অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকে ভোলায় ভাসমান বয়া তৈরী করে সফলতা


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ই অক্টোবর ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭:২৫

remove_red_eye

২৪৩

              সৃষ্টি হয়েছে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান

মলয় দে : হঠাৎ দেখে উটের ডিমের মতো মনে হলেও এগুলো আসলে জালের বয়া। জেলে ও বিক্রেতারা এগুলোকে বলেন পুলুট। সমুদ্রে ও নদীতে মাছ ধরার সময় জাল ভাসিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয় এসব বয়া।জেলেরা জালের ৫-১০ মিটার অন্তর অন্তর আবার কেউ কেউ তাদের সুবিধা মতো দূরত্বে এগুলো জালের সাথে বেঁধে ব্যবহার করে।এ বয়া মূলত পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দানা থেকে তৈরি করা হয়।আর এ দানা গুলো আসে ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে।প্লাস্টিকের এ দানাগুলোকে হিট দিয়ে বয়া তৈরি করার মেশিনে একপাশে ঢেলে দেয়া হয়।মেশিনের তাপে দানাগুলো গলে অন্যপ্রান্ত দিয়ে নরম হয়ে বেড়িয়ে আসে।তারপর সেটিকে কারিগররা বয়ার বিভিন্ন সাইজের ডাইজে আটকে রাখে কয়েক সেকেন্ড।পরে যখন ডাইজটি খোলা হয় তখনই দেখা মেলে তৈরিকৃত বয়ার।
উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলাটির চারদিকে নদী ও সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন বহু মানুষ। জাল-নৌকা নিয়ে হাজার হাজার জেলে প্রতিদিন নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। মাছ ধরার অন্যতম একটি সরঞ্জাম হিসেবে বয়া ব্যবহিত হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। আর তাই মাছ ধরাকে কেন্দ্র করেই উপকূলীয় এ জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বয়া তৈরির কারখানা।
ভোলা শহরের জাল ও সুতার দোকানগুলোতে এগুলো বিক্রি করা হয়।এছাড়াও নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন মাছ ঘাটের দোকানগুলোতেও বিক্রি করতে দেখা যায়।বিভিন্ন আকারে তৈরি করা হয় এ বয়া।একদম ছোট থেকে শুরু হয়ে মাঝারি ও বেশ বড় সাইজেরও তৈরি করা হয় এগুলো।সাইজের আকার ভেদে দামেরও রয়েছে ভিন্নতা। ৩ টাকা থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চো ১০ বা ১২ টাকা পর্যন্ত রয়েছে এর দাম।
এমনি একটি কারখানা ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারে সংলগ্ন এলাকায়।এ কারখানাটি ২০২১ সালে চালু করা হয়। কথা হয় এ কারখানার মালিক মনির হোসেনের সাথে।তিনি জানান,একসময় এ বয়া ভোলায় তৈরি হতো না।অন্য জেলা থেকে আনা হতো এ সকল বয়া।যেহেতু ভোলায় অনেক জেলে আর এর চাহিদা ও রয়েছে।সে চিন্তা থেকেই এ ব্যবসার সূচনা তার।এমন উদ্যোগে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।এ কারখানায় ৫-৬ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
তিনি জানান,এ বয়া তৈরির ব্যবসা টি নদীতে মাছ কম বেশী পড়ার উপর উপর নির্ভর করে চলে।বছরে ৩ মাস চলে এ কারখানা বাকি ৯ মাসই বন্ধ থাকে।এখানে বয়া মূলত অর্ডারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।যদি সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের মাঝে এ বয়াগুলো দেয়া হতো তাহলে হয়তো তাদের এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি আরো ভালো ভাবে চালানো যেত বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো জানান,শুরুতে এ ব্যবসা ভালোই চলতে।এখন এমন কারখানা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠায় একটু চাহিদা কমেছে।তবে এর পরেও সব মিলিয়ে ভালো আছেন বলে জানান এ উদ্যোক্তা।
এদিকে কথা হয় এ কারখানার শ্রমিকদের সাথে।তারা জানান,এখানে প্রত্যেকে প্রতিদিন ৭০০-৯০০ পিচ বয়া তৈরি করেন।সাইজের উপর তাদের পিচ প্রতি মজুরি দেয়া হয়।ছোট আকৃতির একটি বয়া তৈরি করলে তারা পাচ্ছেন ১ টাকা করে।আবার তার থেকে একটু বড় সাইজের হলে ১.২০ পয়সা করে পান।এতে প্রতিমাসে গড়ে ১৮ -২০ হাজার টাকা উপার্জন করেন তারা। বছরে ৩ মাস বয়া তৈরির কাজ করেন তারা।বাকী সময় অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ শ্রমিকেরা।এর পরেও সব মিলিয়ে ভালো আছেন বলে জানান তারা।

এ কারখানার আরেক শ্রমিক জানান,এ কারখানায় এখন সপ্তাহে গড়ে ৫ হাজার বয়া বাজারজাত কার হয়।এতে মাসে হয় ২০ হাজার। প্রতিপিচ যদি গড়ে ৮ টাকা করে ধরা হয় তাহলে দেখা যায় এ কারখানা থেকে প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখ টাকার বয়া বিক্রি করা হয়।বয়া বাজারজাত করার ঝামেলাও তেমন নেই।পাইকাররা এ কারখানা থেকে এসে অটোরিকশায় বয়া তুলে দোকানে নিয়ে যায়।

ওয়েস্টেজ প্লাস্টিক থেকে দানা তৈরির করার জন্য অনেক যত্ন করে প্লাস্টিক গুলোকে বাছাই করা হয়।আর বাছাই করার কাজ করেন এখানকার এক মহিলা শ্রমিক।তিনি বলেন,এখানে তিনি ২ মাস ধরে কাজ করছেন।৪ হাজার টাকা মাসিক মজুরি তাকে দেয়া হয়। এছাড়াও আরো ৫০ টাকা করে প্রতিদিন বেতনের বাহিরেও পান। আর এতেই তিনি সন্তুষ্ট।

কথা হয় এখানকার সর্ব কনিষ্ঠ শ্রমিকের সাথে।যার কাজ হচ্ছে তৈরিকৃত বয়াগুলোকে ৫০  পিচ করে সুতা দিয়ে বেঁধে বান্ডিলে রূপ দেয়া।প্রতিদিন সে ২০ থেকে ৩০ বান্ডিল বাঁধে।এবং সেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।এখান থেকে যে মজুরী পান এতে তার পরিবার পরিজন নিয়ে খুব ভালো থাকার কথা জানান তিনি।

ভাসমান বয়া মূলত কি কাজে ব্যবহার করে এ নিয়ে কথা হয় এক জেলের সাথে তিনি জানান,এগুলো মূলত পানিতে জাল ভাসিয়ে রাখতে সহায়তা করে।পাশাপাশি জাল সনাক্ত করনেও এগুলো কাজ করে।এগুলো অনেক সহজলভ্য ও দামেও সাশ্রয়ী বলে জানান তিনি।

উপকূলীয় এলাকা ও মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বয়া তৈরির কারখানাগুলো যেমন দেশের বা অঞ্চলভেদে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।তেমনি এলাকার বেকারত্ব দূরীকরণেও কাজ করে যাচ্ছে।এমন আরো প্রতিষ্ঠান তৈরি হলে যেমন বেকারত্ব কমে আসবে তেমনি সচল হবে দেশের অর্থনৈতিক চাকা।তাই এলাকাভিত্তিক এমন কারখানা আরো গড়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।





আরও...