অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১ই আশ্বিন ১৪৩২


ইভ‌্যালির ‘মোটরসাইকেল অফার’ দেখে অনুপ্রাণিত ই-কমার্স আকাশ নীল


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১শে মার্চ ২০২২ সন্ধ্যা ০৬:১৪

remove_red_eye

৩৩৮

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আকাশ নীল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমানসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মূলত ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘মোটরসাইকেল অফার’ দেখে অনুপ্রাণিত করে তারাও এ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। 

সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে কাওরান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রোববার (২০ মার্চ) রাতে ফরিদপুর থেকে মশিউর রহমান এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইফতেখাইরুজ্জামান রনিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল, ২টি ল্যাপটপ এবং ১টি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। 

র‌্যাব জানায়, ‘আকাশ নীল’ কারসাজির মূলহোতা মো. মশিউর। অনলাইনে অ্যামাজন, আলীবাবার মতো ব্যবসার করার ইচ্ছা ছিল তার। ২০১৯ সালে আকাশ নীল কোম্পানি নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ তৈরি করে ট্রেড লাইসেন্স নেয়।

 

প্রথমে রাজধানীর কাঁঠাল বাগান এলাকায় একটি অফিস চালু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং কৃষকদের কাছ থেকে শাকসবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করে। তবে করোনা মহামারির কারণে তারা ব্যবসা সচল রাখতে পারেনি। 

মশিউর ২০১৯-২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ব্যবসা না করার কারণে তার যে পুঁজি দিয়ে অফিস সাজিয়েছিল, তাতে লোকসান হয়। পরবর্তীতে সে সাধারণ গ্রাহকদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অগ্রিম টাকা নিয়ে কোম্পানিকে লিমিটেডে রূপান্তরিত করে। কাঁঠাল বাগান থেকে অফিসে পরিবর্তন করে পান্থপথে।

 

‘আকাশ নীল’ ছিল পরিবার কেন্দ্রিক ব্যবসা। যাতে নিজের নামে ৭৭ শতাংশ, বোনের নামে ১০ শতাংশ, মায়ের নামে ৮ শতাংশ এবং তার স্ত্রীর নামে ৫ শতাংশ শেয়ার রেখেছিল মশিউর। সে ছিল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মা চেয়ারম্যান আর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধু ইফতেখাইরুজ্জামান রনি ডিরেক্টর। 

পরবর্তীতে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মোটরসাইকেলের অফার দিয়ে যখন রমরমা ব্যবসা শুরু করেছিল, তখন সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০২১ সালের জুন মাসে একই অফারে সেও পুনরায় তার যাত্রা শুরু করে। 

গ্রাহকদের আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ ছিল, স্বল্পমূল্যে বা ডিসকাউন্টে প্রতিটি মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। আর গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ মেইনটেন করা হতো। গ্রুপে সে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আশার বাণী, লোভনীয় অফার এবং মোটিভেশনাল বক্তব্য দিতো।

 

 

র‌্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ১ম ক্যাম্পেইন করেছিল গত মে মাসে। যাতে ৩০ শতাংশ ছাড়ে দুই মাসের মধ্যে ডেলিভারির আশ্বাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পায়। পরবর্তী ক্যাম্পেইনে গত জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির নিশ্চয়তায় ১ হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পায়। গত আগস্ট মাসে সে মোটরসাইকেলের ৩য় ক্যাম্পেইনে ২৩ শতাংশ ছাড়ে ২৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের আশ্বাসে ৯ হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পায়। 

 

 

মোটরসাইকেলের পাশাপাশি সে লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থলীর অন্যান্য পণ‌্য বিক্রি নিয়েও অফার  করেছিল। গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত চাইতে থাকে। চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত নভেম্বরে মশিউর অফিস বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।


    
এই কোম্পানিতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার গ্রাহক ছিল। তবে সর্বশেষ যে মোটরসাইকেলের অফারটি দিয়েছিল, সেখানে ছাত্র বা যুব সমাজের গ্রাহকরাই অফারটি গ্রহণ করেছিল। তার ব্যবসার মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন ইলেক্ট্রনিক দ্রব্য, পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন, মোবাইল সেট ছিল। সাপ্লাইয়ের সিস্টেম ছিল ডিলার থেকে নগদ টাকায় মালামাল ক্রয় করে সরাসরি তার নিজের অফিসে নিয়ে আসতো। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন গোডাউন ছিল না। অফিস থেকে বিভিন্নভাবে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হতো। গ্রাহকদের টাকাগুলো সরাসরি তার ব্যাংকের অ‌্যাকাউন্টে জমা হত এবং সেখান থেকে তা উত্তোলন করত। 

