অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ফেসবুকে ‘হা হা রিয়্যাক্ট’, ৩টি হত‌্যা ও একটি পরিবারের আর্তনাদ


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪ই মার্চ ২০২২ সন্ধ্যা ০৬:১০

remove_red_eye

৪৫৩

আমরা কমবেশি সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত। অভিমান, ভালোবাসা কিংবা হাসি দিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে অনুভূতি জানান দিয়ে থাকি প্রতিনিয়ত। কিন্তু কে জানতো ফেসবুকে একটি ‘হা হা রিয়্যাক্টের’ প্রভাবে অকালে ঝরে যাবে ৩টি তাজা প্রাণ! এমন অমানবিক হত্যাযজ্ঞে নিথর হয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা পাড়ের দক্ষিণগাঁও।

হত‌্যার শিকার তিন জনের একজন ফারুক। তার দুই বছরের কন্যা সন্তান ফারিয়ার আর্তনাদে বাকরুদ্ধ সবাই। পৃথিবীর আলো-বাতাস ঠিকঠাক বুঝে উঠার আগেই মাথার ওপর থেকে সরে গেলো বাবা নামক একটি বিশাল ছাদ। মায়ের কোলে বসে ছোট্ট ফারিয়া হয়তো চিৎকার করে বলছে ‘বাবা তুমি কোথায়’। 

ঘটনার আদ্যোপান্ত বুঝলেন না, জানতেনও না রাজমিস্ত্রি ফারুক (২৫)। প্রতিদিনের মতো কাজ থেকে ফিরছিলেন বাড়ি। পথে দেখলেন নাঈম আর রবিনকে কারা যেন মারছে। বাধা দিতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না। ঘাতকরা ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ফারুক লুটিয়ে পড়লেন ‘আল্লাহু মসজিদের’ দেয়ালের সাথে। দু’হাত দূরে রক্তাক্ত নাঈম, আরেকটু দূরত্বে ছটফট করছে রবিন। বৈদ্যুতিক আলোতে ঘটনা দেখে চিৎকার করলেন ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে থাকা প্রতিবেশী মোজাম্মেল। তার চিৎকারে ওয়াজ মাহফিলের পাশ থেকে ছুটে আসলেন লোকজন। তাদের দেখে ঘাতকরা ছুটে পালালেন এদিক-ওদিক। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় লোকজন গুরুতর আহত ৩ জনকে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। পথিমধ্যেই মারা গেলেন নাঈম, ফারুক আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন রবিন। 

 

নিহত নাঈম ও রবিন খুব ভালো বন্ধু ছিল। সবসময় একসাথেই চলাচল ছিল। দু’জনেই কাজ করতেন স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানে। কে জানতো জীবনপ্রদীপও নিভে যাবে একসাথে। সবকিছু ছাপিয়ে ফারুকের মৃত্যু আর তার ছোট মেয়ের অবুঝ চিৎকার ও অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তাটি এখন সবার মনে। 

 

 

স্থানীয়রা জানালেন, রাজমিস্ত্রি ফারুক কখনো কোনো ঝামেলায় জড়ানো, কটু কথা- এসব থেকে মুক্ত ছিল। কিন্তু অন্যের ঝামেলায় হারিয়ে ফেললেন নিজের সবচেয়ে দামী জীবনটা। তাই সামাজিক সচেতন, সন্তানদের গতিবিধি শনাক্ত করা এবং এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তির দাবি গ্রামবাসী ও পরিবারের। যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও গ্রামে অন‌্যের স্ত্রীর ফেসবুক স্টোরিতে রিয়েক্টের জের ধরে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে একই গ্রামের নাঈম, রবিন, ফারুক নামের ৩ জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

জানা গেছে, নরসিংদীর মনহরদী উপজেলা জাহিদের স্ত্রী মারিয়া ফেসবুক স্টোরিতে একটি ছবিতে হা হা রিয়্যাক্টের দেওয়ায় ফলেই ঝামেলার সূত্রপাত। তবে এখন পর্যন্ত জাহিদকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

 





আরও...