অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


মেয়ের বিয়েতে আয়ের একমাত্র উৎস রিক্সা বিক্রি করে বিপাকে চাঁন মিয়ার পরিবার


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮শে এপ্রিল ২০২২ সকাল ১০:৩৭

remove_red_eye

৪৬৩

জুয়েল সাহা বিকাশ II আমরা স্বামী-স্ত্রী না খেয়ে কষ্ট করে ক্ষুদার জ¦ালা সহ্য করতে পারলেও ছোট ছোট দুই শিশু মেয়েরা তা পারেনা। মাঝে মধ্যে ঘরে চাল না থাকলে রান্না করতে পারিনা। মেয়েদের মূখে খাবারও তুলে দিতে পারিনা। আর তখন মেয়েরা শুধু বলে মা ভাত দাও ভাত দাও ক্ষুদা লাগছে। তখন শুধু চোখের পানি ফেলি। আর মেয়েদের বলি বাবার চাল নিয়ে আসলে রান্না করে দিবো। মেয়েরা অপেক্ষা করতে করতে ক্ষুদার জ¦ালায় ঘুমিয়ে পরে। কি আর করতো আমরা তো গরীব।

আগামী দিনগুলো কিভাবে কাটতে জানিনা। কথগুলো ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহারকান্দি গ্রামের রিক্সা চালক মোঃ চাঁন মিয়ার স্ত্রী ইয়ানুর বেগমের। তাদের এক মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস অটোরিক্সাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে স্বামী চাঁন মিয়া। যার কারণে ছোট-ছোট শিশুদের নিয়ে না খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার।


জানা গেছে, ওই গ্রামের রিক্সা চালক মোঃ চাঁন মিয়া (৫০) এর পিতা মোঃ বশির মিয়া ছিলেন একজন দিনমজুর। সংসারে অসচ্ছলতার কারণে পড়াশুনা করতে পারেনি তিনি। আর সংসারে অভাবের কারণে ছোট বেলা থেকেই রিক্সা চালাতে শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সে রিক্সা চালাচ্ছেন তিনি। সবার ভাগ্য পরিবর্তন হলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি চাঁন মিয়ার। তারপরও নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে জীবন পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। নিজের কোন জমি ও ঘরও নেই। ভাইদের জমিতে কোন রকম ঘর তুলে বাস করেন। সেই ঘরেরও জরাজিন অবস্থা। বর্ষকালে ঘরের চালা দিয়ে পানি পরে। কিন্তু বর্তমানে তার এক মেয়ের বিয়ে দিয়ে গিয়ে আয়ের একমাত্র উৎস রিক্সাটি বিক্রি করে বিপাকে পরেছেন তিনি।
মোঃ চাঁন মিয়া জানান, সংসারে অভাবের কারণে তার পিতা তাকে পড়াশুনা করাতে পারেনি। যার কারণে শিশুকাল থেকেই রিক্সা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। সে ঘরে দুই কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তি ছিলো তাদের। ২০০৭ সালে টাকার অভাবে কারণে বিনা চিকিৎসায় স্ত্রী হাজেরা খাতুন মারা যায়। তখন তার বড় মেয়ে ফরিদা বেগমের বয়স ৫ বছর ও ছোট মেয়ে রুনার বয়স মাত্র দেড় বছর। পরে ছোট শিশুদের লালন পালন করতে স্থানীয়দের কথামত দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়ানুর বেগমকে বিয়ে করি। সে ঘরেও তিন মেয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু টাকার অভাবের কারণে কোন মেয়েকেই পড়াশুনা করাতে পারিনি।

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এনজিও  থেকে ঋন ও স্থানীয়দের সহযোগীতা নিয়ে ২০১৮ সালে বড় মেয়ে ফরিদা বেগমকে বিয়ে দেই। এরপর অনেক কষ্ট করে এনজিওর ঋন পরিশোধ করি। পরে এবছর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দ্বিতীয় মেয়ে রুনা বেগমের বিয়ে দিতে ব্রাক ও হীড বাংলাদেশ নামে এনজিওর থেকে ৬০ হাজার করে মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋন নেই। ছেলেটির অবস্থা একটু ভালো হওয়ায় তাদের চাহিদাও থাকে বেশি। তাই তাদের চাহিদা পূরণ করতে পরে বাধ্য হয়ে নিজের একমাত্র আয়ের উৎস আটো রিক্সটি ৩৮ হাজার টাকা বিক্রি করে দেয়। এরপর রুনার জামাইকে নগদ এক লাখ টাকা ও ঘরের জন্য আসবারপত্র ক্রয় করে মেয়েকে শ^শুড় বাড়ি পাঠাই। মেয়ের সুখের জন্য এসব করেছি। কিন্তু বর্তমানে আয়ের কোন পথ না থাকায় গত চার মাস ধরে ঋনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারিনা। এমনকি ঘরে স্ত্রী ও ছোট ছোট তিন মেয়েকে ঠিকমত খাবার তুলে দিতে পারিনা। পরিবারের সবার জন্য খাবার ও এজিওর কিন্তি পরিশোধের জন্য একটি ভাড়া চালিত রিক্সা অটো রিক্সা চালাই। কিন্তু মালিককে জমা দিয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করাতো দূরের কথা স্ত্রী সন্তানদের ঠিকমত খাবারও দিতে পারিনা। এমন এমন দিন যায় না খেয়ে থাকি আমরা সবাই। এঅবস্থায় যদি প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য কোন সহযোগীতা করে তাহলে সারা জীবন প্রধানমন্ত্রী কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়াও তিনি সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেন। চাঁন মিয়া, (মোবাইল নাম্বার ০১৩২১৫৩২০২৯) ।।
তজুমদ্দিন উপজেলার সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, চাঁন মিয়ার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি তার বয়স হয় তাহলে তাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
তজুমদ্দিন উপজেলার প্রকল্প ব্যস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদ খান জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। কেউ কখন তাকে বলেনি। তবে ওই চাঁন মিয়ার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এবং চাঁন মিয়াকে সরকারিভাবে সহযোগীতার করার আশ^াসও দেন তিনি।





আরও...