অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


গ্রাম-গঞ্জ থেকে হারাচ্ছে আলোর বাহক নিশাচর জোনাকি


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৯

remove_red_eye

৬৪২

আকবর জুয়েল, লালমোহন: ঘুটঘুটে অন্ধকারে গাছগাছালি, লতাপাতা আর ঝোপঝাড়ের ফাঁকে তারার মতো মিটমিটে আলো জ্বালিয়ে রাতের নিরবতাকে মোহনীয় করে তোলে জোনাকি। তবে জনজীবনে এখন এসেছে অনেক আধুনিকতা। হয়েছে নানা প্রকার কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা। যার ফলে এখন আর সেই কৃত্রিম আলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না জোনাকিরা। তাই এখন গ্রাম-গঞ্জে আগের মতো আর দেখা মেলে না জোনাকির। ভোলার লালমোহন উপজেলায় কয়েক বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জে দেখা যেত জোনাকির। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই নিজের আলোয় জ্বলে উঠতো এসব জোনাকি। তবে সম্প্রতি সময়ে এই উপজেলায় তেমন দেখা নেই আলোর বাহক নিশাচর জোনাকিদের। তারা দিন দিন নিজেদের আলো নিভিয়ে অন্ধকার পথের যাত্রী হচ্ছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, জোনাকি মূলত বিটল শ্রেণির বাদামি পোকা। যাকে ইংরেজিতে লাইটিং বাগ বা ফায়ার ফ্লাই বলা হয়। ছোট্ট কালচে বাদামি রঙের এই পোকা দেখতে অনেকটা লম্বাটে গড়নের। যা লম্বায় প্রায় দুই সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এসব জোনাকির ছয়টি পা, দুটো অ্যান্টেনা, অক্ষিগোলক আর শরীর তিন ভাগে বিভক্ত থাকে। এই পোকার পেটের পেছনে রয়েছে আলো জ্বলা অংশটি। প্রতিটি জোনাকি শরীরের শেষ ভাগে একটি করে বাতি নিয়ে ঘোরে। পৃথিবীতে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির জোনাকি পোকা রয়েছে। জলচর অনেক প্রাণির এমন আলো জ্বালানোর ক্ষমতা থাকলেও স্থলচর প্রাণির মধ্যে জোনাকিই একমাত্র আলো জ্বালানোর ক্ষমতা রাখে। দিনের বেলায় এসব জোনাকিরা পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ও নদী পাড়ের লতা-ঘাস এবং ঝোপ-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে। এসব জোনাকি ক্ষুদ্রাকারের। যারা কেঁচো, শামুকের ডিম বা পচা প্রাণি ও আবর্জনা খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে বয়স্ক জোনাকিদের প্রিয় খাবার গাছের ফুল-ফলের মধু ও রস।
ন্যাচার কনজারভেশন কমিটি (এনসিসি) ভোলার সমন্বয়কারী ও লালমোহন প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম জনি বলেন, শিশুকালে জোনাকি নিয়ে খেলা করেনি এমন মানুষ খুব কম রয়েছে, বিশেষ করে যারা গ্রামে বসবাস করেন। তখন গ্রামাঞ্চালে ঝোপঝাড় ও বাঁশ বাগানের ব্যাপক বিস্তৃতি থাকায় জোনাকির উপস্থিতিও বেশি ছিল। এখন ঝোপঝাড়, বাঁশ বাগান কমে গেছে, বেড়েছে মানুষের ঘনবসতি। তার ওপর জোনাকি পোকা বিলীন হওয়ার অন্যতম কারণ ইলেকট্রিসিটি। কারণ জোনাকিরা তীব্র আলো সহ্য করতে পারে না। এছাড়া বর্তমান সময়ে প্রকৃতির ওপর মানুষ অত্যাচার করায় প্রকৃতিও দিন দিন বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। তাই আমি মনে করছি; প্রকৃতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বনায়ন বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া এখন খুবই জরুরি।
লালমোহন সরকারি শাহবাজপুর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম মোল্লা এলটি জানান, কয়েক বছর আগেও জোনাকি পোকা সচরাচর দেখা যেত। তবে সম্প্রতি সময়ে সেই জোনাকির সংখ্যা আশঙ্কাজনভাবে কমে গেছে। যার মূল কারণ হিসেবে রয়েছে আলোক দূষণ, জোনাকির বাসস্থান ধ্বংস, কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জৈবিক বৈচিত্রের অভাব। এসব কারণে কেবল জোনাকিই নয়, এমন অনেক ধরনের প্রাণি ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। তাই এসব সমস্যাগুলো সমাধান করতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের খুব দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

 





আরও...