অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় কাফনের কাপড় পরে বাড়ি ফিরলেন হাবিব; গ্রামের বাড়িতে দাফন সম্পন্ন !


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ই জুন ২০২২ রাত ০১:০০

remove_red_eye

১৮৫

 কথা ছিলো বেতন পেলেই ৪ দিনের ছুটিতে হাবিবুর রহমান বাড়ি যাবে। মা ছোট বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দে ছুটি কাটাবে। কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না হাবিবের।  সোমবার সকালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এম্বুলেন্সে লাশ হয়ে ছিরদিনের জন্য  ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়া গ্রামে পৌছায়। এ সময় নিহত হাবিববের বাড়িতে এক হৃদয় বিদারক অবস্থা সৃষ্টি হয়। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মুর্চা যাচ্ছেন মা হোসনে আরা। পরিবারের উপার্জনকারী তরুন সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা। ওই বাড়িতে এখন শোকে মাতম চলছে। কান্নায় পরিবেশ যেন ভারি হয়ে উঠে।  সোমবার  সকাল ৯টার দিকে জানাজা শেষে নিহত হাবিবুর রহমানকে (২৫) বাড়ির দরজার মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। হাবিবের স্বপ্ন ছিলো ছোট বোন হাবিবাকে ডাক্তারী পড়াবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।


জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুÐে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে নাইট ডিউটি করছিলেন হাবিবুর রহমান। ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্য সকলের সাথে অগ্নিকাÐে প্রাণ যায় হাবিবুর রহমানের।  পিতৃহারা হাবিবুর রহমান পরিবারের হাল ধরতে দীর্ঘ ৭ বছর আগে মামার সাথে চট্টগ্রামে পাড়ি জমায়। নিহত হাবিবুর রহমান বিএম কন্টেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চাকুরি করেছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে নিহত হাবিবের মা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, গত শনিবার সকালেও ফোনে কথা হয়েছিলো হাবিবের সাথে। হাবিব বলে ছিলো মাগো  তুমি কি খাইছো , কি করো ? আমি বাবারে কইছি বাবা আমি নাস্তা করছি আর আমার মাইয়ারে পড়াইতে লইছি। তখন হাবিব কইলো ওরে মাইরো না মা, ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওর জন্য একটু কষ্ট করো তোমার ওরে নিয়া চিন্তা করা লাগবো না।  দুপুরেও আমার সাথে ঘন্টা খানেক কথা হয়। তখন কইছে মাগো আমি বাড়িতে আমু। আমারে চার দিনের ছুটি দিছে। বেতন পাইলে বাড়িত আমু।

দুই দিন আইতে যাইতে যাইবো আর দুই দিন তোমাগো লগে থাকমু। এই ছিলো আমার বাবার সাথে শেষ কথা । আর তো আমার বাবার মুখের কথা শুনতে পারমু না বলেই হাবিববের মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। নিহত হাবিবুর রহমানের নানা মো. ছিদ্দিক বেপারি বলেন, হাবিব ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে তাকে লালন পালন করছি। অগ্নিকাÐের দিন মাগরিবের সময় হাবিবুরের সাথে কথা হইছে। তখন সে বললো নানা আমার রাত ৮ থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত ডিউটি এই সময় ফোন দিয়েন না। কথা বলার পরে আর আমরা কিছু জানি না।

রবিবার সকালে আগুন লাগার খবর পেয়ে চট্টগ্রামে থাকা তাঁর মামা আলমগীরকে ফোন দিলে সে জানায়, রাতে ডিপুতে কেমিক্যাল বিস্ফোরণ হয়েছে তাতে অনেক মানুষ মারা গেছে। এতে হাবিবুরও মারা গেছে । হাবিব ছিলো অবিবাহিত। এদিকে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এর নির্দেশে তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব ছুটে যান নিহত হাবিবুর রহমানের বাড়িতে। হাবিবুর রহমানের  পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ এর পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং নিহতের জানাযা নামাজে অংশ নেন।





আরও...