অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহত : ১০ পুলিশসহ আহত অর্ধশতাধিক


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১শে জুলাই ২০২২ রাত ১১:৫০

remove_red_eye

২৯৮




বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক : তেল, গ্যাস ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং লোডশেডিং এর প্রতিবাদে রবিবার ভোলায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাটিচার্জ ও টিআর সেল নিক্ষেপ এবং শর্টগানের গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে আব্দুর রহিম (৪০) নামে সেচ্ছাসেবক দলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১০ পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এঘটনায় পুলিশ ১২ জনকে আটক করেছে। এদেিক সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষে বিএনপি রাস্তায় নেমে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল, কাচের টুকরা, ভাঙ্গা কাচের বোতল এমন কি গুলি বর্ষণ করা হয়। সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপি অফিস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। ওই এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,  রবিবার বেলা ১১ টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তেল, গ্যাসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে মূল্যবৃদ্ধি এবং লোডশেডিং এর প্রতিবাদে ভোলা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ.বি.এম মোশারেফ হোসেন। সমাবেশ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এ সময় রাস্তা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করায় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাক্কা ধাক্কি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশের উপর ইট-পাকেল নিক্ষেপ করা হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠি চার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। সংর্ঘষে আব্দুর রহিম (৪০) নামে সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহত হয়। ১০ পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আরমান হোসেন, এসআই আনিচ, এএসআই মোস্তফা, এএসআই জাফর হোসেন, জেলা বিশেষ শাখার এএসআই হুমায়ুন, কনস্টবল রাব্বি, গোয়েন্দা শাখার এএসআই নুর ইসলাম, নায়েক সঞ্জিব, কনস্টবল রেজাউল, কনস্টবল সুভাষ। অপর দিকে বিএনপির গুরুতর আহতদেরকে ভোলা ও বরিশালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। পুলিশী হয়রানির ভয়ে অনেকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। অনেকে আবার গোপন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার উপরে বিপুল সংখ্যক ইট ও চেয়ার ভাঙা পড়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রক্তের দাগ। বিএনপি অফিসের পিছনের অংশে রক্তের দাগ বেশি দেখা গেছে। ওই সময় হাসপাতালের পাশাপাশি আহত বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানি এড়াতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে জেলা বিএনপি কার্যালয় মহাজনপট্টি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফরহাদ সরদার, সদর মডেল থানার ওসি এনায়েত হোসেনসহ সিনিয়র অফিসারদেরও ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। ঘটনার পর বিএনপির সিনিয়র ২/১ জন নেতা ছাড়া দলীয় কার্যালয় এলাকায় তেমন একটা দেখা মিলেনি। ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ফরহাদ সরদার সাংবাদিকদের জানান, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার জন্য বলা হয়। কিন্তু তার পরও তারা রাস্তা আটকে রাষ্ট্র বিরোধী ¯েøাগানসহ বিক্ষোভ করে এবং পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে প্রথমে লাঠি চার্জ, টিআর সেল গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ৩০ রাউন্ড টিআরসেল এবং ১৬৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও সটগানের গুলি  ছোড়ে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুমেন জানান, পুলিশের গুলিতে তাদের আবদুর রহিম নামে সেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহত হয়েছে। তার বাড়ি দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে। এছাড়াও ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম, জেলা বিএনপির সাথারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ট্রুম্যান, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোপান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আলামিন, সুমন, লিখন চৌধুরী, মো: সেন্টু, সালাউদ্দিন, আলামিন, রাজিবসহ প্রায় একশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবী করা হয়। এর মধ্যে গুরুতর ১৭জনকে বরিশাল হাসপাতালে ও ৭ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয় ।
এদিকে ভোলার ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নাফিসা জেসমিন ঐশী জানান, একজনকে মৃত হাসপাতালে আনা হয়েছে। তারা দুপুর পর্যন্ত ২০জনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশংকা জনক। তাদের মধ্যে একজনকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।  
এদিকে পুলিশের উপর বিএনপির হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ভোলা জেলা শহরে রবিবার বিকালে  যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ ছাড়াও স্বেচ্ছসেবক লীগের নেতাকর্মীরা শহরে মোটর সাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।





আরও...