বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩রা আগস্ট ২০২৪ বিকাল ০৫:২৮
৩৩২
মোঃ মহিউদ্দিন : আজীবন বিপ্লবী শ্রী নলিনী দাস ভারত উপমহাদেশের এক কিংবদন্তীর নায়ক। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নির্ভীক সৈনিক, স্বদেশবাসীর রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পরিচালিত সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম নেতা, সকল সামাজিক অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ জনগণের নিকটজন নলিনী দাস ১৯১০ সালে ১লা জানুয়ারি বরিশাল জিলার উত্তর সাহাবাজপুরে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকাল হতে, ভোলাতেই লালিত-পালিত ও বড় হন। পিতা দূর্গামোহন স্থানীয় জমিদারী এন্টেরের নায়েব ছিলেন। শিক্ষা জীবন ভোলাতেই শুরু হয়। ১৯২১ সালে কংগ্রেস ও খেলাফত কমিটির আহবানে হরতাল ও ধর্মঘটে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র নলিনী দাসও অংশগ্রহণ করেন। এ কারণে ভোলাতে যে ৫ জন ছাত্র গ্রেফতার হয় তিনি তাদের অন্যতম। জীবনে এই প্রথম কারাবরণ। ভোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯২৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বরিশাল বি এম কলেজে আই এসসিতে ভর্তি হন। বরিশালে তৎকালে তিনি একজন কৃতি ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্বেও আইএসসি পরীক্ষার পূর্বেই কলকাতা মেছুয়া বাজার বোমার মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। শুরু হয় তাঁর পলাতক জীবন।
পলাতক অবস্থায় ১৯৩০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে কলিকাতার পুলিশ কমিশনার টেগার্ট সাহেবকে হত্যার প্রচেস্টা মামলায় তিনি খালাস পেলেন, কিন্তু তৎকালীন সরকার তাঁকে ডেটিনিউ করে প্রেসিডেন্সি জেলে প্রেরণ করে। ১৯৩১ সালে তাঁকে হিজলী ক্যাম্পে পাঠানো হয় ঐ ক্যাম্পেই ১৯৩১ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর রাজবন্দীদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিতে কলিকাতার সন্তোষ মিত্র ও বরিশালের তারকেশ্বর সেন গুপ্ত নিহত হন। বহু রাজবন্দী আহত হন। ঐ সালের ডিসেম্বর মাসে নলিনী দাস ও ফনী দাশ গুপ্ত হিজলী জেলকাশি হতে পলায়ন করেন। আবার পলাতক জীবন। ১৯৩২ সালে ফরাসী অধিকৃত চন্দননগরের দিনের বেলায় তিনি যে বাড়িতে ছিলেন, পুলিশ ঘেরাও করে। সে বাড়িতে তখন তিনি ছাড়া আর দুইজন বিপ্লবী ছিলেন। দীনেশ মজুমদার, যিনি টেগার্ট হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় কারাগার হতে পলাতক ও ওয়াটসন হত্যা প্রচেস্টা মামলার আসামী বীরেন রায়। মাত্র এই তিনজন বঙ্গবীরের সহিত চন্দননগরের রাস্তায় সেদিন ৪ ঘন্টাব্যাপী পুলিশের গোলাগুলি চলে। বীরেন রায় প্রথমেই গ্রেপ্তার হন। উক্ত খন্ডযুদ্ধে চন্দননগর পুলিশ কমিশনার কিউ সাহেব নিহত হন। অনেক পুলিশ আহত হয়। শেষ পর্যন্ত আহত অবস্থায় নলিনী দাস ও দীনেশ মজুমদার পালাতে সক্ষম হন।
চন্দননগরের ঘটনার পর কলিকাতার কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটে বিপ্লবী কর্মী নারায়ণ ব্যানাজীর তত্ত¡াবধানে দীনেশ মজুমদার, নলিনী দাস ও জগদানন্দ মুখার্জী আশ্রয় গ্রহণ করেন। ২২.৫.৩৩ তারিখে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ১টায় ঐ বাড়ী ঘেরাও করে। বিপ্লবীদের আবার পুলিশের সাথে খÐযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। যুদ্ধে ডি এস পি পোলার্ড এবং ডি আই বি'র ইন্সপেক্টর মুকুন্দ ভট্টাচার্য আহত হন। বিপ্লবীরা আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। মামলায় দীনেশ মজুমদারের ফাঁসী হয় এবং নলিনী দাস ও জগদানন্দ মুখার্জীকে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দন্ড দিয়ে ১৯৩৪ সালের মে মাসে আন্দামানে প্রেরণ করা হয়।