অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


ভোলা এখন বিনিয়োগ সম্ভাবনার নতুন রাজধানী হয়ে উঠছে


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ১০:০৬

remove_red_eye

২৬৫



গ্যাস ঘিরে মহাপরিকল্পনা : শিল্প স্থাপনায় জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ

রফিকুল ইসলাম ॥ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দ্বীপজেলা ভোলা এখন বিনিয়োগ সম্ভাবনার নতুন রাজধানী হয়ে উঠছে। মেঘনার বুকের এই জেলার ৯টি কূপে মজুদ বিপুল প্রাকৃতিক গ্যাস ঘিরে শিল্প স্থাপনায় জেগে উঠেছে নতুন প্রাণ। শুধু দেশীয় উদ্যোক্তাই নয়, গ্যাসের ভাণ্ডার ভোলায় চোখ রাখছেন চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ভোলা ইকো ডেভেলপমেন্ট জোনে চীন এক বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা এখন ভোলা।
ভোলায় এরই মধ্যে শিল্প স্থাপন শুরু করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তারা। কাজী গ্রুপ খেয়াঘাট সড়কের পাশে ফিড মিল বসিয়ে উৎপাদন চালু করেছে। পশ্চিম ইলিশায় শেলটেক কম্পানির প্রতিষ্ঠিত কারখানায় আন্তর্জাতিকমানের টাইলস তৈরি হচ্ছে, যা দেশীয় বাজার ছাড়িয়ে বিদেশেও যাচ্ছে।পেট্রোবাংলার অধীনে পরিচালিত সরকারি গ্যাস বিতরণকারী সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল) ভোলায় গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি দেখছে।  গ্যাস বিতরণকারী সুন্দরবন গ্যাস কম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল) ভোলা আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয়ের প্রকৌশলী অলিউর রহমান জানান, ভেদুরিয়ায় উর্মি গ্রুপ কারখানা নির্মাণ করছে, প্রাণ-আরএফএল একাধিক শিল্প ইউনিটের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছে। বিসিক শিল্পনগরীতেও গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে গ্যাসভিত্তিক ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। গ্যাস ঘিরে মহাপরিকল্পনা রয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলায়।
চীনের নজর ভোলায় : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) চলতি বছরের ২৬ আগস্ট ভোলা ইকো ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক জোনের অনুমোদন দিয়েছে। দায়িত্ব পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, যারা এরই মধ্যে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগ করেছে। প্রথম ধাপে ১০২ একর জমি নিয়ে শুরু হলেও পরে তা ১৫৮ একরে সম্প্রসারিত হবে।
বেজার তথ্য বলছে, বিনিয়োগের আকার ধরা হয়েছে এক বিলিয়ন ডলার।ভোলায় স্থাপিত হবে ৪০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যেগুলো পরিবেশবান্ধব, শ্রমঘন এবং কৃষিভিত্তিক হবে। মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ, মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, কৃষিজাত শিল্প এবং হস্তশিল্পের মতো খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সম্প্রতি ভোলা সফরে এসে চায়না ফ্রি ট্রেড জোন অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যান লি বলেন, ‘ভোলায় ফ্রি ট্রেড জোন হলে কৃষি, মৎস্য, চাল, ফলসহ স্থানীয় পণ্য চীনা বাজারে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করবে। এ ছাড়া চীনের ছেংতু শহরে বাংলাদেশের জাতীয় প্যাভিলিয়নে ভোলার কৃষিপণ্য, মাছ ও হস্তশিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।’
সম্ভাবনার ভোলা : ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কম্পানি ‘ভোলা ইকো ডেভেলপমেন্টের জন্য এরই মধ্যে সরকারের অনুমোদন নিয়ে জমি ক্রয় করেছে। সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের সেই জমিতে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। কম্পানির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ভোলায় এসে ওই এলাকা পরিদর্শন করে।  
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান আশাবাদী ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেভাবে ভোলায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করছেন, তাতে করে খুব শিগগির ভোলা হয়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ শিল্পাঞ্চল। আর এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে ভোলায় আর কোনো যুবককে বেকার থাকতে হবে না। বিসিক প্রসঙ্গে বলেন, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ পাবে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করলেই গ্যাস সংযোগ পেয়ে যাবে।
শিল্প-কারখানার চিত্র পাল্টাবে গ্যাস : ভোলার বিসিক শিল্পনগরী ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করেছিল। শিল্পনগরীর মোট ৯৩টি প্লটের মধ্যে ৮৯টি প্লট ৫৩টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত ইউনিটগুলোর মধ্যে ২৭টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। অন্য ১২টি ইউনিটে কারখানা নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নানা জটিলতায় ১৪টি শিল্প ইউনিট এখনো খালি পড়ে আছে।
তবে দীর্ঘদিন গ্যাস না পাওয়ায় শিল্পে গতি ছিল না। অবশেষে গত বছর থেকে গ্যাস সংযোগ শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই যুগ পর গত বছরের ২৬ জানুয়ারি বিসিকে গ্যাস সংযোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জে কে ট্রেডার্স নামক মুড়ি প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিসিকের ভারপ্রাপ্ত উপব্যবস্থাপক এস এম সোহাগ হোসেন বলেন, উদ্যোক্তাদের গ্যাস সংযোগ পেতে গ্যাস সরবরাহ কম্পানির কাছে বড় অঙ্কের টাকা জামানত রাখতে হচ্ছে। পাশাপাশি সংযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়াগত জটিলতাও রয়েছে। তাঁর মতে, এসব প্রক্রিয়া সহজ হলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত গ্যাসের আওতায় আনা সম্ভব হবে। সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ পেলে বিসিক শিল্পনগরীর চিত্র আমূল বদলে যাবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে গতি পেলে দেশের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।