বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক: কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর আয়োজনে ঢাকার তোপখানা সড়কের সিরডাপ মিলনায়তনে “জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ জলবায়ু বাজেট ও বাংলাদেশ উপকূল” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বুধবার সকালে কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এর মুখপাত্র উমামা ফাতেমা,জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম-আহবায়ক জাবেদ রাসিন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর সহ সম্পাদক জেনারেল এ.এইচ.এম.হামিদুর রহমান আজাদ,দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম এর সভাপতি কাউসার রহমান, এসডিআই আশরাফ হোসেন, সহ আরও অনেকে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন এর হেড-(জলবায়ু পরিবর্তন) এম এ. হাসান।
এসময় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাজেটগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী জলবায়ু বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না, সরকার এখনও জিডিপির মাত্র ০.৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দিচ্ছে যেখানে নূন্যতম ৩ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সরকার কর্তৃক গৃহীত কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে জিডিপির নূন্যতম ৩ শতাংশ অর্থাৎ ১ লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য আমাদের কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, তা একবারে সম্ভব না হলেও, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে, আমরা আর মাটির বাঁধ চাই না। তিনি বলেন, পানীয় পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে জলবায়ু-সহিষ্ণু পানি শোধনাগার স্থাপনের উপর জোর দেওয়া উচিত, পর্যাপ্ত গবেষণা, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া উচিত।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন প্রকল্পের সমালোচনা করে বলেন, প্রথমত, রামপাল এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্প থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে জাহাজ ভাঙা শিল্প স্থাপনের কারণে উপকূলীয় বন ধ্বংস হচ্ছে। সরকারের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত তেমন দেখা যায়নি। বাজেট প্রণয়নের তুলনায় বাজেটের যথাযথ ব্যয়ের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি তার বক্তব্যে নদী খনন ব্যবস্থার উপর জোর দেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন উপকূলীয় বাঁধ রক্ষার পাশাপাশি বনায়ন সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, আমাদের নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে, এর জন্য বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। অনুষ্ঠানে এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এত বছর বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু উপকূলবাসীর সুরক্ষার বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। তিনি বলেন মূল ভুখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলোকে যুক্ত করতে হবে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তিনি আরো বলেন প্রক্ল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে এবং নিজস্ব সম্পদের উপর নির্ভর করেই আমাদের বাজেট প্রণয়ণ করতে হবে।
বক্তাদের মধ্যে গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদী সমস্যার সমাধান না করে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫% শিশু, কিন্তু তাদের বিষয় জাতীয় বাজেট নেই। তিনি পানি ব্যবস্থাপনা নীতি, নিরাপদ অভিবাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উপর জোর দেন।
উপস্থিত বক্তারা বলেন, জলবায়ু খাতে বাজেট বরাদ্দ পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত নয়। দুর্বল ও অপর্যাপ্ত উপকূলীয় সুরক্ষা অবকাঠামোর অভাবে উপকূল দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও বরাদ্দ বাড়েনি, উপকূলবাসীর দাবি সর্বদাই উপেক্ষিত হয়েছে। ৪ কোটি উপকূলীয় মানুষের জীবন ও জীবিকার টেকসই সুরক্ষায় খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য টেকসই পুনর্বাসন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন যেমন-সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণ, স্যানিটেশন, কৃষি এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়গুলো গুরত্বের সাথে বিবেচনায় আনতে হবে।