এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন থেকে: পেঁয়াজ চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চরফ্যাশন উপজেলার অনাবাদি জমিসহ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোয়। উপযোগী জমিতে যথাসময়ে পেঁয়াজের চাষ করলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। আগ্রহী চাষিদেরকে উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ,সার,সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও ফলন উৎপাদন পরবর্তী সংরক্ষণসহ আনুসঙ্গীক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তাহলে পেঁয়াজ চাষে এগিয়ে আসবেন বলে জানান চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কৃষি সংশ্লীষ্টরা বলছেন চরফ্যাশনে পেঁয়াজ আবাদ করার মতো হাজার,হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। সরকার যদি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে পেঁয়াজ চাষের অনুকূলীয় জমিগুলো নির্বাচন করে চাষিদের সুযোগ সুবিধাসহ প্রণোদনা দেয় তাহলেই চরাঞ্চলগুলো হয়ে উঠবে পেঁয়াজের ভান্ডার। কৃষি বিশ্লেষকগণ আরও বলেন, নিজ দেশেই যদি পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যায় তাহলে আমদানির উপর নির্ভরতা কমে যাবে। পাশাপাশি রপ্তানী করেও জাতীয় উন্নয়নে অধিক ভূমিকা রাখতে পাড়বে।
চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরী,চর পাতিলা, পূর্ব ঢাল চর,চর তারুয়া ও চর নিজাম,চর মালা,চর শাহজালালসহ আরও একাধিক চরাঞ্চলে রয়েছে হাজার,হাজার হেক্টর জমি। এসব চরের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী মৎস্য শিকার, গরু,মহিশ পালন ধান চাষ এবং মৌসুমী চাষাবাদসহ বাঙ্গি ও তরমুজ আবাদ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ চরগুলো নদী সংলগ্ন হওয়ায় বেশিরভাগ চাষিরা সারাবছর ধান চাষ করে। অল্পসংখ্যক চাষিই মরিচসহ সাথি চাষ আলু,টমেটো,লাউ,কুমরো, এবং শশা খিরাসহ তরমুজ বাঙ্গিও চাষ করে।
উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের ধান চাষি কামাল উদ্দিন,এবং নীলকমল ইউনিয়নের তরমুজ চাষী খলিল মিয়া,সুমন হাওলাদার,কলমী ইউনিয়নের জামাল মুন্সি এবং ওসমানগঞ্জের ইব্রাহীম মোল্লাসহ একাধিক কৃষক জানান, ধান ও সবজীর পাশাপাশি তরমুজ চাষে প্রচুর অর্থলগ্নী করতে হয়। বৈরী আবহাওয়া না থাকলে ঘাম ঝড়ানো শ্রমে ভালো ফলন ও অধীক মূল্য পাওয়া যায়। তাই প্রতিবছর অগ্রহায়ণের শেষ ও পৌষের শুরুতে শুষ্ক মৌসুমে তরমুজ ও বাঙ্গির চাষ করেন এ চাষিরা। তবে অনেক মৌসুমেই বৈরী আবহাওয়ার জন্য ভালো ফলন না হওয়ায় লোকসানও গুনতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতী বছর করোনার প্রাদূর্ভাবের শুরুতেই তরমুজের ভালো ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাস হতে হয়েছে এসব চাষিদের। তারা আরও জানান, বাণিজ্যিকভাবে চরাঞ্চলগুলো পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এসব জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে আঞ্চলীক চাহীদা পুরণ করে রপ্তানী করাও সম্ভব। যদি সংশ্লীষ্ট দপ্তর প্রত্যেক উপজেলা ভিত্তিক পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরীসহ এসব কৃষকদের উন্নত জাতের পেঁয়াজের বীজ ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুতের বন্দবস্ত এবং কৃষি ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেন তাহলে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় অর্থনিতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান এ চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে অন্যান্য বছরের চেয়ে গত অর্থ বছরে উপজেলার ১২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। এছাড়াও এ উপজেলায় আমন ধানের চাষাবাদ বেশি হওয়ায় ২৪-২৫ অর্থ বছরে ৭৬ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে আমন উফশি এবং স্থানীয় আমনের চাষ হয়েছে। পাইকাররা বলেন, বাম্পার ফলন হয়েছে। চরফ্যাশন কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৮০ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি হেক্টরে ৪ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে।
এ অঞ্চলের আমন ধান চাষে বীজতলা থেকে শুরু করে ফলন পরবর্তী ধানের গুদাম পর্যন্ত নিতে প্রায় ৫ মাস অর্থাৎ ১৫০ দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগলেও উন্নত মানের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে প্রায় সাড়ে ৩মাস অর্থাৎ ১১৫ দিনের বেশি সময় লাগেনা। তিনি আরও বলেন, বাজারে ব্রী ধান-৬২ এবং বিনা ধান-২১ (জীবন কাল ১০০-১০৫দিন) এর নতুন জাতের ধানের বীজ রয়েছে। এই ধানের ফলন সাড়ে ৩ মাসে অর্থাৎ ১১৫ দিনের ভেতরে ঘরে তোলা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, চরফ্যাশনে কৃষি সম্প্রসারনের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী মরিচের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবির পেঁয়াজের সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, জলবায়ুগত দিক থেকে পেঁয়াজ চাষে এ অঞ্চলের মাটিতে শুষ্ক মৌসুমে জলাবদ্ধতা হয়না এবং এখানকার মাটি দো-আঁশ,এটেল দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ এবং পলিযুক্ত মাটি হওয়ায় ভোলার চরাঞ্চলগুলোয় পেঁয়াজের চাষ অধিক সম্ভাবনাময়। তিনি আরও জানান,৭শ ২৪ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদে সরকারী লক্ষ্য থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্বোদ্ধকরণ কর্মসূচি ও মরিচের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাষিদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বোদ্ধ করছি। চাষিদের পেঁয়াজের বীজসহ বিভিন্ন ফসল আবাদে প্রনোদণা দেয়া হচ্ছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে যদি কেউ পেঁয়াজ আবাদ করে কৃষি সম্প্রসারণ তাকে কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিাধা দিবে। চলতি অর্থবছওে এক হাজার হেক্টরের অধীক জমিতে জেলায় এ পেঁয়াজ উৎপাদন করা হবে। ফলে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন অন্যান্য বছরের চেয়ে এগিয়ে যাবে এবং আমদানী নির্ভরতা কমবে বলেও আশা করেন তিনি।