অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ৭ই এপ্রিল ২০২৫ | ২৩শে চৈত্র ১৪৩১


ভোলায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর টিকার নিবন্ধন অনিশ্চিত


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাত ১২:৩০

remove_red_eye

৩৩৯

অমিতাভ অপু II ভোলায় ৫৪৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীর টিকার নিবন্ধন করা অনিশ্চিত । এক লাখ শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ শেষ হয়েছে।  নিবন্ধন না হওয়ায় , এদের টিকা নেয়ার কোন প্রমানপত্র গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।  এদের নিবন্ধন করে টিকার সনদ পাওয়া যাবে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।  এমন অনিশ্চিয়তা দুর করতে  উদ্যোগও নেই স্বাস্থ্য বিভাগ বা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের। জেলা প্রশাসনের নজরে এলেও বিষয়টি সুরহা হচ্ছে না।

অভিভাবকরা জানান, জেলা প্রশনের আইসিটি ও শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে  এই জটিলতা নিরসন করা সম্ভব হবে। স্কুল প্রধান শিক্ষকরা জানান, যে সব শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে, তাদের জন্ম নিবন্ধন ও তালিকা টিকা নেয়ার সময় স্বাস্থ্য বিভাগের স্টাফদের কাছে রয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী সংশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে নিবন্ধন কাজ শেষ করা যেতে পারে।  এ কাজ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করাও প্রস্তাব করেন অভিভাবকরা।


এদিকে এমন জটিলতা নিরসন না করেই শুরু হয়েছে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের টিকার নিবন্ধন না হওয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. কেএম শিফিকুল ইসলাম ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধাব চন্দ্র দাস একে অপর বিভাগকে দায়ি করেন। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের তরফ থেকে ঘোষনা দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  ক্লাস শুরু হয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীরা  টিকা নিয়েছে এমন কোন তথ্য বা সনদ বা প্রমানপত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই।

জেলা শিক্ষা অফিস তথ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী  জেলায় ১ লাখ ৮৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ৯৬ হাজার ১১৯ জন। অপরদিকে সিভিল সার্জন জানান এর মধ্যে নিবন্ধন করেছে মাত্র ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। নিবন্ধন না করা শিক্ষার্থীরা কেবল জন্ম নিবন্ধন কার্ড জমা দিয়ে টিকা নিয়েছে। অন লাইনে নিবন্ধন না হওয়ায় এদের ছিল না টিকা কার্ড। টিকা নেয়ার পর পোষ্টিং বা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। ফলে এরা সনদ পাচ্ছে না।

এমনটা জানান   টিকা তদারকির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গবেষনা কর্মকর্তা নুর ই আলম ছিদ্দিকী। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান,  সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্ব রয়েছে যারা টিকা নিচ্ছে তাদের নিবন্ধন ও টিকার সনদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন। অপর দিকে সিভিল সার্জন জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে অনেক আগেই চিঠি দিয়ে জানানো হয়ে ছিল, স্কুল প্রধানরা ১২ থেকে ১৮ বছরের বয়সি শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী  টিকার জন্য নিবন্ধন করবেন। এমন কি টিকা কার্ড নিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান শেষ করবে।

এদের টিকা নেয়ার পর  পোষ্টিং দিবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। এর পরই টিকা সনদ পাবে শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তরা জানান , মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে তারা এই নিবন্ধন করার বিষয়ে কোন চিঠি পান নি।  জেলার সেরা স্কুল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম ছালেহ উদ্দিন জানান, কারা টিকা নিয়েছে এমন কোন তথ্য তাদের কাছে নেই। একই কথা জানান ওবায়দুল হক বাবুল মোল্লা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কাশেম। তার স্কুলে ৪১৮ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হয় নি। তবে ইতিমধ্যে সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে।

বেসরকারি পর্যায়ের সেরা কলেজ ফাতেমা খানম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুশান্ত মন্ডল জানান, ওই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের এক হাজার ৭শ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন নিশ্চিত হয় নি। এরা টিকা নিয়েছে এমন প্রমানপত্রও তাদের কাছে নেই। শিক্ষার্থীরা দাবি করছে তারা জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি জমা দিয়ে টিকা নিয়েছে। একই কথা জানান শহরের টাউন কমিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান। বোরহানউদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ দালালপুর দাখিল মাদ্রাসা, টবগী রাস্তারমাথা শরিফিয়া দাখিল মাদ্রসাসহ ওই এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগের যেমনি নিবন্ধন হয় নি।

তেমনি টিকাও নেয়নি।  অথচ ওই সব প্রতিষ্ঠানেও মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। এ নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও টিকা নিশ্চিতের দাবি জানান।  জেলা আইন শৃঙ্কলা বিষয়ক সভা ও জেলা উন্নয়নসভায়  শিক্ষার্থীদের কোভিড ভ্যাকসিন নিবন্ধন ও সনদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জোড়ালো দাবি উত্থাপিত হলে জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক ই লাহী চৌধুরী সিভিল সার্জন ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার পরও চার দিনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয় নি বলে জানান স্কুল প্রধানরা।