অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭ই পৌষ ১৪৩২


পরোক্ষ কর নির্ভর কাঠামো বৈষম্য তৈরি করেছে


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ঠা জুন ২০২৪ সন্ধ্যা ০৭:২০

remove_red_eye

৩৩১

সাধারণ মানুষের জীবন যাপনে বাধ্যতামূলকভাবে বর্তায় পরোক্ষ কর। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সেবা ক্রয়ের মাধ্যমে এই কর দিতে হয়।

স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে প্রান্তিক মানুষ, এমন কি ভিক্ষুকের ওপর পর্যন্ত জগদ্দল পাথরের মতো ভর করে আছে পরোক্ষ করা, যা রাজস্ব কাঠামোতে দুই-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ কর, যা আয় ও ভ্রমণের বিপরীতে দিতে হয়; কর কাঠামোতে এক-তৃতীয়াংশ আয় আসে সেই প্রত্যক্ষ কর থেকে।

 

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পরোক্ষ কর আদায় করা তুলনামূলক সহজ। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ করদাতারা তুলনামূলক সামর্থ্যবান মানুষের কাছে থেকে আসে। প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে গেলেই আলাপ-আলোচনা করে বাড়ানোর পরিবর্তে বরং কমিয়ে দেওয়া হয়। আবার আদায় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানুষরাও লাভবান হন। যে কারণে বছরের পর পর প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর কথা বললেও বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এর ফলে বৈষম্য আরও বাড়ছে।

জাতীয় জাতীয় বোর্ডের রাজস্ব কাঠামোতে আয়কর ও ভ্রমণ করই হলো প্রত্যক্ষ কর, যা মোট রাজস্বের এক তৃতীয়াংশ এবং সরাসরি আদায় করা হয়। এই করকে প্রগতিশীল করও বলা হয়। আয় বৃদ্ধির সাথে বাড়ে করও।

অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক, আমদানি পর্যায়ে মূল্যসংযোজন বা ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট ও শুল্ক এবং টার্নওভার ট্যাক্স হলো পরোক্ষ কর। যা ব্যবসায়ীদের উপর বসানো হলেও চূড়ান্তভাবে ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়ে। একটি ভোগ্যপণ্যের ওপর পরোক্ষ করা বসানোর পর কোটিপতিকে যা দিতে হয়, প্রান্তিক মানুষকেও সমানভাবে তা দিতে হয়। এ করকে অন্যায্য কর বলা হয়, যা দেশের কর কাঠামোতে দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ  করা মোট রাজস্বের ৩৪ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর, আর পরোক্ষ কর ছিল ৬৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ছিল ৩১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পরোক্ষ কর ছিল ৬৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩০ দশমিক ৮১ শতাংশ, আর পরোক্ষ কর ৬৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আহরণ করা মোট রাজস্বের প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৩ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক  ৯০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, পরোক্ষ কর ৬৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে আহরিত মোট রাজস্বের প্রত্যক্ষ কর ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ আর পরোক্ষ কর আহরিত হয়েছে ৬৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ধনীদের সুবিধা দেওয়ার কর কাঠামো
পরোক্ষ করাঘাত নজিরবিহীন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশেই শুধু পরোক্ষ কর বেশি; পৃথিবীর সব দেশে প্রত্যক্ষ কর বেশি। প্রত্যক্ষ কর বাড়তে থাকে, যার যেমন আয় বা সম্পদ বেশি সে তত বেশি কর দেয়। যার কম আয় সে কম কর দিয়ে থাকে। সব দেশেই প্রত্যক্ষ কর বাড়ে ‘ইক্যুইটি প্রিন্সিপাল‘ হিসাবে। যার দশ লাখ টাকা আয় সে যদি ১০ শতাংশ হারে কর দেয়, যার ৫০ কোটি টাকা আয় স্ল্যাব অনুযায়ী তার ট্যাক্স উঠবে ৫০ শতাংশে। বাংলাদেশ একটি অদ্ভুত দেশ। বড়লোকের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য কর কাঠামোতে পরোক্ষ করই দুই-তৃতীয়াংশ, যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়।

