অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


দৌলতখান সরকারি বালিকা হাই স্কুলের সততা স্টোরে নেই সততা


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮শে আগস্ট ২০১৯ রাত ১০:০৯

remove_red_eye

১২৮৭

বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক : ভোলার দৌলতখান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সততা স্টোর (বিক্রেতাবিহীন দোকান) দু’টি বড় দোকানে পরিণত হয়েছে। সেখানে বিদ্যালয়ের মাঠের যায়গা নষ্ট করে সততা স্টোরের নামে করা হয়েছে দুইটি বড় বড় দোকান। দোকান দুটি মাসিক ১৫০০ টাকা করে স্কুলের দুই জন পিয়নের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা পরিবারের লোক দিয়ে এগুলো পরিচালনা করে থাকেন। এতে নেই কোনো শিক্ষা উপকরণ ও মূল্য তালিকা। সেখানে বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দোকান দু’টিতে ঝাল মুড়ি, চটপটি ও ফুচকাসহ নানা ধরণের খাবার বিক্রি করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান যায়, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর এক চিঠিতে সততা স্টোর স্থাপনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সততা স্টোর চালুর নির্দেশনা দিয়ে ২২ মে একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত এ পরিপত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, স্টোর থাকবে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে। বিদ্যালয়ের যে কোনো উপযুক্ত একটি কক্ষে এই দোকান হবে। এখানে খাতা, কলম, পেনসিল, ইরেজার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেনসিলসহ শিক্ষা উপকরণ, চকোলেট, চিপস, বিস্কুটসহ হালকা খাবার সামগ্রী রাখা হবে। বাজার মূল্যে বিক্রি হবে ওই সব সামগ্রী। দোকানের প্রাথমিক অর্থায়ন করবে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে সততা স্টোরে বিনিয়োগ করবে।
এসকল নীতিমালার কোনোটিই নেই দৌলতখান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সততা স্টোরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতখান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্যে দু’টি বড় বড় দোকান। একটির নাম সততা স্টোর-১ ও অপরটি সততা স্টোর-২। সততা স্টোরে কোন বিক্রেতা থাকার কথা না থাকলেও সেখানে দোকানদারী করছেন বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক (পিয়ন) আব্দুর রহমান। অপরটিতে দোকানদারী করছেন বিদ্যালয়ের আয়া হালিমা বেগমের স্বামী মো. আকতার হোসেন। দোকানে শিক্ষা উপকরণ নেই বললেই চলে। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ঝাল মুড়ি, ফুচকা, চটপটিসহ বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার। বিদ্যালয় কম্পাউন্ডের মধ্যে মাঠের যায়গায় নষ্ট করে এরকম বহিরাগত লোকদের দিয়ে দোকান পরিচালনা করার কারনে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সততা স্টোর-১ এর বিক্রেতা ও বিদ্যালয়ের পিয়ন মো. আব্দুর রহমান জানান, তারা নিজের টাকায় এ দোকানগুলো নির্মান করেছেন। এবং দোকানের মালামালও কিনেছেন নিজের টাকায়। তবে সে সবসময় দোকানদারী করেন না। তারা ছোট ভাই ও বাবা এ দোকান পরিচালনা করেন। সে মাঝেমধ্যে এসে দেখাশোনা করেন।
সততা স্টোর-২ এর বিক্রেতা মো. আকতার হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দোকান দুইটি ভাড়া ১৫০০ টাকা করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে ভাড়া পরিশোধ করেন বিদ্যালয়ের আয়া ও তার স্ত্রী হালিমা খাতুন। সে এব্যাপারে কিছুই জানেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শফিকুল আলম জানান, এ দোকান আমি বরাদ্দ দেইনি। যখন দোকানগুলো করা হয়েছে তখন আমি ছিলাম না। আমি পরে যোগদান করেছি। এব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে এটি ঠিক হয়নি। শীগ্রই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ওই সময়ের বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এখানে এই দুই দোকান নির্মানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয় না।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জীতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, আমি বিষয়টি খবর নিচ্ছি। যদি নীতিমালা বহির্ভূত কোনো কাজ করে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।