অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


তজুমদ্দিনে হরিণ শাবক শশীর বাবা-মা সবই নূরউল্ল্যাহ


তজুমদ্দিন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২শে জুন ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫

remove_red_eye

৩২৪

বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক : লায় বন বিভাগের বোর্ডম্যান নূরউল্ল্যাহর আদর ও ভালোবাসায় বড় হয়ে উঠছে একটি হরিণ শাবক। হরিণ শাবকটির মা-বাবা এখন নূরউল্ল্যাহই। তার নাম দেওয়া হয়েছে শশী। নাম ধরে ডাকলেই শশী ছুটে যাচ্ছে সবার কাছে।

প্রায় সাড়ে ৫ মাস বয়সী হরিণটি বর্তমানে মানুষের সব খাবার খায়। হরিণটিকে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

হরিণ শাবক শশীর বাবা-মা সবই নূরউল্ল্যাহ

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ বিটের বোর্ডম্যান নূরউল্ল্যাহ জানান, ৩০ জানুয়ারি সকালের দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর মোজ্জাম্মেল গ্রামের হানু দালাল বাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় খাবারের সন্ধানে ছুটে আসে একটি মা হরিণ। এ সময় হরিণটি একটি শাবক জন্ম দেয়। ওইদিনই দুপুরের দিকে স্থানীয়দের আনাগোনার শব্দ শুনে শাবকটিকে রেখে পালিয়ে যায় মা হরিণটি।

 

এরপর স্থানীয়রা বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানালে ওই ইউপি চেয়ারম্যান বন বিভাগকে খবর দেন। পরে খবর পেয়ে নূরউল্ল্যাহসহ বন বিভাগের ৪-৫ জন রাতে চর মোজ্জাম্মেল থেকে উদ্ধার করে শশীগঞ্জ বিটে নিয়ে আসেন। এরপর হরিণটিকে লালন-পালন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরম যত্নে হরিণটিতে লালন-পালন করতে শুরু করেন তিনি। শাবকটির নাম দেন শশী।

হরিণ শাবক শশীর বাবা-মা সবই নূরউল্ল্যাহ

তিনি আরও জানান, প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত হরিণ শাবকটিকে দৈনিক দেড় লিটার করে গরুর দুধ খাওয়ান। পরে আস্তে আস্তে তাকে ভাতের মাড়, ঘাঁস খাওয়াতে শুরু করেন। বর্তমানে হরিণটি ঘাঁসের পাশাপাশি নূরুউল্ল্যাহর সঙ্গে ভাত, নুডুস, সেমাই, মুড়ি-চানাচুর, চাসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের খাবার খায়।

 

নূরউল্ল্যাহ বলেন, যেখানে যাই হরিণ শাবকটিও আমার পিছু পিছু দৌঁড়ে যায়। ঘুমাতে গেলে সেও আমার বিছানায় উঠে পাশে বসে থাকে।

চাকরি জীবনের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে শশীকে পেয়ে নূরউল্ল্যাহ যেন তার পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা ভুলে গেছেন। তবে মায়ায় কষ্ট হলেও নিয়ম অনুযায়ী হরিণ শাবকটিকে বনে অবমুক্ত করতে হবে বলে জানান তিনি।

হরিণ শাবক শশীর বাবা-মা সবই নূরউল্ল্যাহ

চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সহিদুল্ল্যাহ কিরণ জানান, ৩০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে তাকে চর মোজ্জাম্মেল থেকে স্থানীয়রা একটি হরিণ শাবক উদ্ধারের খবর দেন। পরে তিনি বন বিভাগে খবর দেন। এছাড়াও বন বিভাগের লোকজন যতক্ষণ পর্যন্ত না যাবে ততক্ষণ স্থানীয়দের হরিণটি যত্নে রাখতে অনুরোধ করেন।

তিনি আরও জানান, হরিণ শাবকটি এখন অনেক ভালো আছে ও সুস্থ আছে। হরিণটিকে এক নজর দেখতে মাঝে-মধ্যে ছুটে যান শশীগঞ্জ বিট কর্মকর্তার অফিসেও।

তজুমদ্দিন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোহেল, মাসুম বিল্লাহ, মো. লোকমান হোসেন ও মো. হাবিব জানান, শশী নামে হরিণ শাবকটি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকার বন বিভাগের বিট কর্মকর্তার অফিসে পালিত হচ্ছে। এলাকার মানুষসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন হরিণ শাবকটি এক নজর দেখতে ভিড় করেন। হরিণ শাবকটিকে শশী নাম ধরে ডাক দিলে সবার কাছে ছুটে আসে। সবাই হরিণটির সঙ্গে আনন্দে সময় কাটান। আর হরিণটি মানুষের আদর ও ভালোবাসায় মুগ্ধ।

শশীগঞ্জ বিটের কর্মকর্তা গাজী আবুল বাশার জানান, হরিণ শাবকটি অনেক ভালো আছে ও সুস্থ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আসা মাত্রই দ্রুত গভীর বনে হরিণ শাবকটি অবমুক্ত করা হবে।