অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫ | ২৪শে চৈত্র ১৪৩১


ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ২ মাস মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাত ১১:০৪

remove_red_eye

৩৪২

অচিন্ত্য মজুমদার II মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর অভয়আশ্রমে আজ মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট ১ মার্চ থেকে দুই মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে করে ভোলাসহ উপক‚লের প্রায় দুই লক্ষাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বে। বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা না থাকায় মহাজন ও এনজিওর ঋণগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোর নানা সংকটের মধ্যে দিন কাটাতে হবে। তাই এই দুই মাস এনজিওগুলোর কিস্তি বন্ধ রাখার পাশাপাশি সঠিক সময়ে সরকারি জেলে প্রণোদনা চাল বিতরণের দাবী করছেন জেলেরা।

জানা গেছে, প্রতি বছরের মত এবারও পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ২ মাস ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম ১০০ কিলোমিটার এবং ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারসহ মোট ১৯০ কিলোমিটার নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাছের অভয়াশ্রম হওয়ায় ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে এই ১৯০ কিলোমিটার অংশে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ শিকার, বাজারজাত, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞার জারি করেছে সরকার।
ভোলা সদরের ইলিশা, রাজাপুর, ধনিয়া তুলাতলি, নাছির মাঝি, ভোলার খাল এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে জেলেরা নৌকা, জালসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জাম নদী থেকে সরিয়ে নেয়া শুরু করেছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এই দুই মাস জেলার সাত উপজেলার দুই লক্ষাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়বে এসব জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা কালীন সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণদনার চাল দেয়ার কথা থাকলেও সঠিক সময়ে সেই চাল তারা পান না বলে অভিযোগ তাদের। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও চালের পরিবর্তে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধিত জেলেদের নগদ টাকা দেয়া হলে তাঁরা উপকৃত হতো।
এছাড়া অধিকাংশ জেলারা বেসরকারি এনজিও সংস্থার কাছে ঋণগ্রস্ত থাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা নিয়েও রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। জেলেরা বলছে, কিস্তি পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদীতে নামতে হয় তাদের। তাই নিষেধাজ্ঞার দুই মাস ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জেলেদের।সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল মাঝঘাট এলাকার জেলে ফিরোজ মাঝি, জয়নাল মাঝি ও রিপন মিয়া বলেন, যেহেতু দুই মাস তাদের উপার্জন থাকবে না, তাই দ্রæত যেন তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া চাল বিতরণ করা হয়। সেইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময় বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা আদায় বন্ধ রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। অপরদিকে ইলিশা মাছঘাট এলাকার জেলে ইউসুফ, হারুন ও জামাল মাঝি জানান, সরকারি বরাদ্দকৃত চাল দেয়া নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গরিমশি হয়। নিষেধাজ্ঞা কালীন জেলেরা সঠিক সময়ে প্রণদনার চাল হাতে না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে নদীতে নামতে হয়। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিবন্ধিত জেলেদের নগদ টাকা দেয়া হলে তাঁরা উপকৃত হতো ।


ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসাইন জানান, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা কালীন নিবন্ধিত ৯২ হাজার ৬৬১ জেলে পরিবারের বিপরীতে ৭ হাজার ৪১৩ মেট্রিকটন চাল সরকারি ভাবে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যত দ্রæত সম্ভব জেলেদের এসব চাল বিতরণ করার আশ্বাস দেন মৎস্য কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ভোলা জেলায় দুই লক্ষাধিক জেলের মধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এক লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩১। এর মধ্যে সরকারের  বরাদ্দকৃত প্রণদনার চাল পাচ্ছেন ৯২ হাজার ৬৬১ জেলে। তাই সকল জেলের ভাগে সরকারি প্রনোদার ভিজিএফ চাল জুটবে না।