আন্দামানের সেলুলার জেল। ব্রিটিশ ভারতের নিকৃষ্টতম জেল। সেখানে রাজবন্দীদের মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হতো। পশুর খাদ্য খেয়ে তাঁদের বাঁচতে হতো। শুরু হলো সেখানে এক প্রতিরোধের আন্দোলন। বারবার অনশন ও ৩ জন বন্দীর অনশনে মৃত্যুবরণ রাজবন্দীদের জীবনে নিয়ে এলো কিছু স্বাচ্ছন্দ্য। বিপ্লবী বন্দীরা পড়াশুনার কিছুটা সুয়োগ পেলেন। 'বিপ্লবী বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপন করে তাঁরাপড়াশুনায় গভীর আত্মনিয়োগ করলেন। এই সময়ই নলিনী দাস আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশংকায় দেশে ফিরে আসার জন্য বন্দীরা কারান্তরালেই আবার আমরণ অনশন শুরু করেন। তার সমর্থকেরা ভারতব্যাপী আন্দোলনের চাপের মুখে ব্রিটিশ সরকার রাজবন্দীদের দেশে ফিরিয়ে আনে। ১৯৩৮ সলের ১৯শে জানুয়ারী নলিনী দাসকে কলিকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯৩৮ সাল হতে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বহু রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু নলিনী দাস সহ ৩০ জন রাজবন্দীকে 'ভয়ানক বিপ্লবী" রূপে চিহ্নিত করে সরকার আটক রাখে। আলীপুর, দমদম, প্রেসিডেন্সি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁদেরকে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৪৬ সালে কলিকাতায় নৃশংস সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় বিক্ষুব্ধ নলিনী দাস জেলে বসেই সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেন। কমিউনিস্ট পার্টি ও অন্যান্য বামপন্থী সংগঠনগুলো তখন এই সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে এক ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। অবশেষে ১৯৪৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নলিনী দাসকে ব্রিটিশ সরকার মুক্তি দেয়। মুক্তি পেয়েই নলিনী দাস ও তাঁর বন্ধুরা বর্বর সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ঝাঁপিয়ে পড়েন। জীবনকে বাজি রেখে তাঁরা সকল দাঙ্গা উপদ্রæত এলাকায় ঘুরে ঘুরে দাঙ্গার প্রতিরোধ কমিটি গঠন করলেন। এ কাজেও তাঁদের বহু বন্ধুকে জীবন দিতে হলো। ভোলাতে পার্টি খুবই দুর্বল, তা সত্তে¡ও মুক্তির পর নলিনী দাস ভোলাতে জনগণের যে অভ্যর্থনা পেয়েছেন তা ভোলাবাসীর চিরদিন মনে থাকবে। দেশ বিভাগের কয়েকদিনের ভিতরই মুসলিম লীগ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে আবার প্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। ১৯৫০ সালের নৃশংস সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালে নলিনী দাস ও তাঁর রাজনৈতিক বন্ধুরা বাবুগঞ্জ থানায় রাকুদিয়া গ্রামের কৃষক নেতা নজুমদ্দিন ফরাজীর বাড়িতে কৃষকদের নিয়ে সভা করছিলেন। একদল দাঙ্গাকারী সে বাড়িতে চড়াও হয় (১৬-২-১৯৫০)। ফরাজী সাহেব রুখে দাঁড়ালেন, 'আমাকে খুন না করে আমার বন্ধুদের খুন করা যাবেনা'। সে বাড়ির ছেলেমেয়ে ও মুসলমান কৃষক দাঙ্গার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। কিছুতেই যখন দাঙ্গাকারীদের ফেরানো যাচ্ছেনা তখন মূলতঃ নলিনী দাসের উপস্থিত বুদ্ধিতে তাদের বোঝানো হলো 'এদের মেরে আর কি হবে? পুলিশের নিকট ধরিয়ে দাও, পুরস্কার পাবে'। চরম আহত অবস্থায় নলিনী দাস, হীরেন ভট্টাচার্য্য (যিনি উজিরপুর স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন), জিতেন মিস্ত্রিসহ নজুমদ্দিন ফরাজী প্রভৃতি লোকদের পুলিশের নিকট সমর্পণ করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ঐ মামলায় নলিনী দাসের ১০ বছর কারাদন্ড দেয়া হয়। পরে হাইকোর্ট তাদের মুক্তি দেয়।
