অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


২২ বছর পর ভোলার হারিয়ে যাওয়া নূরনবী খুঁজে পেলো পরিবারকে


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮ই আগস্ট ২০২১ সকাল ০৬:১৭

remove_red_eye

৬২৩

এম শরীফ  আহমেদ : নূরনবী।পিতা আবুল কাশেম। প্রায় ২৭ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের কতুবা ৯নং ওয়ার্ডে। জম্মের পর পরই তার গল্পের শুরু। পৃথিবীতে আসার ৭দিনের মাথায় তার মা পারুল পারিবারিক কোনো এক কারণে তাকে রেখে অন্যত্র চলে যান।পায়নি তিনি মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা। 
দাদীর আদর যত্নে বড় হতে শুরু করেন নূরনবী ।কিন্তু সে আদর যত্নও তার বেশিদিন টিকে নি। ৫ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন দাদী তাকে পাটের শাক আনতে বলেন,কিন্তু তিনি পাটের শাক আনতে গিয়ে খেলতে যান।সেসময় খেলতে গিয়ে তিনি হাতে ব্যথা পান। এমন কথা বাসায় এসে বললে দাদী তাকে সেবার জায়গায় উল্টো মারধর করেন।দাদীর হঠাৎ এমন আচরণ দেখে নূরনবী মন খারাপ হয়ে যায়।তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
যেই কথা সেই কাজ, অবশেষে তিনি বাসা থেকে পালিয়ে যান। প্রথমে ভোলা সদরের খেয়াঘাট নামক লঞ্চঘাট থেকে সে সময়ের কোকো লঞ্চে উঠেন।পরে সদরঘাটে নামলে সেই লঞ্চে আবার ফিরে যাওয়ার কথা মাথায় আনলেও বহু লঞ্চের ভীড়ে ভোলার লঞ্চ সে হারিয়ে ফেলেন। ভোলার লঞ্চ মনে করে ভুলবশত শরীয়তপুরের একটি লঞ্চে উঠেন। পরে লঞ্চ ঘাটে ভীড়লে তার মনে হয় সে ভুল লঞ্চে উঠছে,অবশেষে লঞ্চেই কেঁদে উঠেন সে সময়ের ৫বছরের শিশু নূরনবী। 
পরে এক ভদ্রলোক তাকে কান্না থামাতে নিজ বাসায় ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।কিন্তু নূরনবী পুরোপুরি ঠিকানা  না জানায় তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ঐ ভদ্রলোক অন্য এক ব্যক্তির কাছে নূরনবীকে হস্তান্তর করেন। সেখানে তিনি সে পরিবারের সাথে দীর্ঘ কয়েক বছর কৃষিকাজ করলেও তার কোনো ভিন্ন পরিচয় বা আর্থিক কোনো উন্নতি হয়নি। নিজের জন্য কিছু করতে পারেনি বলে মনে হলে ৭-৮ বছর আগে ঢাকায় চলে আসেন। এর মধ্যেই তিনি বিয়ে করে ফেলেন।বর্তমানে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।
ঢাকায় এসে নিজেই এক জায়গায় কথা বলে দর্জির কাজ শিখতে শুরু করেন।শুরু হয় তার পরিচয় দর্জি।কাজের সুবাদে ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকা শুরু নূরনবীর।কথায়,গল্পে তার হারিয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা সবার জানা হয়ে যায়। তিনি যে বাসায় থাকতেন তার বোনের এক ছেলে ছিলো প্রবাসী,সে হঠাৎ একদিন নূবনবীকে আর জে কিবরিয়ার জনপ্রিয় অনুষ্ঠান "আপন ঠিকানায়" যেতে বলেন। তার কথা মতো নূরনবী "আপন ঠিকানা" অনুষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। এরপর তিনি স্টুডিওতে আসলে তার রেকর্ড শেষে বরাবরের মতো ভিডিওটি আর জে কিবরিয়ার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করলে নূরনবীর এলাকার মিরাজ নামের এক যুবক কমেন্টে লিখেন উনি আমার এলাকার হতে পারে।
এমন কমেন্ট দেখে গাজীপুরের ব্যবসায়ী এবং বর্তমানে "স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেড" এর স্বেচ্ছাসেবী আবদুল জলিল সেই মিরাজকে নক দেন এবং তার পরিবারের খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ জানান। স্বেচ্ছাসেবী জলিলের কথামতো তিনি কাজ করতে শুরু করেন।
অবশেষে প্রাথমিকভাবে নূরনবীর পরিবারের খোজ পেলে  মিরাজ তাদের নিয়ে আর জে কিবরিয়ার জনপ্রিয় অনুষ্ঠান "আপন ঠিকানার" স্টুডিওতে নিয়ে যান।আপন ঠিকানারা ৪৫তম পর্বের ভিডিওতে দেখা যায় সেখানে আর জে কিবরিয়া নূরনবী এবং তার বাবাকে আলাদাভাবে সাক্ষাতকার নেন। তাদের দু'জনের ক্লু মিলিয়ে বাবা এবং ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।নূরনবীর সৎভাই, শ্যালক এবং স্থানীয় মিরাজ এর উপস্থিতিতে আর জে কিবরিয়া নূরনবীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন।
২২ বছর পর বাবা-ছেলে সাক্ষাত হয়ে তারা উভয় উভয়কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।বাবা কই আছিলা,তোমারে কত জায়গায় খুজছিরে বাবা...., তুমি কই খাইছো? তোমারে নেট এ দেইখা উইড়া আইতে চাইছিলাম। এমন নানা বাক্য বলতে বলতে কান্না করতে থাকেন নূরনবীর বাবা আবুল কাশেম।বর্তমানে নূরনবী তার পরিবারের সাথেই অবস্থান করেছেন।তবে এ বিষয়ে মুঠোফোনে নূরনবীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।