অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, সোমবার, ২৯শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ভোলা মুক্ত দিবসে বর্ণ্যাঢ্য র‌্যালী আলোচনা সভা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০ই ডিসেম্বর ২০২১ সন্ধ্যা ০৭:২২

remove_red_eye

৪২৪



বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক  : ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে জেলা প্রশাসন কার্যলয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণ্যাঢ্য র‌্যালী শহর প্রদক্ষিন করে। র‌্যালিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেয়। পরে জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে জেলা প্রশাসক  মো: তৌফিক ই-লাহী চৌধুরীর সভাপতিত্বে  আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ভোলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলু, ভোলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম, ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার দোস্ত মাহামুদ,সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো: শফিকুল ইসলাম, দৈনিক বাংলার কণ্ঠ  সম্পাদক ও ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান,ভোলা সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার অহিদুর রহমান,বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ, ১৯৭১ সালের এই দিন ১০ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় দ্বীপজেলা ভোলা। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। ভোলাকে স্বাধীন করে ভোলার বীর সন্তানেরা। সকালে এ খবর পেয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভোলার রাজপথে নেমে আসে। ‘জয় বাংলা’ ‘তোমার নেতা, আমার নেতা’ ‘শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে  স্লোগানে মুখোরিত করে চারপাশ। বিজয়ের উল্লাশে মেতে উঠে সবাই।  
ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শফিকুল ইসলামসহ একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ১৯৭১-এ দেশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ভোলা সরকারি স্কুল মাঠ, বাংলা স্কুল, টাউন স্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ  শুরু হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। বিপুল সংখ্যক পাক সেনাকে  হটিয়ে যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন।  ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারের ধরে এনে হত্যা করে তেঁতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয়া হত।  মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেঁতুলিয়ার পানি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হাবিবুর রহমান জানান,স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে চালায় নানান পৈচাশিক কর্মকান্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হয়। ওয়াপদা ভবনের পেছনে গণকবর দেয়া হয়। সেটি এখন বধ্যভূমি। এছাড়াও ভোলার বাংলা বাজারে ২৭ অক্টবর পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে অন্ততাদ্ধ প্রাণ হারায়।  এছড়াও  গুইংগারহাট, দৌলতখানে গুপ্ত বাজার,বোরহানউদ্দিনের দেউলাতে যুদ্ধ হয়।
১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে শহরের ভোলার খালে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের লঞ্চের গতিরোধ করার চেস্টা করে মুক্তিকামী জনতা।  এসময় তারা গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে মিত্র বাহিনীর বিমান হামলায় কার্গো লঞ্চটি ডুবে গেলে পাক হানাদেরদের সকল সদস্য নিহত হয়। সকালে এ খবর পেয়ে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ ভোলার  আনন্দে বিজয়ের উল্লাশে রাজপথে নেমে আসে।