অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


চরফ্যাশনে বিদ্যালয়কে কল্যান ট্রাস্টে অন্তর্ভূক্তে ৭০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৫ই জুলাই ২০২০ রাত ০৯:১২

remove_red_eye

৯৭৪




চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ,মাদ্রাজ ও আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৩টি শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কল্যান ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্ত করনের নামে চরফ্যাশন মান্দার তলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিনের মাধ্যমে ঢাকা সাভারের আশুলিয়া পল্লী বিদ্যুত এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের সাথে ৭০ লাখ টাকার উৎকোচ বানিজ্জ্যের পরেও বিদ্যালয়গুলো অন্তর্ভূক্ত হয়নি কল্যান ট্রাস্টে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়,প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন আমিনাবাদ হালিমাবাদের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের ছেলে। আব্বাস উদ্দিনের সাথে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের স্ত্রী রোকসানা এনজিও সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের রক্সের চুক্তি প্রকল্পে আনন্দ স্কুলের পরিচালনায় ২০১১ সালে একসাথে কাজ করার সুবাধে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের সাথে এসব অপকর্মের জালবোনা হয়। পরে স্থানীয় ৩টি শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে কল্যান ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্তের নামে কুট কৌশলে শেখ মানিকসহ ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও অন্তরালে রয়ে গেছে প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন থানায় গত জুন মাসে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ ৩জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করলেও আসামি হয়নি মধ্যস্ততাকারী আব্বাস উদ্দিন। আর এ টাকা সংশ্লিষ্ট  ব্যক্তিদের হাতেও যায়নি। ১৮জন শিক্ষক শিক্ষিকাসহ ৩টি শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হতে পাড়েনি কল্যান ট্রাস্টের আওতাভূক্ত। মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ মধ্যস্থতাকারী শিক্ষকের ও মদদদাতাদের চুক্তি ভঙ্গে স্বপ্ন ভঙ্গ এসব শিক্ষক এখন মানবেতর জিবন যাপন করছেন।
মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকদের বিচার কি পাবনা আমরা? কান্না চোখে প্রশ্ন করেন অসহায় এক শিক্ষিকার পরিবার। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা এ প্রতিবেদককে জানান, আব্বাস উদ্দিনের মধ্যস্ততায় এবং তার সহযোগীদের উপর বিশ্বাস করে আমরা এ টাকা দিয়েছিলাম। ঋণ নিয়ে ও ভিটা জমি বিক্রি করে এ টাকা দিয়ে আব্বাস উদ্দিনের মদদে আমাদের এখন সহায়সম্বল হাড়িয়েছি পথে বসে পড়েছি। 
গত ২৯তারিখ শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরিবার স্বজনদের চাপের মুখে পরে ৭০ লাখ টাকা উদ্ধারে থানায় মামলা দায়ের করেছেন পৌর ৫নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, আব্বাস উদ্দিনসহ আমাদের ৩টি শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কল্যান ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্ত করার মৌখিক চুক্তিতে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিককে আমরা নগদ ও ব্যাংক,বিকাশে মোট ৭০ লাখ টাকা দেই। তবে সে যথাস্থানে টাকা না দেওয়ায় এবং চুক্তি ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে আমরা আইনের হস্তক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিক সাংবাদিকদের কাছে তার ব্যাংক একাউন্টে ১৯ লাখ টাকা আছে বলে স্বীকার করে বলেন, আমি ঢাকার একটি পত্রিকায় কাজ করি । আব্বাস উদ্দিনের সাথে আমার স্ত্রীর মাধ্যমে পরিচয় ও পরবর্তীতে লেনদেন হয়। সে আমার কাছে কিভাবে টাকা পাঠাবে এবং দিবে এ বিষয়েও ফেসবুকে আলোচনা করত।
মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের স্ত্রী  রোকসানা আকতার বলেন, আমরা আব্বাস উদ্দিনকে একাধিকবার টাকার বিষয়ে আলোচনায় বসতে বলেছি। তিনি বসেনি উল্টো আমাদের আশুলিয়ার বাসায় গিয়ে ৫/৬জন সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ১২মার্চ/২০ তারিখে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন যার ডায়রি নং ১১৬৭।
এবিষয়ে আব্বাস উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, বাকি ৫১ লাখ টাকার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা তার স্ত্রী রোকসানা আর আমি একসাথে চাকুরী করি। রোকসানা তার স্বামী মাইনুল ইসলামের সাথে সচিবালয়ে সম্পর্ক আছে বলে আমাকে জানালে আমি পার্টির সাথে মধ্যস্থতা করে দেই। এবং কিভাবে টাকা গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তার সাথে আমার ফেসবুকে আলোচনা হতো। এর বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আর তার উপর আমি কেন হামলা করবো! মাইনুল টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে  তার জমি বিক্রি করবে বললে আমি চরফ্যাশন থেকে দুজন জমি ক্রেতাসহ শিক্ষকদের নিয়ে তার বাসায় যাই। কিন্তু কোন হামলা করিনি।
এতোগুলো টাকা মৌখিক চুক্তিতে কিভাবে লেনদেন করলেন প্রশ্ন করলে  আব্বাসউদ্দীন জানান, টাকা লেনদেন করেছে পার্টি সেটা তাদের বিষয় তবে গ্রান্টেড ছিলেন মাইনুলের স্ত্রী কারণ সে চরফ্যাশনে চাকুরী করত। তবে আমি লেনদেনের প্রধান সাক্ষি ছিলাম। আমি কোন টাকা আত্মসাথে জড়িত নই। আমার কাজ ছিল শিক্ষকদের সাথে মাইনুল ইসলাম যোগাযোগ করতে না পাড়লে আমি যোগাযোগ করিয়ে দিতাম।
চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফিন বলেন, প্রতারণার অভিযোগে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ ৩জনকে আসামি করে থানায় একটি প্রতারণা মামলা হয়েছে। মামলা নং ১১। পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মাইনুল ইসলাম শেখ মানিককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। সে বর্তমানে ২দিনের রিমান্ডে রয়েছে।