অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


তোমরা আমার আব্বুকে কোথায় নিয়ে যাও!


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৮ই নভেম্বর ২০২৪ বিকাল ০৫:৪৯

remove_red_eye

৩০৮

ইসরাফিল নাঈম, চরফ্যাশন প্রতিনিধি : আমারে আব্বুর ধারে যাইতে দাও। আমি আব্বুকে একটু ধরবো। ওরা তোমারে লইয়া যায় কা আব্বু গো। আমার আব্বুকে একটু দেখতে দাও। আমি আব্বুর ধারে যাবো। এখন কে দেখবে আমাদেরকে। তোমরা আমার আব্বুকে কোথায় নিয়ে যাও। বজ্রপাতে নিহত বাবার শেষ বিদায়ের খাট ধরে বাবার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলেছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক মোশারেফ হোসেন লিটন এর ১১ বছর বয়সী মেয়ে রিক্তি।
গত বুধবার নিহত লিটনের বাড়ীতে গিয়ে জানাযা হওয়ার আগ মুহুর্তে এমন চিত্র দেখা যায়। বাবার খাট ধরে কিছুক্ষণ পর পর কান্নায় ভেঙে পরেন রিক্তি। তার কান্নায় চারপাশের লোকজন ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে নিহত লিটনের মরদেহের দিকে। রিক্তির এমন আহজারিতে আকাশ-বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে। পথিমধ্যে লিটনের মৃত্যুতে পরিবারটির ওপরে নেমে আসে দুঃখের পাহাড়। এদিকে লিটনের এমন মৃত্যুতে পরিবারসহ পুরো গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। লিটনকে শেষ বারের মতো বিদায় জানাতে জানাযা নামাজে তার আতœীয়-স্বজন, সহকর্মীসহ এলাকার সকল মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
বজ্রপাতে নিহত মোশারেফ হোসেন লিটন উপজেলার শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন নসু মেলেটারীর ছেলে। লিটন দুই কন্যা সন্তানের জনক।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকালে মোশারেফ হোসেন লিটন তার পিতা মোফাজ্জল হোসেন নসু মেলেটারীকে সঙ্গে নিয়ে বসত ঘরের পাশে গরুর গোয়ালঘরে যান। বিকাল ৩টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে শুরু হয়। বাবা নসু ছেলেকে গোয়াল ঘরে রেখে একটু বাহিরে আসেন। এসময় বজ্রপাতে লিটন গুরুতর আহত হলে স্বজনরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মোফাজ্জল হোসেন নসু মেলেটারী জানান, আমরা বাবা-ছেলে দু’জনেই মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে গরুর গোয়াল ঘরে যাই। ছেলে লিটন আমাকে মসকারা করে বলে, বাবা তুমি আমার গরুগুলোকে আর খাবার দিবে না। এসময় আমি খামারের বাহিরে চলে আসি। হঠাৎকরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তার সাথে বজ্রপাতও। আমি পিছনে ফিরে দেখি আমার ছেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। আমি সাথে সাথেই সেখানে গিয়ে তার হাত আমার কাঁধে রাখি। ততক্ষনে আমি বুঝতে পেরেছি আমার বাবা আর দুনিয়াতে নেই। পরে আমার পরিবারের লোকজনসহ ছেলে লিটনকে নিয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। তিনি এসব কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ বাবা নসু।
এদিকে যখন নিহত স্বামী মোশারেফ হোসেন লিটনের শেষ বারের মতো গোসল শেষ করে জানাযার নামাজের জন্য প্রস্তুত করে খাটে রাখা হয়েছে ঠিক ওই সময়ে স্ত্রী রুজিনা বেগমকে দেখা যায় আমার দুনিয়াতে কেউ নাইগো বলেই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, মোশারেফ হোসেন লিটন পেশায় একজন দলিল লেখক ছিলেন। তার জীবদ্দশায় সে সবার সাথে সদা হাস্যেজ্জ্বল ছিলেন। সে রিক্তি (১১) ও মুনতাহা (৪) দুইজন কন্যা সন্তান রেখে গিয়েছে। বড় মেয়ে বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তাদের বাবার মৃত্যুতে দুই সন্তানের এখন ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কিভাবে চলবে আমাদের সংসার।