অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


হারালাম অভিভাবক কাঁধে হাত রেখে আর বলবেন না-কী খবর অপু সাহেব


অমিতাভ অপু

প্রকাশিত: ২৫শে নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ০৫:০২

remove_red_eye

৯০

অমিতাভ অপু : আমি ও আমরা হারালাম একজন অভিভাবক। এম. হাবিবুর রহমান ছিলেন বটবৃক্ষ। বয়সে পিতৃতুল্য। পেশাগত কাজের ক্ষেত্র বন্ধু হয়ে ওঠতেন। স্নেহের কমতি দেখি নি কখনো। ২০১৯ সালে প্রথম আমি সম্পাদক নির্বাচিত হই প্রেসক্লাবের। সেই থেকে টাকা ৩ বার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এম হাবিবুর রহমান। এর আগেও তিনি ৬ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্পাদক ছিলেন ৮ বার। প্রথম যখন আমি সম্পাদক হলাম তখন থেকেই আমাদের সভাপতি-সম্পাদকের আলাদা কোন আসন ছিল না। তিনি যে সভাপতি সেই ভাব তার মধ্যে দেখিনি কখনো। আর সব সাধারণ সদস্যদের মতই তিনি সকলের সাথে সকল চেয়ারে বসতাম না। সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে আমরা বসতাম। সব সাংবাদিককে তিনি এক পরিবারের মনে করতেন। সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার বন্ধন ছিল অটুট। সেই বন্ধন ছিন্ন করেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন আমাদের ক্যাপ্টেন। 
১৯৯৪ সাল ডিসেম্বর মাসে দৈনিক বাংলার কণ্ঠের প্রকাশের আগে আমি “সাপ্তাহিক দ্বীপবাণী” পত্রিকা সাংবাদিকতা করতাম। ওই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মোঃ আবু তাহের। যিনি আমার “তাহের কাকা”। এই তাহের কাকার হাত ধরেই আমার নিয়মিত সাংবাদিকতায় আসা। একদিন সন্ধ্যার পর দ্বীপবাণীতে নিউজ লেখায় ব্যস্ত ছিলাম আমি। ওই সময় শ্রদ্ধেয় হাবিবুর রহমান এলেন। জানালেন, তার সম্পাদনায় ভোলা থেকেই একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ পাচ্ছে। আমাকে কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, চলেন অফিস দেখবেন। ওই দিন থেকে তিন দশক বাংলার কণ্ঠের সাথে আছি।
দ্বীপ জেলা ভোলার আধুনিক সাংবাদিকতার প্রাণপুরুষ প্রথম আলো’র সেই সময়ের প্রতিনিধি ফরিদ হোসেন বাবুল ভাই (প্রয়াত) বাংলার কণ্ঠেরে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বন্ধু মোকাম্মেল হক মিলন,  রফিকুল ইসলাম রফিক ভাই,  সফিকুল ইসলাম, মান্নান জাহাঙ্গীর ও  আমি রাত ১ টা পর্যন্ত একজোটে কাজ করেছি বছরের পর বছর। পরে যুক্ত হন জুন্নু রায়হান, কামরুল ইসলাম,  ছিদ্দিকুল্লাহ, মুন্না, মলয়সহ অনেকে। বরিশাল থেকে কাজ করতেন বর্তমান যুগান্তরের ব্যুরোচিফ আক্তার ফারুক শাহীন ও ভোলা জেলার অপর ৬ উপজেলার প্রতিনিধিরাও সক্রিয় কাজ করতেন। সকল কাজের পরে রাতের বেলা পত্রিকা অফিসে আসতেন এবং সকলের খোঁজ নিতেন সম্পাদক হাবিুর রহমান।   
সকল নিয়ম ভেঙে তাকে চলে যেতে হল। সোমবার বিকাল ৩ টায় ঢাকায় পিজি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রেখে গেছে একমাত্র ছেলে বর্তমানে পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হাসিব রহমান, বড় মেয়ে ব্যাংকার ফারহানা হাবিব অন্তু এবং  ছোট মেয়ে দৌলতখান সরকারি কলেজের শিক্ষক ফারজানা হাবিব শান্তুসহ অসংখ্য শুভাকাক্সক্ষী। 
সাংবাদিকতার সাহসী পুরুষ ছিলেন হাবিবুর রহমান। ‘৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড জনপদের খবর সংগ্রহে ছুটে বেড়ান মনপুরা, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশনের গ্রামে। তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের ভেতর পাকহানাদের টর্চার সেলের ছবি ধারণ করে তা প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাতীয় পুরস্কার পান। 
আমি ও আমরা ভালো থাকি এমনটা কামনা করতেন অভিভাবক হিসবে।
আমার বাবার সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। বন্ধুসম ছিলেন তারা। তাই আমার পিতৃতুল্য অভিভাবক ছিলেন সব সময়।
কেবল আমাকে নয়, বাংলার কণ্ঠের পরিবার ও প্রেসক্লাবে তার পরিষদের সদস্যদের নামের শেষে সাহেব সম্মোধন করে নরম সুরে ডাকতেন। আমার সাথে যখনই দেখা হতো কাঁধে হাত রেখে পরম স্নেহে বলতেন - কী খবর অপু সাহেব ? আর কোন দিন কেউ কাঁধে হাত রেখে বলবে না আমায় - কী খবর অপু সাহেব।


অমিতাভ অপু ভোলা জেলা