অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


ভোলায় বৃষ্টি ঝড়ো বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩শে অক্টোবর ২০২০ রাত ১১:০৫

remove_red_eye

১৩১২



শ্রমজীবী মানুষ চরম বিপাকে

বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক : বঙ্গোসাগরে গভীর নিন্ম চাপের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলায় গত রাত   থেকে শুরু করে শুক্রবার দিন ব্যাপী টানা ভারি বর্ষন , থেমে থেমে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে।  এতে করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। ভোলা ইলিশা,ধনিয়াসহ অনেক স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। যে কারনে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধা রাখা হয়। এদিকে সাধারন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। বৃষ্টির কারনে সাধারন মানুষ ঘর থেকে খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বের হতে পারছেনা। শহরের রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজার মন্ডপ গুলোতে বৃষ্টির পানিতে ক্ষতি হয়েছে।  দর্শনাথীদের উপস্থিতি কমে গেছে। রাস্তাঘাটে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।  
বিআইডবিøউটিএর ভোলা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারনে ভোলা থেকে বরিশাল,লক্ষèীপুরসহ অভ্যান্তরিন রুটের লঞ্চ,ফেরী চলাচল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তবে ভোলা  ইলিশা থেকে ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল করেছে।  
এদিকে দুযোর্গকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায়া দুপুরে ভোলা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে  জরুরী প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, তার দপ্তর সহ ৭ উপজেলায় মোট ৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছ। ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলায় ৭ শ ৪টি  ঘুর্ণিঝর আশ্রয় কেন্দ্রো ও ১৩ হাজারের বেশী সেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া মোট ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তত রাখা হয়েছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জানান,গত ২৪ ঘন্টায় ভোলায় ১২৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাতাসের সর্বউচ্চ গতিবেগ ঘন্টায়  ৫ কিলোমিটার  বেগে বইছে।  

চরফ্যাসন থেকে এআর সোহেব চৌধুরী জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘূচাপের প্রভাবে শুক্রবার রাতভোর থেকে চলছে মুশলধারে বৃষ্টি। ধারাবাহিক সারাদিনের বর্ষণে দেখা মেলেনি সূর্যের। কার্তিক মাসের এ বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী ও খেটে খাওয়া জনসাধারণকে। রাতভোরের এ বৃষ্টিতে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনেও সমস্যায় পড়েন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।তবে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও উপজেলার সরকারি প্রতিষ্টানের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো বলে প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা গেছে।
সিপিপি'র চরফ্যাশন উপজেলার উপ-পরিচালক এম মোকাম্মেল হক লিপন জানান, সকল নৌযানকে পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ ভোলার উপকূলীয় এলাকায় ৪ নম্বর স্থানিয় হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান,এ ধরণের বৃষ্টিপাতসহ বৈরি আবহাওয়া আরো দুই একদিন থাকতে পাড়ে।ভারি বৃষ্টির জন্য সকাল থেকেই চরফ্যাশনের সকল রাস্তাঘাট ফাকা ছিলো। খুব জরুরি কাজে দু'একজন ছাড়া বের হয়নি কেউ। এছাড়াও উপজেলা সদরসহ অন্যান্য হাটবাজারের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। নিম্নচাপ থাকায় চরফ্যাশনসহ ভোলা থেকে নৌ ও ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে বলেও জানা যায়।  
থানা রোড এলাকার  ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি না কমায় দোকানে কোনো ক্রেতা আসেনি। রিকশাওয়ালা হেলাল বলেন, দুপুরে রাস্তায় বের হয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি। বাড়ি বসে থাকলে তো আর পেট চলবেনা। খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না খোলায় জরুরী প্রয়োজনে অনেক ক্রেতা সাধারণ বাজারে এসেও পায়নি কাঙখীত পণ্য সামগ্রী। ভোলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসগারে সৃষ্ট লঘূচাপের ফলে গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি চলমান থাকে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৫.১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। আগামী দুই একদিন এ ধরণের বৃষ্টিপাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাসনাইন জানান, উপজেলার হাজার হেক্টর জমির ফসল ও ক্ষেত খামার ভারি বর্ষনে নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, মেঘনা ও তেতুলিয়ায় ২২দিনের অবরোধ চলায় জেলেরা নদীতে যায়নি তবে মৎস্য খামারিদের শত শত খামার ও পুকুর তলিয়ে গিয়েছে।
মনপুরা  প্রতিনিধি  জানান, ভোলার মনপুরায় বৈরী আবহাওয়া থাকায় মেঘনার পানি বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হওয়ায় বেড়ীর বাহিরে থাকা নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। এছাড়াও মনপুরা থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীর চর ও চরনিজামের নি¤œাঞ্চল ২-৩ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার ৮৯ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ভোলা আবাহাওয়া অফিস। গত দুই দিনের টানা বর্ষণে জনজীবনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘর থেকে বরে হতে পারছেনা। এছাড়াও বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় উপজেলা পরিষদের মাঠ, স্কুলের মাঠ ও বাড়ির আঙ্গিনায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অপরদিকে বৃষ্টির পানি জমে ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষক।

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত থাকায় মনপুরা-তজুমুদ্দিন রুটে চলাচলকারী এমভি রাতুল-১, বেতুয়া-জনতা রুটে চলাচলকারী লঞ্চ, ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়ার রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি তাসরিফ ও ফারহান বন্ধ রয়েছে। এতে গত দুই দিন ভোলা জেলা ও রাজধানী ঢাকার সাথে মনপুরা একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দ্বীপের দেড় লক্ষ বাসিন্দা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার হাজিরহাট ঘাটে বাঁধা রয়েছে মনপুরা-তজুমুদ্দিন রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি রাতুল-১। এছাড়াও গত দুই দিন ধরে রামনেওয়াজ ঘাটে আসছেনা ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি তাসরিফ ও ফারহান। এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে উপজেলার সামনের মাঠ, হাজিরহাট স্কুলের মাঠ বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রাতের জোয়ারের পানিতে বেড়ীর বাহিরে থাকা নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বেড়ীর বাহিরে থাকা বাসিন্দরা।

বিআইডবিøটিএ ভোলা অঞ্চলের সহকারি পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, বৈরী আবহাওয়া ও সর্তক সংকেত থাকায় সবধরণের লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।

এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল মান্নান জানান, বৈরী আবহাওয়া ও সমুদ্র সংকেত থাকায় মেঘনার পানি বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়েছে। এতে বেড়ীর বাহিরে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।