 

উল্লেখ্য যে, অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। সরাসরি ব্যাংক অ‌্যাকাউন্টে পাঠানো অর্থ নিয়ে তারা প্রতারণা করত। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল। যাদের মাসিক ৪-৫ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হতো। মশিউর কোম্পানির অর্থে ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছে, যার বর্তমান মূল্য ৩ কোটি টাকা। এছাড়া তিনি দুটি দামী গাড়ি একটি প্রিয়াশ ও একটি সিএইচআর ব্যবহার করেন। 

এছাড়া কোম্পানির প্রায় ৪টি টাটা পিকআপ রয়েছে। বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে দেনা প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে তার ৪টি একাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে প্রকাশিত বিপুল পরিমাণ দায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃতরা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কোন ব্যবসায়িক লাভ করতে পারেনি। গ্রাহকের অর্থ দিয়েই যাবতীয় ব্যয় ও খরচ নির্বাহ করা হত। ফলে দেনা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যবসায়িক বিক্রি বাড়াতে গ্রাহকদের প্রতিনিয়ত চাহিদা তৈরি হয়। যা কারণে এ ধরণের পণ্যকে বেছে নেয় যেমন- মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মোটরবাইক, গাড়ী, গৃহস্থলীপণ্য ইত্যাদি। 
 
জানা যায়, এসব পণ্যের মূল্য ছাড়ের ফলে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানের বিশাল আকারে দায় তৈরি হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যবসায়িক অপকৌশল ছিল, নতুন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে পুরাতন গ্রাহক-সরবরাহকারীর দেওয়া মালের আংশিক করে পরিশোধ করা। অর্থাৎ ‘দায় ট্রান্সফার’র মাধ্যমে দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছিল আকাশ নীল প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে যত গ্রাহক তৈরি হত, দায় তত বৃদ্ধি পেত। গ্রেপ্তারকৃত মশিউর জেনেশুনে এ নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্র্যাটিজি গ্রহণ করেন।
 
আকাশ নীলের অন্যতম কর্ণধার মশিউর ও তার সহযোগী ইফতেখাইরুজ্জামান রনি। কোম্পানিটি পরিকল্পিতভাবে একটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক গঠনতন্ত্র। একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বেচ্ছাচারিতা করার অবকাশ রয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানের দায় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় অচলাবস্থায় উপনীত হয়েছে। আকাশ নীলের নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটিজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থ ট্রানজেকশন গেটওয়ে আকাশ নীল থেকে সরে এসেছে। এমতাবস্থায় ব্যবসায়িক উত্তরণ নিয়ে সন্দিহান গ্রেপ্তারকৃতরা। এখন পর্যন্ত উত্তরণের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি তারা। 

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ অধ্যয়নরত থাকাকালীন সময় মশিউর একটি ব্যবসা করার পরিকল্পনা করে। ব্যবসা হিসাবে সে প্রথমে গার্মেন্টস থেকে রিজেক্টেড টি-শার্ট/গার্মেন্টস পণ্য এনে নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্রি করত। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় প্রতারণার দায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

 

 





দৌলতখানে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

দৌলতখানে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

লালমোহনে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও আলোচনা সভা

লালমোহনে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও আলোচনা সভা

পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দাবীতে ভোলায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দাবীতে ভোলায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল

অসহায় কর্মহীণদের স্বাবলম্বী করতে বোরহানউদ্দিন ইউএনও'র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

অসহায় কর্মহীণদের স্বাবলম্বী করতে বোরহানউদ্দিন ইউএনও'র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন আজ

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন আজ

জামায়াতের পিআর-এনসিপির প্রতীকের আন্দোলন নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না :  ইসি আনোয়ারুল ইসলাম

জামায়াতের পিআর-এনসিপির প্রতীকের আন্দোলন নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না : ইসি আনোয়ারুল ইসলাম

যারা কম জনপ্রিয় তাদের জন্য পিআর লাভজনক: সালাহউদ্দিন

যারা কম জনপ্রিয় তাদের জন্য পিআর লাভজনক: সালাহউদ্দিন

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ; সারাদেশে পাঁচদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ; সারাদেশে পাঁচদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা

বায়োটেকনোলজি নির্ভর ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ: শিক্ষা উপদেষ্টা

বায়োটেকনোলজি নির্ভর ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ: শিক্ষা উপদেষ্টা

আল্লাহ আমাদের একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ ছোটলোক থেকে মুক্তি দিয়েছেন: সারজিস

আল্লাহ আমাদের একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ ছোটলোক থেকে মুক্তি দিয়েছেন: সারজিস

আরও...