানায়ায়, রবিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। পুলিশ সোমবার দুপুর পর্যন্ত সংর্ঘষের ঘটনায় ১০জনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে আবদুর রহিমের ময়না তদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে তার মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন ভোলায় এসে মর্গের সামনে নিহতের পরিবারের স্বজনদের সমবেদনা জানিয়ে এই হত্যার বিচার দাবি করেন। অপর দিকে জেলা বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয়ে সোমবার সকাল থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অবস্থান নিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মগের্র সামনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আব্দুর রহমানের স্বজনরা নিহতের মৃতদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভোলা সদরের দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের মৃত হারেসের ৪ছেলের মধ্যে নিহত আবদুর রহিম সকলের ছোট।  তার স্ত্রীর নাম বিবি খাদিজা। তাদের ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। সে কৃষি কাজ করতো।  এ সময় নিহতের স্ত্রী ও স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। অবুঝ সন্তানরা শোকে বাক রুদ্ধ হয়ে আছে তাদের পিতার মৃতদেহের অপেক্ষায়। এ সময় তার স্ত্রী ও স্বজনরা এই হত্যার বিচার দাবি করেন। এদিকে সোমবার সকালে বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন ভোলায় এসে মর্গের সামনে নিহতের পরিবারের স্বজনদের সমবেদনা জানিয়ে এই হত্যার বিচার দাবি করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গতকাল জনগনের দাবী নিয়ে মাঠে ছিলাম। শান্তিপূর্ন মিছিলে পুলিশ হঠাৎ আক্রমন করেছে। গুলি ছুড়েছে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২ জনকে দেখে এসেছি। তাদের সকলে শরীরে গুলির দাগ রয়েছে। ছাত্র দলের সভাপতি নুরে আলম ঢাকায় আইসিও’তে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। নুরে আলম বাঁচবে কিনা জানিনা। গুলিতে ১ জনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এই কথা বলার জায়গা কোথায় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির ওই নেত্রী। তিনি অভিযোগ করেন বিএনপির কোন নেতাকর্মী আজ বাড়িতে থাকতে পারছে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জানাযায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে  ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেফ হাসপাতালের মর্গে আবদুর রহিমের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের ভাই আব্দুর রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

ভোলা মডেল থানার ওসি এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ এসোল্ড মামলায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ জসিম বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও অজ্ঞাত ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ জসিম বাদী হয়ে পৃথক আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত ২৫০/৩০০ জনকে দুই মামলায় আসামী দেখানো হয়েছে।
 এ ঘটনায়  পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানান তিনি।
অপর দিকে ভোলা জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপান সাংবাদিকদের জানান, তাদের সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুর রহিম নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি তথা নিহতের পরিবারের পক্ষে থেকে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে রবিবার বিকালে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সমাবেশের অনুমতি না নিয়েই বিএনপি কর্মসূচি দিয়েছে। তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়নি।  পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে  বিএনপি রাস্তায় নেমে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এতে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিএনপি কর্মী নিহত হওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আরও জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে প্রকৃত সত্য জানা যাবে। তবে হাসপাতালের ডাক্তারদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, মাথায় আঘাত জনিত কারণে যুবদল কর্মী আব্দুর রহিম নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর তার নিজ বাসভবনে রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, বিনা উসকানিতে পুলিশ নেতা কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আব্দুর রহিম নিহত হয়েছে বলে দাবী করেন।
 উল্লেখ্য,সারা দেশে লোড শেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রবিবার ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাটিচার্জ ও টিআর সেল নিক্ষেপ এবং শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষে আব্দুর রহিম (৪০) নামে সেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়।









আরও...