অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


অস্তিত্ব সংকটে ১৬০ বছরের কুষ্টিয়া হাই স্কুল


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ই এপ্রিল ২০২২ বিকাল ০৪:২৮

remove_red_eye

৪৮৪

১৬০ বছর আগে অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তর জেলা নদীয়ার মহকুমা কুষ্টিয়া অঞ্চলে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুষ্টিয়া এইচ ই স্কুল। জুবিলি বিল্ডিংটির প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করেছিলেন প্রধান ভূমি দাতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বাবা বাবু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রায় সাড়ে ১২ একর জমির উপর গড়ে ওঠে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া হাই স্কুল। 

ভূমি রেকর্ড বিভাগের সূত্র মতে, সিএস রেকর্ডীয় ৩টি দাগে ১২ দশমিক ৩৫ একর, এসএ রেকর্ডীয় ৪টি দাগে ১০ দশমিক ৭৬ একর এবং সর্বশেষ আরএস খতিয়ান ভুক্ত ১৪টি দাগে ৮ দশমিক ৩ একর জমির ভূমিকর পরিশোধ করে স্বত্ববান স্কুলটি তার বর্তমান অস্তিত্বও ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিদ্যমান ভূ-সম্পত্তি এখন আশেপাশের দখলবাজদের আগ্রাসনে দুই তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে।

তৎকালীন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত শিক্ষা কারিকুলামে এই স্কুল থেকে পাঠ গ্রহণ করেন কাজী মোতাহার হোসেন, কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, জাস্টিস রাধাবিনোদ পাল, বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এসআর খানদের মতো অসংখ্য গুণীজন। কৃতি সন্তানেরা নানা ক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্মগুণে ঐতিহাসিক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। অথচ বর্তমান অবস্থা এখন কেবলই অতীত। বিস্তীর্ণ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি এখন দখলবাজদের খপ্পরে চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে।

 

এমন বিপন্নের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করে তার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফেরানোর দাবি জেলার সচেতন মহলের। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে কুষ্টিয়ায় প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল জলিল বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে প্রতিদিনের আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই কুষ্টিয়া হাই স্কুল মাঠটি। এখানেই বঙ্গবন্ধু এসে ঐতিহাসিক জনসভায় ভাষণ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন। অথচ সেই মাঠটি এখন দেখলে কান্না লাগে। প্রয়োজনে সরকারের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগ করে হলেও প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করার দাবি করছি।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘এক সময়ের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর মানুষ গড়ার কারখানা নেই, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন প্রভাবশালী মহলের ব্যবসায়িক ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এতে দখলবাজদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।’

 

 

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ডা. এ কে এম মুনীর বলেন, ‘নানাবিধ কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে চৌহদ্দি সীমানা রক্ষার স্বার্থে অবকাঠামো নির্মাণসহ আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করতে দোকানঘর তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এসব দোকানঘর নানাভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জোরপূর্বক ইচ্ছামতো কুক্ষিগত করেছেন। ব্যাপারটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে গরীবের বউ সকলে ভাবী; যে যখন চান্স পেয়েছে, ইচ্ছোমতো অপকর্ম করেছে। এসব কিছু চোখ খুলে মুখ বুজে চেয়ে চেয়ে দেখে চোখের জল ফেলানো ছাড়া স্কুলের শিক্ষকদের কিছুই করার ছিল না। মুখ খুললেই হয় লাঞ্ছনা নতুবা মামলার খড়গ। স্কুলের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিরীহ শিক্ষকেরা কেউই আর মাথা উঁচু করে সোচ্চার প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি।’

এ ছাড়া মাঠের পূর্ব দিক থেকে শুরু করে পশ্চিম দিক পর্যন্ত ৫০টির অধিক দোকান মালিক কোনো টাকা দেননি বিদ্যালয় তহবিলে। পশ্চিমের সীমানায় এন এস রোড থেকে রেললাইন পর্যন্ত ১০ ফুট প্রস্থ ধরে সম্পূর্ণ জায়গাটি দখলে নিয়েছেন পাশের প্রতিবেশীরা। এ ছাড়া, যারা ঘরভাড়ার চুক্তি করেছেন, তারা অনেকেই সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে অনাদায়ী রয়েছে বলে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহামন বলেন, ‘দেড়শ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত পুরনো ভবনে সব কক্ষের ছাদ নষ্ট হয়ে পানি পড়ছে। শিক্ষকরা পড়াতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করেন। এদিকে বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি চারিদিক থেকে দখলের উৎসব চলছে।’

 





আরও...