অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৫ই পৌষ ১৪৩২


ফিলিপাইনে ৭.৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩রা ডিসেম্বর ২০২৩ বিকাল ০৫:১১

remove_red_eye

২৫৯

দক্ষিণ ফিলিপাইনে শনিবার একটি শক্তিশালী ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এখবর জানায়। এরপর সেখানে পরপর চারটি বড় আফটারশক ভূকম্পন হয়েছে। এতে সুনামির সতর্কতা জারি করে পরে তা তুলে নেয় হয়। সতর্কতা তুলে নেওয়ার আগে পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা থেকে বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে বেইজিং থেকে সিনহুয়া আজ জানায়, রোববার গ্রীনিচ মান সময় ০২৩৯ টায় ইন্দোনেশিয়ার মালাকু প্রদেশের বৃহত্তম দ্বীপ সেরামে ৫.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।  
জিএফজেড জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এবং ভূমিকেন্দ্রটি প্রাথমিকভাবে ২.৭৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ১২৯.৫৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নির্ধারণ করা হয়।
 ইউএসজিএস জানিয়েছে, ফিলিপাইনে প্রাথমিক ভূমিকম্পটি মিন্দানাও দ্বীপের হিনাতুয়ান পৌরসভা থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে স্থানীয় সময় গতরাত ১০:৩৭ মিনিটে (১৪৩৭ জিএমটি) দেশটির উপকূলে ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) গভীরতায় আঘাত হানে।
ইউএসজিএস জানায়, রোববারের প্রথম দিকে, কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে, ৬.৪; ৬.২; ৬.১ এবং ৬.০ মাত্রার চারটি শক্তিশালী আফটারশক এই অঞ্চল জুড়ে ভূকম্পন সৃষ্টি করে।
প্রাথমিক ভূমিকম্পটিতে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়, পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে এবং উত্তর-পূর্ব মিন্দানাওয়ের বাসিন্দাদের ভবন ছেড়ে পালিয়ে যেতে, একটি হাসপাতাল খালি করে উঁচু ভূমির সন্ধানে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ফিলিপাইন ইনস্টিটিউট অফ ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি এক্স-এ বলেছে, ‘প্রাণঘাতী তরঙ্গ উচ্চতার সাথে ধ্বংসাত্মক সুনামির আশঙ্কা ছিল।’
হাওয়াইয়ের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্রও সতর্কতা জারি করে কিন্তু পরে পোস্ট করেছে যে বিপদ কেটে গেছে।
পরে সতর্ক বার্তায় জানানো হয়, ‘এই ভূমিকম্প থেকে আর সুনামির হুমকি নেই।’
ফিলিপাইন সিসমোলজি ইনস্টিটিউট স্থানীয় সময় গত রাত ৩:২৩ টায় (১৯২৩ জিএমটি) একটি বুলেটিনে বলেছে, ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সর্বোচ্চ তরঙ্গগুলো মাওয়েস দ্বীপে .৬৪ মিটার (২৫ ইঞ্চি) দীর্ঘ ছিল, তবে সুনামির সতর্কতা শেষ হয়ে গেছে।
সুনামির সতর্কতা জাপানের পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল পর্যন্ত কার্যকর ছিল, কিছু এলাকায় ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট ঢেউ দেখা গেছে।
মিন্দানাও থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার (৫৬০ মাইল) দূরে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ পালাউ-এ এর কোন প্রভাব পড়েনি বলে খবর দিয়েছে।
হিনাতুয়ান পুলিশ সার্জেন্ট জোসেফ ল্যাম্বো বলেছেন, ভূমিকম্পটি ‘খুব শক্তিশালী’ ছিল তবে হতাহতের বা বড় ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর নেই।
ল্যাম্বো এএফপিকে বলেন, ‘পুলিশ অফিসের তাক থেকে যন্ত্রপাতি পড়ে যায় এবং দুটি টিভি সেট ভেঙে যায়। বাইরে পার্ক করা মোটরসাইকেলও ভেঙে পড়ে।’
ল্যাম্বো বলেন, পৌরসভার ৪৫,০০০ বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং অনেকেই পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে উচ্চ ভূমিতে যাচ্ছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এবং এএফপি’র যাচাইকৃত একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে যে, কর্মচারীরা বাইরে পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একটি দোকানে পানীয়ের বোতল এবং অন্যান্য পণ্য তাক থেকে পড়ে গেছে।
ডেনিস ওরং-এর তোলা আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকেরা সুরিগাও দেল সুরের উপকূলীয় পৌরসভা লিয়াঙ্গার একটি রাস্তায় দৌড়ানোর সময় চিৎকার করছে।
২৬ বছর বয়সী হেয়ারড্রেসার এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি ভয়ে কাঁপছিলাম, প্রধানত বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বিস্ফোরণের কারণে।’
পুলিশ মাস্টার সার্জেন্ট রবার্ট কুয়েসাদা বলেছেন, হিনাতুয়ানের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে লিঙ্গিগ পৌরসভায় সুনামির আঘাতের সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টগুলো ‘ভুয়া খবর’ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভাটার মধ্যে আছি, ভূমিকম্পের সময় সমুদ্রে ভাটা ছিল’।
ভূমিকম্পের ‘পরপরই উপকূল থেকে লোকেদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে কতজন তা বলতে পারছি না, তবে প্রায় পুরো শহরটি উপকূল বরাবর রয়েছে।’
ভূমিকম্পের সময় বেথানি ভ্যালেডোরসহ অনেকেই ঘুমিয়ে ছিলেন।
হিনাতুয়ানের প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে তিনি যে রিসোর্টে থাকতেন সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ২৪ বছর বয়সী ভ্যালেডোর এএফপিকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল যে আমরা যে ঘরে থাকছি সেটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
‘আমাদের জায়গাটা সমুদ্রের খুব কাছে। রিসোর্টের মালিক আমাদের অবিলম্বে সরে যেতে বলেছেন। সত্যি বলছি, আমি চিৎকার করছিলাম। আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম।’
হিনাতুয়ানের উত্তর-পশ্চিমে বুটুয়ান সিটিতে, অর্ডারলিরা রোগীদের গার্নিতে এবং হুইলচেয়ারে একটি হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়েছিল, তাদের ড্রিপ এবং আইভি ব্যাগগুলো সাপোর্ট স্ট্যান্ড থেকে ঝুলছে।
মিন্দানাওতে একটি ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ভূমিকম্পটি ঘটে, এতে কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়, ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং একটি শপিং মলের ছাদের কিছু অংশ ধসে পড়ে।
ফিলিপাইনে কম্পন একটি নিত্যদিনের ঘটনা, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অফ ফায়ার’ বরাবর অবস্থিত। তীব্র ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়েগিরির চাপ জাপান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অববাহিকা জুড়ে বিস্তৃত।

সুত্র বাসস





আরও...