অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


ভূমিকম্পে নিহত ৫, আহত প্রায় ১০০


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১শে নভেম্বর ২০২৫ বিকাল ০৩:১২

remove_red_eye

১৭৪

তীব্র ভূমিকম্পে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় একশ’ জন। নিহতদের মধ্যে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় তিনজন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একজন এবং নরসিংদী সদরের একজন মারা গেছেন।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের সময় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সকালে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকায় একটি আটতলা ভবনের পাশের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পলেস্তরা খসে নিচে পড়ে। সেখানে গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। দেয়াল ও ইট-পলেস্তরা খসে নিচে পড়লে সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। 

ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় আহত ১০ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা (১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সকালে ভূমিকম্পের সময় ঘটনাস্থল হয়ে ভুলতা-গাউছিয়া যাওয়ার সময় সড়কের পাশের দেয়াল ধসে শিশু ফাতেমা, তার মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগমের ওপর পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলেই শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। আহত হন তার মা কুলসুম ও প্রতিবেশী জেসমিন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অন্যদিকে নরসিংদী সদর থানার গাবতলী এলাকায় বাড়ির সানশেড ভেঙে ওমর (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জল গুরুতর আহত হয়েছেন। 

 

ভূমিকম্পের সময় দেলোয়ার হোসেন শিশু ওমরসহ তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ভূমিকম্পের আঘাতে বাসার সানশেড ভেঙে তাদের ওপরে পড়লে চারজনই আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন। দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে আকস্মিক এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রেডিও মেকানিক ইকবাল আহমেদ জানান, ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অফিস থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তি। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।

আহত প্রায় একশ’
ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একশর কাছাকাছি ব্যক্তি আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর মধ্যে অন্তত ২০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আহতরা হলেন—বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী আরাফাত (২০) ও নুরুল হুদা (২০), হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের তানজিল হোসেন (২৬), সাদিক শিকদার (২৬), তানভীর আহমেদ (২৫) ও ফারহান তানভীর রাজিব (২৪)। এছাড়া ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আহত হয়ে এসেছেন—তানভীর (২২), সুবিয়া (১৪), সোহেল (৩৫), হারুনুর রশিদ (৫৬), আবুল খায়ের (৬০), অজ্ঞাতপরিচয় রিকশাচালক (৪০), হারুনুর রশিদ (৫৫), রিপন (২৮), বিল্লাল (৬), ফারজানা তানভীর (২৩), প্রভা (১৮), গালিব (১৮),  মধুসুদন (৩০), সজীব (২২), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আবুল খায়ের (৩০) ও ইব্রাহীম (২৫)।

পাশাপাশি আরমানিটোলার ঘটনায় আরও ১০ জনেরও বেশি লোক মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আর নরসিংদীতে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। এ বিষয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশানা কবির বলেন, ভূমিকম্পে আহত হয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

এছাড়া গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় এলাকায় ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়া করে নামার সময় একটি কারখানার ৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে হাইজাদী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামে একাধিক বাড়ির দেয়াল ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।

কোথাও হেলে পড়েছে ভবন, কোথাও ফাটল—কোথাও আগুন
ভূমিকম্পে কোথাও হেলে পড়েছে ভবন। কিছু কিছু ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল, কোথাও খসে পড়েছে পলেস্তরা। আবার কোথাও কোথাও আগুন লাগারও খবর পাওয়া গেছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক খুদে বার্তায় ফায়ার সার্ভিস জানায়, পুরান ঢাকা আরমানিটোলার কসাইটুলিতে আটতলা ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে গমন করে। পলেস্তরার কিছু আলগা অংশ ও কিছু ইট খসে পড়েছিল।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা একটি ভবনে ইট পড়ে একজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

সূত্রাপুরের স্বামীবাগে আট তলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রাপুর স্টেশন ঘটনাস্থলে গেছে।

ফায়ার সার্ভিস আরও জানায়, কলাবাগানের আবেদখালী রোডে একটি সাততলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গেছে। এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভবন ঠিক আছে, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছে।

ভূমিকম্পে বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগারও ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বারিধারা এফ ব্লকের ৫ নং রোডে একটি বাসায় আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। বারিধারা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট অগ্নিনির্বাপনে কাজ করছে। আগুনটি ভূমিকম্পের জন্য কিনা তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি বাসায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গজারিয়া ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।