অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২৩শে মাঘ ১৪৩১


৯০ দশকে যে ভাবে লেটার প্রেসে প্রকাশ হতো দৈনিক বাংলার কন্ঠ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪ দুপুর ১২:৩৫

remove_red_eye

১৪৪

হাসিব রহমান: তখন ছিলোনা কোন ইন্টারনেট, ই -মেইল। হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ, মোবাইল বা আধুনিক কোন যোগাযোগ মাধ্যমে তো ছিলো চিন্তার অতীত।  একমাত্র ভরসা ছিল সরকারি টি এন্ড টি'র ল্যান্ড ফোন। তাও এনালগ সিষ্টেম। বলছিলাম ১৯৯৪ সনের কথা। কেউ এখন ভাবতেই পারবে না মোবাইল, ইন্টারনেট ছাড়া। আর সেই সময় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আধুনিক কোন যোগাযোগ মাধ্যম ও ছাপাখানা না থাকলেও দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে এম হাবিবুর রহমানের সম্পাদনায় ২১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক বাংলার কন্ঠ। তার পর নানা প্রতিকূলতা,  কঠিন এক চ্যালেঞ্জ ও বলতে গেলে দু:সাহসিতা নিয়ে  দেখতে দেখতে ২৯ বছর পেরিয়ে ৩০ বছরে পদার্পণ করেছে। তখন আধুনিকতার ছোঁয়া বিহীন দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে দৈনিক পত্রিকা বের করা কতো কঠিন ছিলো তা হয়তো আজ নতুন প্রজন্মের অনেক গনমাধ্যমের কর্মীরা অনুধাবন করতে পারবে না। সে সময় লেটার প্রেসে পত্রিকা ছাপা হতো। শিসা দিয়ে অক্ষর টাইপ হতো। যেমন আমার লিখতে 'আ মা র' । তিন টি টাইপ বসাতে হতো। এভাবেই সংবাদ গুলো কম্পোজিটরগন কঠিন ধৈর্য্য সহকারে টাইপ করতেন। তারপর বার্তা সম্পাদক মেকআপ ডামি দিতেন। তা দেখে পেইজ মেকআপ ম্যান পত্রিকার পাতা মেকআপ করতেন। এরপর প্রুফ রিডার ভুল সংশোধন করার পর মেশিন ম্যান ছাপানোর কাজ শুরু করতেন। তখন চলমান ঘটনার  ছবি ছাপানোর সুযোগ ছিল না। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী, এমপি ও বিশিষ্ট ব্যাক্তি বর্গের ছবির ব্লক তৈরি করা থাকতো। তাদের সংশ্লিষ্ট সংবাদে ছবি ছাপানো হতো। এতো গেলো পত্রিকা ছাপানোর সংক্ষিপ্ত গল্প। তখন সংবাদ সংগ্রহ করাও ছিল কঠিন কাজ। ইন্টারনেট, ই -মেইল বা ফ্যাক্স ছিল না। জাতীয় সংবাদ গুলো বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের খবর বিটিভি থেকে ও বিরোধী দলের খবর বিবিসি, ভয়েজ অব আমেরিকার খবর রেকর্ড করে তা শুনে সংবাদ তৈরি করে লিখে টাইপ করে কম্পোজ সেকশনে পাঠানো হতো। এছাড়া কারেন্ট নিউজ স্থানীয় বিভিন্ন উপজেলার ও বরিশাল বিভাগের খবর টেলিফোনে সংগ্রহ করা হতো। ফিচার নিউজ ডাক যোগে আসতো। রাতভর ১০/১৫ জন কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমে লেটার প্রেসে ছাপা পত্রিকা সকালে পাঠকের হাতে পৌঁছানো হতো। এমনই কঠিন চ্যালেঞ্জ ও নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পত্রিকার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে,  যা আজকের যুগে রূপকথার গল্পের মতোই অনেকটা। সেসব গল্প পেরিয়ে প্রযুক্তির কল্যাণে আজ খুব সহজেই আধুনিক উপায়ে সকালের চায়ের টেবিলে পত্রিকা পৌঁছে যাচ্ছে। পত্রিকা ছাপানোর ইতিহাস কঠিন থেকে সহজ হয়েছে। সেই সাথে সহজেই মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে বিশ্ব। তবে আশার কথা হলো নানা মাধ্যমের ভীড়ে দৈনিক পত্রিকার আবেদন আজও আগের মতোই আছে।