লালমোহন প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬ই জানুয়ারী ২০২৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
১৮
আকবর জুয়েল,লালমোহন : ১৮ বছরের কিশোর মো. আরিফ। ৬ ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ছেলে তিনি। নি¤œবিত্ত পরিবারে জন্ম তার। বাবা পেশায় দিনমজুর। একমাত্র ছেলে সন্তান আরিফকে নিয়েই কত স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের! তাদের বৃদ্ধ বয়সে সংসারের হাল ধরবে ছেলে, এ আশায় বুক বেঁধেছিলেন বাবা-মা। তবে সেই স্বপ্ন গুলিবিদ্ধ হয়ে অকালেই নিভে গেছে।
কিশোর আরিফ ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদপুর এলাকার সেকান্তর মুন্সি বাড়ির মো. ইউসুফের ছেলে। দিনমজুরি করে সামান্য উপার্জনে ইউসুফের দিন কাটলেও একমাত্র ছেলেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তবে পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে কিশোর আরিফ বেশি পড়তে পারেননি। একই ইউনিয়নের লর্ডহার্ডিঞ্জ ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সে।
বৃদ্ধ বাবার কাঁধ থেকে সংসারের বোঝা কিছুটা হালকা করতে কিশোর বয়সেই আরিফ পাড়ি দেন ঢাকায়। গত জুলাই মাসে সেখানে গিয়ে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে খাবার হোটেলে কাজ শুরু করেন তিনি। কে জানত ওই ঢাকা যাওয়ার আগ মুহূর্তটাই ছিল তার পরিবারের সঙ্গে শেষ দেখা!
পরিবারের অভাব দূর করতে ঢাকায় গিয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে পৃথিবী থেকেই দূরে। কারণ, জুলাই মাসে ঢাকা ছিল আন্দোলনে উত্তাল। ওই মাসের ১৯ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যাত্রাবাড়ী এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি আরিফের ডান চোখের সামনে দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় মাথার পেছন দিয়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরিফকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নেয়া এবং তার লাশ বাড়িতে পাঠানো পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন তার মামাতো ভাই মো. শাহাবুদ্দিন। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই হোটেলের জন্য বাজার করতে গিয়ে যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আরিফ। কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। একটি গুলি তার চোখের সামনে দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেখানে থাকা লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরপর দ্রæত সেখানে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা আরিফকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিই। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে নিলে চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামাতো ভাই মো. শাহাবুদ্দিন আরো বলেন, পরদিন ২০ জুলাই রাত ৯টার দিকে আরিফের মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায় নেয়া হয়। আরিফের বাবা-মা এখনো তাকে মনে করে কাঁদতে থাকেন। সবসময়ই তাদের তাড়া করে দুশ্চিন্তা। বৃদ্ধ বয়সে তাদের এবং আরিফের ছোট দুইবোনের ভবিষ্যৎ কী হবে?
আন্দোলনে শহিদ আরিফের মা ফরিদা বেগম বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পর ছেলের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হতো। একদিন কথা না হলে ছেলের এবং আমাদেরও মন খারাপ হতো। ছেলের সঙ্গে কথা বললেই বলত, মা, তোমার সঙ্গে কথা না হলে আমার রাতে ঘুম আসে না। যেদিন আমার ছেলেটা মারা যাবে, তার আগের দিন রাতেও তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওই রাতে আমার ছেলে আরিফ ফোন দিয়ে আমি এবং তার বাবাসহ পরিবারের অন্যদের খোঁজ নিয়েছে। এতটুকুই ছিল আমার ছেলের মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে শেষ কথা। পরদিন খবর আসে আমার ছেলে আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তার মৃত্যুর খবরটা তখন বিশ্বাস করতে পারিনি। তবুও অনেকে এসে বুঝিয়ে বলার পর মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি আমার ছেলে আর নেই। সে আমাদের ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে।
