অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় সন্তান প্রসবের সময় নারীর জরায়ু কেটে ক্ষতবিক্ষত করলো হাতুড়ে ধাত্রী


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩১শে জানুয়ারী ২০২২ রাত ১১:৩৪

remove_red_eye

৫৩৭


আকতারুল ইসলাম আকাশ II সন্তান প্রসবের সময় বেøড দিয়ে অন্তঃসত্ত¡া এক নারীর জরায়ু কেটে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছেন স্থানীয় এক নারী। যাঁর ফলে সন্তান প্রসবের পর থেকে  প্রায় ৫ মাস ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী৷এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে ডাক্তার দেখিয়ে এখনও কোনো সুফল পায়নি ভুক্তভোগী তিথি (২১) রাণী। উল্টো পর প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে জুতোপেটা করা হয় তাকে ।ঘটনাটি ঘটেছে ভোলা সদর উপজেলা পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের সোনাডগী গ্রামে। তিথি রাণী ওই গ্রামের স্বপন চন্দ্র বক্তের মেয়ে।

অভিযুক্ত নারী একই উপজেলার কালিখোলা পৌর ৫নং ওয়ার্ডের কেশব মন্ডলের মেয়ে প্রার্থনা রাণী।ভুক্তভোগী তিথি রাণী ও তাঁর পরিবার বাংলার কন্ঠকে জানায়, অভিযুক্ত নারী প্রার্থনা তাঁদের পূর্বপরিচিত। তিথি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত¡া থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত ওই নারী একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁদের বাড়িতে যায়। সেসময় তিথিকে অন্তঃসত্ত¡া দেখে ওই নারী তিথির মাকে জানায় তিথির সন্তান প্রসবের সময় যেনো তাকে জানানো হয়। এসময় প্রার্থনা আরও জানায়, সে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই সন্তান প্রসব করিয়ে দিতে পারবে।

এবং একাধিক নারীর সন্তানও প্রসব করিয়েছেন তিনি।প্রার্থনার এমন আশ্বস্তে গত বছরের ৪ঠা সেপ্টেম্বর তিথির প্রসব ব্যাথা উঠলে খবর দেওয়া হয় প্রার্থনাকে। পরে প্রার্থনা এসে বেøড দিয়ে তিথির জরায়ু কেটে নবজাতকের জন্ম দেয়৷ পরে জরায়ুতে প্রার্থনা নিজেই সেলাই করে ৫ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। ঘটনার ৭ দিন পর আগের সেলাই কেটে পুনরায় জরায়ুতে নতুন করে সেলাই করেন ওই নারী। এর কয়েকদিন পর জরায়ুতে প্রচুর রক্তক্ষরণ দেখা দিলে তিথির পরিবার ভোলা প্রসূতি গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফয়সালের কাছে যান তিথিকে নিয়ে। ডাক্তার জরায়ু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁদেরকে জানায়, জরায়ুতে খাতা সেলাইয়ের মতো সেলাই করা হয়েছে।

যাঁর কারনে তিথির জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে। এ সময় ডাক্তার আরও জানায়, জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরায়ুতে অপারেশন করার মতোও অবস্থা নেই। এরপর ডাঃ আফরোজা বেগমসহ আরও কয়েকজন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে একই কথা শুনতে হয় তিথির পরিবারকে।কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে তিথিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তাঁর পরিবার। অবশেষ শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ভোলা শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অচিন্ত্য কুমারের কাছে তিথি তাঁর ৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে যায়। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভোলা শহরের কে জাহান মার্কেটের সামনে প্রার্থনার মা ফুলরাণীর সাথে দেখা হয় তাঁর।

এসময় তিথি ফুলরাণীকে জানায়, তাঁর মেয়ে প্রার্থনা তাঁর অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করে দিয়েছে। এ কথা বলায় তাঁদের দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক বাঁধে। তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে প্রার্থনার মা ফুলরাণী প্রকাশ্যে উপস্থিত লোকজনের সামনে তিথিকে জুতোপেটা করে।পরে উপস্থিত লোকজন তাকে গাড়িতে তুলে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।তিথির বাবা স্বপন চন্দ্র বক্ত জানান, প্রার্থনা চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে তাঁর মেয়েকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গেছেন।

এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি তিথির পরিবার।এবিষয়ে অভিযুক্ত তিথি ক্যামেরার সামনে কথা বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে তিনি বাংলার কন্ঠকে জানান, তিনি অভিজ্ঞ বা সার্টিফিকেটদারি কোনো চিকিৎসক না। তাঁর বাবা একজন পল্লী চিকিৎসক। সে হিসেবে তিনি অন্তঃসত্ত¡া নারীদের হালকা পাতলা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তিথির জরায়ু কাটা তাঁর উচিত হয়নি স্বীকার করে প্রার্থনা আরও জানান, কে জাহান মার্কেটের সামনে তিথিকে তাঁর মা জুতোপেটা করেছে দুজনে তর্কবিতর্ক বাঁধার কারনে।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শফিকুজ্জামান জানান, তিনি ঘটনাটি আগে শোনেননি। তবে এ ধরনের অপচিকিৎসা করা জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ বলে জানান তিনি।ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন জানান, এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।