অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


বোরহানউদ্দিনে প্রতারক চক্রের কারসাজি ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়ে ৩ একর জমি জবর দখলের পায়তারার অভিযোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাত ১১:২৯

remove_red_eye

৭৩৩

বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক \ ভোলার বোরহানউদ্দিনে জনৈক মৃত খোরশেদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে  নি:সন্তান বিপতিœক মৃত অহিদুল্ল্যাহ নামের অপর এক ব্যক্তির ভুয়া ওয়ারিশ দেখিয়ে ৩ একর জমি জবর দখলের পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে এই জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলামান থাকা সত্তে¡ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শালিসের রোয়েদাদা দিয়ে প্রতারক চক্রকে বিরোধীয় জমিতে চাষাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ১৯৮৫ সাল থেকে বাড়িঘর করে ভোগ দখলদার আ: খালেক এমন জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বোরহানউদ্দিন উপজেলার পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের গয়েন বাড়ির মৃত খোরশেদ আলমের স্ত্রী আংকুরা বেগম এবং তার সন্তান রবি আলম, রোকেয়া, নাজমা, নাছিমা, জেছমিন রাকিব হোসেন ও আকলিমা বেগম। খোরশেদ এবং আংকুরার বাড়ি পাশাপাশি। তারা উভয়েই বিয়ের আগে এবং পরে পার্শ্ববর্তী মানখান পাটোয়ারি বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন। এমনকি এখনও আংকুরা বেগম বৃদ্ধ বয়সেও ওই বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করছেন। আংকুরা বেগমের মেয়ে নাছিমাকেও পাটোয়ারি বাড়িতে বিয়ে দেয়া হয় এবং নাছিমাও ওই বাড়িতে অপরাপর ঘরে কাজ করে। পাটোয়ারি বাড়ির ৮০ বছরের বৃদ্ধা আমেনা খাতুন থেকে শুরু করে আংকুরা বেগমের ১০ বছরের নাতি জিহান সকলেই জানান, আংকুরা বেগমের দ্বিতীয় কোন বিয়ে হয়নি এবং মৃত খোরশেদের অন্য কোন নামও ছিল না। অহিদুল্ল্যার স্ত্রী হিসেবে আংকুরা এবং তার সন্তানরা যে ওয়ারিশ সনদ নিয়েছে তা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতি। এ বিষয়ে গতকাল আংকুরা বেগম এবং তার মেয়ে নাছিমার সাথে কথা বলতে গেলে তার উভয়ে সাংবাদিক আসার কথা শুনে বাগন দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে আংকুরা বেগমের ছেলে রবি আলম ওরফে রবু জানান, তার বাবার মৃত খোরশেদ। সেই নামেই তাদের আগের ওয়ারিশ সনদ এবং তার বোন নাছিমাসহ অন্যদের বিয়ের কাবিন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জায়গা জমির মামলার কারণে তারা বাবার নাম মৃত অহিদুল্ল্যাহ দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ, ভোটার আইডিকার্ড এসব করিয়েছেন। কিন্তু জনৈক আলমগীর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মৃত খোরশেদ আলমের স্ত্রী সন্তানদেরকে অপর এক ব্যক্তি মৃত অহিদুল্ল্যার ওয়ারিশ সেজে কাচিয়া ইউনিয়নের এসএ ৯৫৫ খতিয়ানের ৬০৬০ দাগের ১ একর ৬ শতাংশ এবং ৫৭৩০ নং দাগের ১ একর ৯৪ শতাংশ মোট ৩ একর জমি জনৈক আলমগীর এর কাছে বিক্রি করেছেন। তবে জমিতে ৩৬ বছর ধরে ভোগদখলদার আ: খালেক অভিযোগ করেন, আংকুরা ও তার সন্তানরা এমন প্রতারণা করার যোগ্যতা নেই। আলমগীর কৌশলে তাদেরকে দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এমন দলিল সৃজন করিয়েছে। আ: খালেক আরও জানান, অহিদুল্ল্যহ ১৯৮৫ সালে ওই ৩ একর জমি বিক্রির কথা বলে কিছু টাকা নিয়ে তাকে দখল দিয়েছেন। সেই থেকে তিনি ওই জমিতে ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে অহিদুল্ল্যাহ জমির দলিল দেয়ার জন্য পাটোয়ারির মারফত স্টাম্পে দলিল লিখিত পড়িত করান। কিন্তু হঠাৎ জরুরি কাজে চট্টগ্রাম চলে যাওয়ায় আর দলিলটি রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। সেই অনুযায়ী মাঠ জরিফেও আ: খালেকের নামেই পর্চা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আলমগীর আংকুরা বেগমকে অহিদুল্ল্যাহর স্ত্রী দেখিয়ে ভুয়া ওয়ারিশ সনদ সৃজন করে এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার দখলীয় জমিতে জবর দখলের পায়তারা করছে। আংকুরা বেগমের প্রতিবেশী পক্ষিয়া ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন জানান, তিনি খোরশেদ এবং আংকুরাকে ভালভাবেই জানেন ও চিনেন। খোরশেদের মৃত্যুর পর তিনি নিজের হাতে আংকুরা ও তার সন্তানদেরকে ওয়ারিশ সনদ দিয়েছেন। আংকুরা অহিদ্যুল্লার স্ত্রী কখনোই ছিলনা। এটা প্রতারণা। কারণ অহিদুল্ল্যাহ বিয়ে করেছিল চট্টগ্রামে। এই দেশে তার কোন স্ত্রী কিংবা ছেলে সন্তান ছিল না। ০৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মিন্টু মিয়াও একই কথা জানিয়ে বলেন, একটি প্রচারক চক্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে এ ধরণের ভুয়া ওয়ারিশ সনদ বানিয়েছে। এদের শাস্তি হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আলমগীর জানান, তিনি জমি ক্রয় করেছেন। শালিসেও চেয়ারম্যান তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। অপর দিকে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে স্বীকার করে কাচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী সাংবাদিকদের জানান, তিনি পরিষদের শালিস করেননি। তিনি উপরের নির্দেশে কাগজপত্রের শালিস করেছেন। চেয়ারম্যান আরও জানান, আংকুরা বেগমের স্বামী খোরশেদ না কি অহিদুল্ল্যাহ সেটা তার জানার বিষয় নিয়। কাগজে পত্রে যা পেয়েছেন তা করেছেন। এখন কার দলিল জাল আর কার দলিল সঠিক তা আদালতে প্রমাণ হবে।