সন্তান হারানোর পাঁচ মাস পেরিয়েছে। আজো তার কথা মনে করে ক্ষণেক্ষণে কাঁদেন মা। তিনি বলতে থাকেন, আমি বুঝতেই পারছি না আমার ছেলের দোষটা কী ছিল? কেনইবা তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে? তবে আমি তো আর ছেলেকে পাব না, তাই যাদের নির্দেশে এবং যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে, শহিদ আরিফের বাবা মো. ইউসুফ বলেন, আমার ৬ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল আরিফ। তার চিন্তায় একেবারে ভেঙে পড়েছি। ওর মা সারাক্ষণ কাঁদতে থাকে। অভাবের সংসারে পরিবারের হাল ধরতে সে ঢাকায় গিয়েছিল। সেখানে তার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে হোটেলে কাজ করত। সেখানে যাওয়ার ১৭ থেকে ১৮ দিনের মাথায়ই পুলিশের গুলিতে মারা যায় আরিফ। আমি কোনোমতে কৃষিকাজ করে সন্তানদের বড় করেছি। এখন সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার দুই মেয়ে এখনো পড়াশোনা করে। সবমিলিয়ে আমি সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যেতাম। সংসার চালাতে আমার এই কষ্ট তার হয়তো সহ্য হয়নি। তাই খুব সম্ভবত আমার এই কষ্ট দূর করতে আরিফ ঢাকায় গিয়ে চাকরি নেয়। তবে আমি কখনো ভাবিনি আমার ছেলেটা এত নির্মমভাবে আমাদের মাঝ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। যদি এমনটা জানতাম, তাহলে আমার হাজার কষ্ট হলেও কখনোই তাকে ঢাকায় যেতে দিতাম না। গ্রামে রেখেই আমি কাজ করে তাকে পড়াশোনা করাতাম।
তিনি আরো বলেন, আরিফের মাকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারছি না। তাকে নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সে। আমিও নীরবে সহ্য করে নিই ছেলে হারানোর অসহ্য যন্ত্রণা। একমাত্র ছেলে আরিফকে ঘিরেই আমাদের বহু আশা ছিল। আমার এখন বয়স হয়েছে। যার জন্য শরীরে নানান রোগ। তাই এখন ঠিকমতো কাজও করতে পারি না। ভবিষ্যতে সংসারের উপার্জন করার মতো ছেলে আরিফই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু আমার সেই ছেলেটাকে ওরা বাঁচতে দেয়নি। ছেলেকে তো হত্যাই করে ফেলল। এখন মেয়েদের নিয়ে কী করব জানি না। ওদের পড়ালেখাই বা কীভাবে করাব, সেটাও ভেবে উঠতে পারছি না। আন্দোলনে আমার ছেলে শহিদ হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু টাকা অনুদান পেয়েছি। তবে যারা আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের দ্রæত বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
আরিফের কয়েকজন বোন জানান, আমরা মোট পাঁচবোন। যার মধ্যে তিনজনেরই বিয়ে হয়েছে। তবে এখনো আমাদের দুইবোন পড়াশোনা করছে। তাদের পড়াশোনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে তাদের মধ্যে একজন এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। সে পাস করলে সরকার তাকে মোটামুটি ভালো একটি চাকরি দিলে আমাদের অস্বচ্ছল পরিবারটিতে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা ফিরবে।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বলেন, এই উপজেলায় আন্দোলনে যারা শহিদ এবং আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রস্তুত করে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। আমি যতটুকু জানি দ্রæত সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে প্রত্যেক শহিদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের ১ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদান করা হবে।
দৌলতখানে বিলুপ্তির পথে খেজুর রস
বন্ধু শংকরকে সহায়তায় ৮৬ বন্ধুরা
খালেদা জিয়াকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাতে গুলশানে মির্জা ফখরুল
বেশি সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন: প্রেস সচিব
খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা: বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার
জুনের শেষ সপ্তাহে এইচএসসি, চলছে রুটিন তৈরির কাজ
পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন আন্দোলনে আহত ১০০ জন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: সরকারকে ফারুক
সংস্কার একটা অন্তহীন প্রক্রিয়া: আলাল
বাণিজ্যকেন্দ্রিক কূটনীতি গ্রহণ করতে হবে: আমীর খসরু
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
ভোলার চরফ্যাশনে করোনা উপর্সগ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক
ভোলায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আরও ৬ জনের করোনা শনাক্ত