অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, শনিবার, ৩রা মে ২০২৫ | ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


জিআই পণ্যের সনদ পেল ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২রা মে ২০২৫ রাত ০৮:১১

remove_red_eye

২৩

বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক: জিও-গ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের সার্টিফকেট পেয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার দুই’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দই। গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত থেকে এ সনদ গ্রহন করেন ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। এর আগে গত ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পেটেন্ট শিল্প নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মাহপরিচালক মো. মুনিম হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ‘ভোলার মাহিষের দুধের কাঁচা দই’কে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভোলার দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তখনকার ভোলার জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৯ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৫৫ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। যার নিবন্ধন নম্বর-৩৪।


সাগর আর নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের জীবনমানে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। খাবারেও রয়েছে নিজস্বতা। এরই অংশ হিসেবে এ জেলা দীর্ঘকাল ধরে পরিচিতি পেয়েছে মহিষের দুধের কাঁচা টক দই, যা স্থানীয়ভাবে ‘মইষা দই’ নামে পরিচিত। ভোলার ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। বিয়ে, সামাজিক, পারিবারিক ভোজ কিংবা উৎসব-পার্বণের খাবারে দই পরিবেশন অনেকটা আবশ্যকীয়। অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও স্বাদের জন্য এ দইয়ের খ্যাতি জেলার গÐি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। ভোলাসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও অতিথি আপ্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ মহিষের দুধের টক দই। স্থানীয় লোকজন খাবারের শেষে ভাতের সঙ্গে চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে এই দই খায়। মহিষের দই চিড়া, মুড়ি ও চিনি মিশিয়েও খাওয়া হয়। পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের দইয়ের হাঁড়ি ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ ও ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। গরমের মৌসুমে দইয়ের সঙ্গে হালকা পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করেও বিক্রি করা হয় দোকানে দোকানে। এই ঘোল গরমের দিনে বেশ জনপ্রিয়।


ভোলা জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি মোবাশি^র উল্লাহ চৌধুরী জানান, বিষয়টি ভোলাবাসীর জন্য আনন্দের। এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভোলায় মহিষ পালনকারী ও দই উৎপাদনকারীদের জন্য এ সুযোগ তৈরী হয়েছে। যারা এ স্বীকৃতির জন্য কাজ করেছে তাদের প্রতি ভোলাবাসী চির কৃতজ্ঞ। তবে এটিকে আরো ব্যাপকহারে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রাণী সম্পদ ও জেলা প্রশাসন কাজ করতে হবে। যাতে করে এটি নির্ভেজালভাবে মানুষের কাছে পৌছায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারন এটি ভোলার মানুষের শত বছরের ঐতিহ্য এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদেরকেই।


ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দই ভোলার ঐতিহ্য। ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দইয়ের যে স্বীকৃতির মাধ্যমে এখানকার মহিষ পালনকারী উদ্বুদ্ধ হবে। এতে করে আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা হবে এবং উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লে এখানকার মহিষ পালনকারীরা লাভবান হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে। জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে এই দধি এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি করা যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দধি উৎপাদনে মানের উন্নতি হবে। কেননা জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে মহিষের দুধের দই সংরক্ষণ করা যায় এবং এ শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখা যায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই প্রচেষ্টা থাকবে।