অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে উৎসব মুখর পরিবেশে মাছ শিকারে মেতে উঠেছে জেলেরা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ঠা নভেম্বর ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫

remove_red_eye

১৯৯

          নিষেধাজ্ঞা শেষে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা না পড়ায় দাম বেশী

হাসিব রহমান : এক দিন আগেও যে মৎস্য ঘাটগুলো ছিল শুনশান নীরবতা। আজ সকালে সেখানে ভিন্ন চিত্র। কাক ডাকা ভোর থেকেই জেলে, আড়ৎদার, পাইকারি  ও খুচরা ক্রেতা ও বিক্রেতা ভীড়ে গমগম করছে। একেরপর এক পর এক ট্রলারে করে জেলেরা মাছ নিয়ে তীরে ভীরছে।  কেউ নৌকা বা ট্রলার থেকে মাছ ঝুড়িতে তুলে ঘাটে আড়ৎদার পাইকারদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকে বিক্রি করার জন্য আড়ৎদার দের বাক্সে মাছ ঢেলে দিয়ে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে একজনের পর একজন দর তুলছে। এ দৃশ্য আজ সোমবার ভোরে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা মেঘনা নদীর তীরের ফেরিঘাট সংলগ্ন মৎস্য ঘাটে গেছে দেখা যায়। এ চিত্র শুধু ভোলা ইলিশা ঘাঁটেই নয়, তুলাতুলি, ভোলার খাল, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, মনপুরা, লালমোহন,চরফ্যাসন,ঢালচর সহ অর্ধশতাধিক ঘাটের। ঘাট সংশ্লিষ্ট কারোরই এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই।
স্থানীয় ও জেলেরা জানান, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে  উৎসব মুখর পরিবেশে জেলেরা মাছ শিকারে মেতে উঠেছে। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে রবিবার রাত ১২ টার পর থেকেই নদীতে জাল নৌকা ট্রলার নিয়ে নেমে পড়ে অসংখ্য জেলে। জেলেরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সময় তারা চরম অভাব অনটনে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্ভোগে দিন কাটিয়ে ছিলেন। তারা আশা করছেন অভিযান শেষে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লে তাদের বিগত দিনের লোকসান পুষির নিতে পারবেন । কিন্তু জেলেরা জানান, নদীতে তাদের জালে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ এখনো ধরা পড়ছে না। তাই অনেক জেলে হতাশা। তার পরও আশাআয় বুক বেঁধে রয়েছেন। জেলেরা বলছে, এদিকে বড় সাইজের ইলিশ মাছের পেটে এখন ডিম দেখা যাচ্ছে। আর যেসব মাছ ডিম ছেড়েছে। তা সাগরে চলে গেছে। তাই হয়তো সংকট। তবে ইলিশ মাছের সাথে বড় সাইজের পাঙ্গাশ ও পোয়া মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জেলে মো. মনসুর মাঝি সাংবাদিকদের জানান, তিনি ছোট ট্রলার নিয়ে ১৩০০ টাকা খরচ করে নদীতে মাছ শিকারে যান। নদীতে জাল ফেলে ৭টি জাটকা ইলিশ পেয়েছেন। ঘাটে এনে সেগুলো ৮০০টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার ৫০০টাকা লোকশান হয়েছে। সদর উপজেলার শেখ ফরিদ মাঝি, সাদ্দাম মাঝিসহ ৭-৮জন মাঝি জানান, অভিযান শেষে জেলেরা অনেক আশা নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন। আশা ছিল জালে ঝাকে ঝাকে মাছ ধরা পরবে। আর সেই মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে দার-দেনা পরিশোধ করবেন কিন্তু সেটি আর হয়ে ওঠেনি। যে মাছ পেয়েছেন তা বিক্রি করে তেলের খরচও তুলতে পারেননি।  এদিকে অভিযান শেষে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা না পাওয়ায় ভোলার মাছ ঘাটেই এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২ শত টাকা,৫/৭ গ্রামের ইলিশের কেজি ১২ থেকে ১৪/১৫ শত টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে মৎস্যজীবী আড়ৎদার পাইকারি ব্যবসায়ীরা আশা করছেন ঝাঁকে ঝাঁকে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়লে দাম কমতে পারে।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের গত ২২ দিনে ভোলার মেঘান ও তেঁতুলিয়া নদীতে ৬৭৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৪৩৪ জেলেকে আটক করা হয়েছে। ১৪৩টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আটক জেলেদের মধ্যে ২৩৪ জেলেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলা দেওয়া হয়েছে ৯২ জেলেকে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ১০৮ জেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২২ দিনের অভিযানে ২১ লাখ ৯৯৩ মিটার জাল, দুই দশমিক ৯৯১ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ, ৮৪টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৪৩টি নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে,ইলিশের প্রধান প্রজজন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার জন্য গেলো ১৩ অক্টোবর  থেকে  ২২ দিনের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাই এ অর্থ বছরে ইলিশ উৎপাদনে যে লক্ষমাত্রা তা অর্জিত হবে বলে আশা করেন  ভোলা  জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব। তিনি আরো জানান, এবছর অনেক বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং পানির চাপও বেশি আশা করছি জেলেরা কাঙ্খিত ইলিশ পাবে। ২২ দিনের যে ধার দেনা আছে সেটা কাটিয়ে ওঠে তারা পুনরায়  উজ্জীবিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অভিযান শেষে নদীতে মাছ না পাওয়ার কারন হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সাধারণত আমবশ্যা ও পূণিমার ওপর ভিত্তি করে নদীতে মাছ কম-বেশী হয়ে থাকে। গত চারদিন আগে আমবশ্যা চলে গেছে। নিয়ম হলো আমবশ্যার চার-পাঁচদিন পর থেকে এক সপ্তাহ নদীতে মাছ তেমন একটা থাকে না। আবার পূর্ণিমার আগ থেকে আবার মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও মা ইলিশ ডিম ছেড়ে সাগড়ে চলে গেছে। পূর্ণিমার আগে আবার নতুন করে সাগর থেকে মাছ নদীতে উঠে আসবে। তখন জেলের জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।  মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ অর্থ বছরে ভোলায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । ইতোমধ্যে  সেপ্টেম্বর ২০২৪ মাস পর্যন্ত ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ এ জেলায় উৎপাদন হয়েছে।





আরও...