তিনি বলেন, রুটির ওপরে ভ্যাট; বড়লোক যে দামে রুটি কেনে, গরিব মানুষও সেই দামে রুটি কেনে। এটা কেমন কথা! সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য পণ্য ও সেবায় ট্যাক্স কম থাকবে। বাংলাদেশে এমন কোনো পণ্য নেই যেখানে ট্যাক্স নেই। এ ধরনের ট্যাক্স আদায় এনবিআর-এর কাছে খুব সহজ হয়। পরোক্ষ কর আদায়ে কষ্ট করতে হয় না। আর প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে এনবিআরকে কষ্ট করতে হয়, সিস্টেম ডেভেলপ করতে হয়। বরং নেগোশিয়েন করে আরও কম কর দেয় ধনীরা। আবার এ ট্যাক্স পুরোপুরি সরকারের কাছে যায় না।

পরামর্শ দিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। ট্যাক্স লিকেজ কমাতে হবে এবং করের পরিধি বাড়াতে হবে। দেশে মাত্র কয়েক লাখ মানুষ কর দেয়। যে কারণে ট্যাক্স–জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশের নিচে হয়। এটা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। নেপালের মতো দেশে ট্যাক্স-জিডিপি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জেলা-উপজেলা শহরগুলোতে অনেক ব্যবসায়ী আছেন, অনেক ট্যাক্স দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন মানুষের বসবাস আছে। খোঁজ নিরে দেখা যাবে তারা ট্যাক্স দেন না। আবার কিছু মানুষের টিআইএন আছে, এদের বড় অংশ ট্যাক্স দেয় না। এসব লিকেজ বন্ধ করতে পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি পাবে।

ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো উন্নত দেশে প্রত্যক্ষ কর ৬০ শতাংশ। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব কিছু সরকার ব্যবস্থা করে থাকে। আর আমাদের এখানে এসবের কিছুই করবে না। চিকিৎসা নিতে হলে বেসরকারি খাতে টাকা খরচ করতে হবে। শিক্ষা নেবেন? বেসরকারি খাতে বেশি টাকা খরচ করে নিতে হবে। পাবলিক সার্ভিস ভালো না, প্রাইভেট সার্ভিস নিতে হবে। এটা কোনো নীতি হতে পারে না। এটা তো আর্থসামাজিক উন্নয়নের সম্পূর্ণ পরিপন্থি, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

বৈষম্য কমাতে পরোক্ষ কর হ্রাস ও প্রত্যক্ষ বাড়াতে হবে
পরোক্ষ করে সাধারণ মানুষের ওপরই বেশি চাপ পড়ে। দেশে বৈষম্য কমাতে পরোক্ষ করের পরিমাণ কমানো ও প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়ানোর মতামত দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকেই এই মতামত দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে একেবাই তা আসছে না। পরোক্ষ কর কমানোর জন্য এখন আমাদের সামনে যে পথটি তা হলো, আগে প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ কর দিতে চায় না। দেশে আয়কর খুবই কম, মাত্র কয়েক লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা দেয়।

তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, দেশে এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা আমাদের মতো চাকরিজীবীর চেয়ে কম কর দেন। অনেকে দেনই না। তাদের সঠিকভাবে করের আওতায় আনতে হবে। এভাবে আমাদের প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। আর আস্তে আস্তে পরোক্ষ কর কমাতে হবে। তাহলে কর অন্যায্যতার যে বিষয়টি আছে তা কমে আসবে।





বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ভোলার বিএনপি নেতাকর্মীরা কোরআন তেলাওয়াত দোয়া

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ ভোলার বিএনপি নেতাকর্মীরা কোরআন তেলাওয়াত দোয়া

ভোলায় স্কুল ছাত্রদের ভলিবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠিত

ভোলায় স্কুল ছাত্রদের ভলিবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠিত

ভোলায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ বিষয়ক জেলা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

ভোলায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগ বিষয়ক জেলা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মনপুরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুইজন গ্রেপ্তার

মনপুরায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুইজন গ্রেপ্তার

ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক

ভোলা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: কাঁদছে বাংলাদেশ

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: কাঁদছে বাংলাদেশ

৫১টি দল মনোনয়ন জমা দিয়েছে: ইসি

৫১টি দল মনোনয়ন জমা দিয়েছে: ইসি

আরও...