বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১লা আগস্ট ২০২৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
১৩২
মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, ঢাকা : নৈতিক মূল্যবোধ বলতে আমরা বুঝি এমন কিছু নীতি ও আদর্শ যা ব্যক্তি ও সমাজের আচরণকে পরিচালিত করে, ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝায় এবং সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। সততা, সহানুভূতি, ন্যায়পরায়ণতা, শ্রদ্ধা, দায়িত্বশীলতা — এ সবই নৈতিক মূল্যবোধের অংশ। একটি সুস্থ ও স্থিতিশীল সমাজের ভিত্তি হলো এই মূল্যবোধগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সময়ে ব্যক্তি ও সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় একটি alarming সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের জীবনে।
নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ:
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পেছনে রয়েছে বহুমুখী কারণ:
দ্রুত নগরায়ন ও আধুনিকায়ন: দ্রুত নগরায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কমছে। যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার হওয়ায় পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে।
বস্তুবাদী মনোভাবের প্রসার: ভোগবাদ এবং বস্তুবাদী চিন্তা মানুষকে শুধু অর্থ উপার্জনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থই পরম সুখ — এমন ভ্রান্ত ধারণা সমাজে জেঁকে বসেছে, যা মানুষকে অনৈতিক পথে হাঁটতে প্ররোচিত করছে।
তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার: ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার একদিকে যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তেমনি অন্যদিকে এর অপব্যবহারের ফলে মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানো, সাইবারবুলিং এবং অশালীন বিষয়বস্তুর প্রসার ঘটছে, যা তরুণ প্রজন্মের নৈতিক মননে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার অভাব: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রায়শই নৈতিক শিক্ষার চেয়ে পুঁথিগত বিদ্যা এবং ভালো ফলাফলের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। মূল্যবোধ তৈরির পরিবর্তে নম্বরভিত্তিক প্রতিযোগিতাকে প্রাধান্য দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা সঠিক মানবিক গুণাবলী অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা: দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আইনের শাসনের দুর্বলতা সমাজে হতাশা সৃষ্টি করে। যখন মানুষ দেখে যে অনৈতিক কাজ করেও পার পাওয়া যাচ্ছে, তখন তাদের মধ্যে নৈতিক আদর্শের প্রতি বিশ্বাস কমে যায়।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবমূল্যায়ন: নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অনীহা এবং বিদেশি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণও আমাদের মৌলিক মূল্যবোধকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
নৈতিক অবক্ষয়ের প্রভাব:
নৈতিক অবক্ষয়ের ফলস্বরূপ সমাজে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে:
অপরাধ বৃদ্ধি: চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন – এমন সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। নৈতিকতার অভাবে অপরাধীরা কোনো ধরনের অনুশোচনা ছাড়াই এসব কাজ করছে।
সামাজিক বিশৃঙ্খলা: পারস্পরিক অবিশ্বাস, অসহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধার অভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে সুসম্পর্ক হ্রাস পাচ্ছে।
পারিবারিক ভাঙ্গন: পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ এবং পারিবারিক সহিংসতার কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে, যা শিশুদের মানসিক বিকাশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: নৈতিক অবক্ষয় মানুষের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব বাড়াচ্ছে। সুস্থ সামাজিক পরিবেশের অভাবে মানুষের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।
সুশাসনের অভাব: দুর্নীতিগ্রস্ত ও অনৈতিক ব্যবস্থার কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নৈতিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার:
নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টা:
পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব: শিশুদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলা থেকেই সততা, শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি, বিনয় এবং দায়িত্বশীলতার মতো গুণাবলী শেখানো উচিত। পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা আবশ্যক।
শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতার অন্তর্ভুক্তি: শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শুধু সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করলেই হবে না, বরং শিক্ষকদেরও নৈতিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ এবং পরোপকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা: ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নৈতিক মূল্যবোধ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা থেকে নৈতিক উপদেশ দেওয়া এবং মূল্যবোধভিত্তিক আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। সামাজিক সংগঠনগুলোও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গণমাধ্যমের ইতিবাচক ব্যবহার: গণমাধ্যমগুলো সমাজ গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের উচিত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা, ইতিবাচক মূল্যবোধ তুলে ধরা এবং অপরাধ ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা। অশ্লীল ও নেতিবাচক বিষয়বস্তুর প্রচার বন্ধ করতে হবে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা: দুর্নীতি ও অপরাধ দমনে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। যখন অপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পায়, তখন তা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে এবং সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক আন্দোলন: নৈতিক অবক্ষয় রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে নৈতিকতার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
উপসংহার:
নৈতিক মূল্যবোধ একটি জাতির মেরুদণ্ড। এর অবক্ষয় ব্যক্তি ও সমাজকে পঙ্গু করে দেয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের এখনই নৈতিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার এবং এর সংরক্ষণে সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তি যদি তার নিজের জায়গা থেকে নৈতিকতাকে ধারণ করে এবং সমাজে এর চর্চা শুরু করে, তবেই সম্ভব একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক এবং সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।
(নিজস্ব চিন্তার বহিঃপ্রকাশ)
দৌলতখানে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল
লালমোহনে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও আলোচনা সভা
পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ ৫ দাবীতে ভোলায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল
অসহায় কর্মহীণদের স্বাবলম্বী করতে বোরহানউদ্দিন ইউএনও'র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন আজ
জামায়াতের পিআর-এনসিপির প্রতীকের আন্দোলন নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না : ইসি আনোয়ারুল ইসলাম
যারা কম জনপ্রিয় তাদের জন্য পিআর লাভজনক: সালাহউদ্দিন
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ; সারাদেশে পাঁচদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা
বায়োটেকনোলজি নির্ভর ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ: শিক্ষা উপদেষ্টা
আল্লাহ আমাদের একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ ছোটলোক থেকে মুক্তি দিয়েছেন: সারজিস
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
ঢাকা-ভোলা নৌ-রুটের দিবা সার্ভিসে যুক্ত হলো এমভি দোয়েল পাখি-১র
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক
ভোলার চরফ্যাশনে করোনা উপর্সগ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু