অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


মনপুরায় জেলেদের ভাগ্যে জুটেনি সরকারি পুর্নবাসনের চাল ।। জেলে পরিবারে হাহাকার


মনপুরা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৭শে এপ্রিল ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:১৯

remove_red_eye

১৯৮

মেঘনা- তেঁতুলিয়ায় ২ মাসের নিষেধাজ্ঞার শেষ পর্যায়
 
মনপুরা প্রতিনিধি : মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে দুই মাস মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ এপ্রিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার শেষ পর্যায়েও জেলেদের ভাগ্যে জুটেনি জেলে পুর্নবাসনের সরকারী বরাদ্ধের চাউল। এতে ধার-দেনা করে কোনমতে সংসার চালিয়ে শেষ সময়ে হাহাকারে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো। এই চিত্র শুধু ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরা উপকূলের নয়। একই চিত্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া সকল জেলা-উপজেলার জেলে পরিবারে।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারী মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা  ভোলার মনপুরায় বিচ্ছিন্ন ঢালচর জেলে সমিতি ও ২৪ ফেব্রুয়ারী উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ চরগোয়ালিয়া আর্দশ মৎস্যজীবি গ্রাম সংগঠনের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা করে আশ্বাস দেন জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে মাছ না ধরলে, সরকারী পুর্নবাসনের চাউল সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও জেলেদের দাবীর প্রেক্ষিতে পুর্নবাসনের চাউল প্রাপ্তি জেলের সংখ্যা বাড়ানো চেষ্ঠা করা হবে বলে উপদেষ্ঠা আশ্বস্ত করেন।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্ঠা আশ্বাসের পরও নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ও পুর্নবাসনের চাউল না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুসছে জেলেরা।

জেলে রাকিব, সামাদ, সামছু, রহিম, জামাল সহ অনেকে জানান, উপদেষ্ঠা আশ্বাসের পরও বেশিরভাগ জেলে ১ম কিস্তির চাউল পায়নি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতে আর তিনদিন এখনও দ্বীতীয় কিস্তির চাউল পায়নি কোন জেলে। ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। জেলেদের কথা মনে রাখেনি উপদেষ্ঠা। তাই জেলেদের চাউল বরাদ্ধের কথা ভুলে গেছেন। এভাবে জেলেদের সাথে করলে আগামীতে সরকারী নিষেধাজ্ঞা মানতে পারেবনা বলে জানান জেলেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মেঘনা নদীর চর ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত ও তেতুলিয়া নদীর কালাবাদুর থেকে চররুস্তুম পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় অভায়শ্রম ঘোষনা করে সরকার। এই সময় মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা জারী করে সরকার। এই দুই মাস দুই কিস্তিতে প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি চাউল বরাদ্ধ করে সরকার।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মনপুরা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩ শত ৪৭ জন। এর বিপরীতে সরকার ১ম কিস্তিতে ৬ হাজার ৬ শত জেলের জন্য ৪০ কেজি করে চাউল বরাদ্ধ দেয়। এতে জেলেদের বিরাট অংশ ১ম কিস্তির পুর্নবাসনের চাউল পায়নি। এদিকে ২য় কিস্তির চাউল বরাদ্ধ না পাওয়ায় জেলেদের মধ্যে বিতরন হয়নি।

মনপুরা জেলে সমিতির নেতা ইব্রাহীম মাঝি, রতন মাঝি, সাহাবুদ্দিন মাঝি জানান, এইবার নিবন্ধিত জেলের অর্ধেকের কম জেলের জন্য ১ম কিস্তির চাউল বরাদ্ধ করে সরকার। তাই এই উপকূলের অধিকাংশ জেলে ১ম কিস্তির চাউল পায়নি। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞার শেষ পর্যায়ে ২য় কিস্তির চাউল এখনও পায়নি জেলেরা। চাউল না পাওয়া জেলে পরিবারে হাহাকার চলছে বলে জানান তারা।

এছাড়াও জেলে নেতারা অভিযোগ করেন, মৎস্য উপদেষ্ঠা জেলেদের বরাদ্ধের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্ঠা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন কিন্তু ওল্টো আগের চেয়ে বরাদ্ধের সংখ্যা কমে গেছে। আগের বছরগুলোতে সময়মত এর চেয়ে অধিক পরিমানে জেলেরা চাউল পেত। এখন তার ওল্টো। আগামীতে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান জেলে নেতারা।

এই ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন জানান, ২য় কিস্তি জেলে পুর্নবাসনের চাউল বরাদ্ধ না পাওয়ায় জেলেদের দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১ম কিস্তির চাউল অধিকাংশ জেলেরা পায়নি এমন প্রশ্নে তিনি জানান বরাদ্ধ যা দেওয়া হয়েছে তা আনুপাতিকহারে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে জেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বনিক জানান, ২য় কিস্তির চাউল বরাদ্ধ না আসায় উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে দ্রুততার সাথে বন্টন করে জেলেদের মধ্যে দেওয়া হবে।