জেল গেটে পুনরায় তাঁকে প্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৫ সলের শেষের দিকে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা তাকে মুক্তি দেয়। ১৯৫৯ সালে আইয়ুর খানের ক্ষমতা দখল ও সামরিক আইন জারির পর তিনি পুনরায় পলাতক হন। তৎকালীন সরকার তাঁর বিরুদ্ধে হুশিয়া জারি করে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত তিনি পলাতক জীবন যাপন করেন। কতবার তাঁকে পুলিশ ঘেরাও করেছে। কিভাবে তিনি তাদের চোখে ধূলা দিয়ে ঘুরে ঘুরে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত করেছেন তা আমাদের নিকট এক চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয় কাহিনী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সরাসরি রণাঙ্গনে ছিলেন, বক্ষ্যমান ছবিতেই তা প্রমানিত।
ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, কৃষক মজুরদের বিভিন্ন অর্থনৈতিক আন্দোলনে তিনি জনগণের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন। আমরা ভোলাবাসী সকলেই জানি, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বন্যা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি আমাদের পাশেই ছিলেন। তিনি আমাদের কল্যাণের জন্য তার সমন্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দুর্গামোহন দাস (তাঁর পিতা) জনকল্যাণ ট্রাস্টের নিকট দান করেছেন। তাঁর ৭০ বছর জীবনের প্রায় ২৩ বছর আন্দামান, ব্রিটিশ ভারতীয় জেলে ও পানিয়াদের জেলে কেটেছে। ২০ বছর ৯ মাসে কেটেছে পলাতক জীবনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায়, যার কিছু পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর লেখা 'স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বীপান্তরের বন্দী বইতে।
(দুর্গামোহন দাস জনকল্যাণ ট্রাস্ট-এর পক্ষ থেকে কমরেড মমতাজ উদ্দিন, আবুয়াল ফারাহ মোল্লা ও শান্তি রঞ্জন বিশ্বাস কর্তৃক লিখিত। রচনাকালে নলিনী দাস (১৯৮১
নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঘনিষ্ঠতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছি: মির্জা ফখরুল
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে অস্থিতিশীলতা বাড়বে: রয়টার্সকে মঈন খান
চাঁদ দেখা গেছে, ঈদ সোমবার
বোরহানউদ্দিনে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় সেরাদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার পেলেন তজুমদ্দিনের শহীদ পরিবার
ভোলা পৌরসভার ট্যাক্স কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান রিপন আর নেই
নির্বাচনে বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে : সামান্তা শারমিন
ভোলায় ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেঘনা নদীতে কোস্টগার্ডের টহল
ভোলায় শিবপুর জামায়াতের পক্ষ থেকে দরিদ্রদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ
ভোলায় পাঁচ সন্তানের জননীকে গলা কেটে হত্যা
ভোলার ৪৩ এলাকা রেড জোন চিহ্নিত: আসছে লকডাউনের ঘোষনা
ভোলায় বিষের বোতল নিয়ে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকা
ভোলায় বাবা-মেয়ে করোনায় আক্রান্ত, ৪৫ বাড়ি লকডাউন
উৎসবের ঋতু হেমন্ত কাল
ভোলায় এবার কলেজ ছাত্র হত্যা, মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার
ভোলায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন করোনা রোগী: এলাকায় আতংক
ভোলায় কুপিয়ে হত্যা করে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক এক
ভোলার চরফ্যাশনে করোনা উপর্সগ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু
ভোলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত