বাংলার কন্ঠ ডেস্ক : ভোলার মনপুরা চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। প্রতিদিন কাঁদা-মাটি পেরিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো শ্রেণিকার্যক্রম হচ্ছে না। ফলে শ্রেণিকক্ষে বসে শিক্ষকের অপেক্ষা ও খেলাধুলায় সময় কাটছে শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, ভোলার মনপুরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন কলাতলি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে ৫৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। ১ নম্বর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪২ নম্বর চর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন দুজন করে। এ দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা যথাক্রমে ২০৬ ও ৮২ জন। ৩ নম্বর মনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান করান তিনজন শিক্ষক। এছাড়া ২২ নম্বর মাছুমাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন রয়েছেন ৪ জন শিক্ষক। তবে এরমধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন।
১ নম্বর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইমরান ও খাদিজা আক্তার জানায়, তারা প্রতিদিন কাঁদামাটির রাস্তা পাড়ি দিয়ে অনেক দূর থেকে স্কুলে আসে। কিন্তু ১২টায় তাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় শিক্ষকের জন্য। তাদের স্কুলে দুজন শিক্ষক থাকায় ঠিকমতো পাঠদান হয় না। কোনো দিন দুই বিষয় আবার কোনো এক বিষয়ে ক্লাস হয়।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্না আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার জানায়, তাদের সামনে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা। কিন্তু স্কুলে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। এতে তারা ভালো ফলাফল নিয়ে চিন্তিত। ঠিকমত ক্লাস না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না বলে জানায় তারা।
‘কলাতলি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষই জেলে ও কৃষক। আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো না। আমাদের পক্ষে শিশুদের মনপুরা উপজেলা সদরে নিয়ে পড়ালেখা করানো সম্ভব না। এছাড়াও মনপুরা যেতে হলে ট্রলারে করে যেতে হয়। তাও আবার নির্ধারিত সময় রয়েছে। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি কলাতলি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করে আমাদের সন্তানদের পরিপূর্ণ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হোক।’
৪২ নম্বর চর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার জানায়, সকালে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা ক্লাসে না এলে তারা দুষ্টুমি ও খেলাধুলা করে।
ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার জানায়, তাদের সকালে মাঝেমধ্যে একজন শিক্ষক থাকেন। এতে সকালে এক বিষয়ের বেশি ক্লাস হয় না। দুজন শিক্ষক থাকলে কোনো দিন দুই বিষয় আবার কোনদিন তিন বিষয় হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মো. রাকিব ও মো. ফকরুল জানান, কলাতলিতে শিক্ষক সংকটের কারণে শিশুদের পাঠদান হচ্ছে না। বিকল্পভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তারা।
তারা বলেন, ‘কলাতলি ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষই জেলে ও কৃষক। আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো না। আমাদের পক্ষে শিশুদের মনপুরা উপজেলা সদরে নিয়ে পড়ালেখা করানো সম্ভব না। এছাড়াও মনপুরা যেতে হলে ট্রলারে করে যেতে হয়। তাও আবার নির্ধারিত সময় রয়েছে। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি কলাতলি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করে আমাদের সন্তানদের পরিপূর্ণ প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হোক।’
১ নম্বর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাধান শিক্ষক মো. মঈন উদ্দিন জানান, তার বিদ্যালয়ে ২০৬ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তিনিসহ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। দুজনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পাঠদান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে এক-দুটি বিষয়ের বেশি পড়ানো সম্ভব হয় না।
‘বদলিজনিত কারণে অনেক শিক্ষক কলাতলি থেকে চলে গেছেন, এজন্য শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হলে কলাতলি ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। কলাতলির বিদ্যালয়গুলোতে ডেপুটেশনে শিক্ষক দেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে।’
তিনি আরও জানান, প্রধান হিসেবে স্কুলের কাজে তাকে অনেক সময়ই মনপুরা উপজেলা ও ভোলা সদরে যেতে হয়। আবার কখনো অন্য শিক্ষক অসুস্থ হলে বা ছুটি নিলে একজনকেই পুরো স্কুল সামলাতে হয়। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান করা যাচ্ছে না শিক্ষক সংকটের কারণে। তাই দ্রুত এই সমস্যা সমাধান প্রয়োজন।
৪২ নম্বর চর কলাতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শুকবল চন্দ্র দাস জানান, তারা মাত্র দুইজন শিক্ষক রয়েছেন। একজন না থাকলে অন্যজন পুরো স্কুলে পাঠদান করাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।
মনপুরা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, বদলিজনিত কারণে অনেক শিক্ষক কলাতলি থেকে চলে গেছেন, এজন্য শিক্ষক সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হলে কলাতলি ইউনিয়নের বিদ্যালয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। কলাতলির বিদ্যালয়েগুলোতে ডেপুটেশনে শিক্ষক দেওয়ারও পরিকল্পনা চলছে।