অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


বর্ষায় ভোলায় মাছ ধরার জাল বিক্রি বেড়েছে


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ই জুলাই ২০১৯ রাত ১০:৪৭

remove_red_eye

১৬৬৫

 

হাসনাইন আহমেদ মুন্না : চলতি বর্ষা মৌসমে জেলায় মাছ ধরার জাল বিক্রি বেড়ে গেছে। আষাঢ়ের ঘন বর্ষায় মাছ শিকারের জন্য ঝাঁকি, ধর্ম, চাক, পাই, জিড়ো সুতা, কোনা ইত্যাদী জালের কদর বেড়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনে বর্ষায় দলবদ্ধভাবে মাছ শিকার উৎসবে পরিনত হয়। জেলা সদর ছাড়াও অন্য ৬টি উপজেলার গ্রামঞ্চলগুলোতে এখন জাল বেচা-কেনার ধুম পড়েছে।
বর্ষার এই সময়টাতে জেলা শহর, উপজেলা ও গ্রামীণ জনপদের পুকুর, বিল-খাল, ডোবা, নালা ইত্যাদী পানিতে ডুবে থাকে। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের বিস্তির্ণ বিলাঞ্চলগুলোতে পানি জমে থাকে দীর্ঘদিন। আর বর্ষার নতুন পানিতে দেশীয় নানা প্রজাতীর মাছের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় সহজে। অতি জোয়ার বা টানা বর্ষণের পানিতে কখোনো কখোনো নদী-খাল-বিল-পুকুর একাকার হয়ে যায়। মূলত নদ-নদী ও পুকুরের বিভিন্ন মাছ এসময় ধরা পড়ে শিকারীদের জালে।
আবার অনেকের পুকুর বা মাছের ঘের প্লাবিত হয়েও এখানে মাছ চলে আসে। কেউে কেউ জোয়ারের সময় জল প্রবেশের মূখে জাল বেঁধে দেয়। পরে পানি নেমে গেলে জালে ধরা পড়ে নানা জাতীয় মাছ। তাই বর্ষার এই সময়টাতে ভোলায় জালের কদর বেড়ে যায়। গ্রামের ঘরে ঘরে জাল প্রস্তুত রাখে সবাই। আবার অনেকেই নতুন জাল কিনে রাখে মাছ শিকারের জন্য। কেউ কেউ পুরানো জাল বুনন করে। যুবকরা দল বেধে মাছ শিকারে যায়। রিতিমত উৎসবে মেতে উঠে সবাই। এ যেন আবহোমান বাংলার চিরন্তন রুপ।
শহরের নতুন বাজারে বিভিন্ন আকারের জালের পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। এখানে ঝাঁকি জাল বড় সাইজের সর্বনি¤œ ১ হাজার ৮’শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ধরনের ঝাকি জাল ৮’শ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৮’শ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া কোনা জাল ৪’শ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধর্ম, পাই জলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৬’শ টাকায়। এখানে জালের মেরামতেরও কাজ চলছে। আষাঢ়-শ্রাবন এই ২মাসেই মূলত তাদের ব্যবসা সবচে ভালো হয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
জাল বিক্রেতা কামাল মিয়া ও সুলতান আহমেদ জানান, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা এই পেশায় রয়েছেন। মূলত বর্ষার সময়টাকে তারা টার্গেট করে মাঠে নামেন। এই সময়টা ছাড়া প্রায় পুরো বছর তাদের তেমন একটা কাজের চাপ থাকেনা।
তারা জানান, তাই এই সময়ের আয় দিয়েই তাদের বাকি সময় পার করতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি করে জাল বিক্রি হচ্ছে তাদের। আর প্রতিটি জালে মান ভেদে নি¤েœ ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭’শ টাকা লাভ থাকে তাদের। গ্রাম থেকে আগত ক্রেতারাই বেশি পরিমানে জাল কিনছেন বলে তারা জানান।
এছাড়া বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমুদ্দিন, চরফ্যশন ও মনপুরা উপজেলায় জাল বেচা-কেনা জমে উঠেছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজারে জালের বাজার জমজমাট। বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফুলকাচিয়া এলাকার বাসিন্দা সেন্টু মিয়া ও ইয়াকুব আলী বলেন, তাদের এলাকায় প্রচুর বিল রয়েছে। গত কয়েকদিনের বর্ষায় এসব বিলে পানি জমে আছে। এই পানিতে নদ-নদী ও পুকুরের বিভিন্ন মাছ ধরা পড়ে। তাই অল্প পানিতে তারা মাছ ধরায় ব্যস্ত।
চরফ্যশন উপজেলার জাল ব্যবসায়ী আসরাফ আলী বলেন, ইদানিংকালে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা ভাব। তারপরেও বর্ষা মৌসমে জাল বিক্রি ভালো হয়। এই সময়টার আশায় সারা বছর অপেক্ষা করেন তারা। তাই নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বন্ধ করে দেশীয় জালের ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলেছেন তিনি।