অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় গরুর খামারে বায়োগ্যাস উৎপাদন


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ই মার্চ ২০২২ রাত ১২:২৪

remove_red_eye

৭২৯

জুয়েল সাহা বিকাশ II সখের বসে করেছে গরুর খামার। আর এখন খামারের গরুর গোবর দিয়ে উৎপাদন করছেন বায়োগ্যাস। ওই গ্যাস দিয়ে প্রতিদিনই হচ্ছে ঘরের রান্না-বান্না। এতে যেমন বিনা খরচে প্রতিদিন জ¦ালানি গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছেন। তেমনি খুব সহজেই রান্নাও করা যাচ্ছে। আর এমন বায়োগ্যাস উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভোলার ছোট আলগী গ্রামের আবদুস সাত্তার নামে এক খামারী। তার বায়োগ্যাস প্লান্ট দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন স্থানীয়রা।


সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট আলগী গ্রামের তালুকদার বাড়ির আবদুস সাত্তার। তিনি পেশায় একজন মুদি ব্যবসায়ী। ভোলার শহরের নতুন বাজার এলাকায় রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সখের বসে তার বসত ঘরের পাশে ৮ টি গরু দিয়ে গড়ে তুলেন একটি ছোট গরুর খামার। তার খামারের গরুর গোবর যেখানে সেখানে ফেলতেন তিনি। বিষয়টি ভলান্টিয়ার বাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভোলা শাখার নজরে আসে। পরে তারা খামারী আবদুস সাত্তারকে গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি পরিকল্পনা দেন তারা। তাদের পরিকল্পনায় ও সহযোগীতা সফলভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করেন।


খামারী আবদুস সাত্তার  জানান, গরুর গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা দেয় ভলান্টিয়ার বাংলাদেশ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভোলা শাখা। তাদের পরিকল্পনা নিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি উদ্যোগ গ্রহণ করি। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা আমাকে স্থান নির্ধারণ করে দেয়। প্রথমে মাটি কেটে গভীর কাজটি তারাই নিজেরাই করেন। এরপর রাজ মিন্ত্রী নিয়ে ট্যাংকি তৈরি করি। সব মিলে আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এরমধ্যে ৩২ হাজার আমাকে ভলান্টিয়ার বাংলাদেশ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভোলা শাখা থেকে দেয়।


তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন হয় তা দিয়ে আমার ঘরের দিন রাত রান্না-রান্না সহজেই হয়ে যায়। তবে এত সহজে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যায় সেটি আগে ভাবেনি। আমি মনে করি যাদের গরুর খামার রয়েছে তারা বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে রান্না-বান্না করলে জ¦ালানির খরচ গুনতে হবে না। আমার বায়োগ্যাস প্লান্টের কথা শুনে প্রতিদিনই অনেকে দেখতে আসে আবার ওকউ কেউ বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি জানতে আসে।
আবদুস সাত্তারের স্ত্রী নাজমুল নাহার জানান, আগে লাকড়ি দিয়ে চুলায় রান্না করতাম। ধুয়ার কারণে অনেক কষ্টে হতো। কিন্তু এখন আমার স্বামী বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করেছে। বায়োগ্যাস দিয়ে প্রতিদিন দিনরাত খুব সহজে ঘরের রান্না করতে পারি। এটা আমার জন্য অনেক সুফল এনেছে।
তিনি আরো জানান, বায়োগ্যাসে চুলা বর্তমানে বাহিরে আছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে লাইন টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে রান্না করবো।
একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন জানান, লোকমূখে শুনেছি আমাদের গ্রামের আবদুস সাত্তার গরুর গোবর দিয়ে গ্যাস উৎপাদন করেছে। সেই গ্যাস দিয়ে নাকি ঘরের রান্না করে। সেটা শুনে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা দেখতে এসেছি। আর দেখে খুবই অবাক হয়েছি। কোন টাকা ছাড়াই প্রতিদিন গ্যাস দিয়ে ঘরের রান্না যায়।


একই ইউনিয়নের ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, সাত্তার ভাইর বায়োগ্যাসের প্লান্ট দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমারও একটি গরুর খামার আছে। সে খামার থেকে আমিও বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করবো। ওই গ্যাস দিয়ে ঘরের রান্না-বান্না হবে। তখন আর বাজার থেকে টাকা দিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার ক্রয় করতে হবে না। বিনা পয়সায় বায়োগ্যাস দিয়ে রান্না হবে।


তিনি আরো জানান, আমার ওয়ার্ডে যাদের ছোট-বড় গরুর খামার আছে তাদের সবাইকে আমি বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করতে উৎসাহ দিবো।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলান্টিয়ার বাংলাদেশের ভোলার শাখার সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, আমরা ভোলা সদরের ছোট আলগী গ্রামের আবদুস সাত্তারকে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছি। তাকে জাগো ফাউন্ডেশন ও এ্যাকশন এইড এর আর্থিক সহযোগীতায় আমরা তাকে প্লান্ট করার জন্য ৩২ হাজার টাকা দিয়েছি। এছাড়াও আমাদের সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রথম অবস্থায় মাটি কাটার কাজ করেছে।


তিনি আরো জানান, ভোলার যেকোন গ্রামের যে কেউ বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করতে চাইলে সাবইকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করা চেষ্টা করবো।ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান, বায়োগ্যাস প্লান্ট একটি যুগ উযোগী কার্যক্রম। এটিতে পরিবেশ সুরক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি জ¦ালানির সমস্যা সমাধান হবে।তিনি আরো জানান, গ্রামের ছোট-বড় খামারীরা বায়োগ্যাস উৎপাদন করলে জ¦ালানির কাজে অর্থনৈতিক খরচ হবে না।  গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান সুন্দর হবে।  বায়োগ্যান প্লান্ট তৈরি করতে কারো সহযোগীতার প্রায়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতার চেষ্টা করা হবে।





আরও...