অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, বৃহঃস্পতিবার, ৩১শে অক্টোবর ২০২৪ | ১৬ই কার্তিক ১৪৩১


কার হাতে উঠবে এবারের বিশ্বকাপ?


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ই অক্টোবর ২০২৩ সন্ধ্যা ০৬:২৮

remove_red_eye

১৪২

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এবারের আসরে দলের সংখ্যা ১০। আর প্রতিযোগিতার ফরম্যাটটা লম্বা হলেও বেশ সহজ। প্রথমে সবগুলো দল একে অপরের মুখোমুখি হবে, অর্থাৎ রাউন্ড রবিন লিগ। তারপর সরাসরি নক আউট পর্ব। অর্থ্যাৎ সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।

রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে বড় দলগুলোর জন্য সুবিধার। অসুবিধা ছোটো দলগুলোর জন্য। সুবিধার বিষয় হচ্ছে- কোনো একটা দিন কোনো এক দলের খারাপ সময় যেতেই পারে। অর্থাৎ ছোটো দলের বিপক্ষে হারতেও পারে।

১০ দলের রাউন্ড রবিন লিগ যখন হয় তখন একটা অঘটন ঘটলেও তা সামাল দেওয়ার সময় পাওয়া যায়; কিন্তু তিন বা চার দল নিয়ে গ্রুপ পর্ব হলে সেখানে একটা অঘটনের পর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছিলো। সে বিচারে ছোটো দলের এবারের বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। অর্থাৎ শিরোপা দৌড়ে বড় দলগুলোরই আধিপত্য থাকার সম্ভাবনা বেশি।

যে কারণে ছোট দলগুলো বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাব্য আলোচনায় স্থান পাচ্ছে না। বরং সে আলোচনায় আধিপত্য বড় দলগুলোর। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই কে ফেবারিট? তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারা খেলতে পারে সেমিফাইনালে তার আলোচনা নিয়েও শেষ নেই। স্বাগতিক ভারতের পাশাপাশি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের নাম আনছেন কেউ কেউ। আবার দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের নামও আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সের ওপর ভর করেই সাবেক ক্রিকেটাররা ফেবারিটের তালিকা তৈরি করে চলেছেন। সঙ্গে থাকছে অতীত রেকর্ড। তবে রেকর্ড আর পরিসংখ্যান যাই হোক, ক্রিকেটের বেলায় তা অনেক সময় তার ব্যাত্যয় ঘটে। যে কারণে ক্রিকেটে অঘটন প্রায়ই দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় কখনো কেনিয়ার কাছে হেরে যায় ভারত, আয়ারল্যান্ডের কাছে কুপোকাত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ক্রিকেট পরাশক্তিরা।

এবার দেখা যাক ভারতে চলমান ত্রয়োদশ বিশ্বকাপে কার সম্ভাবনা কেমন-

ভারত

ঘরের মাঠে ভারত সব সময়ই ফেবারিট। তার ওপর এবার দারুণ একঝাঁক ক্রিকেটার রয়েছে দলে। তাদের ব্যাটিং তো তুলনাহীন। ব্যাটিংয়ে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার সঙ্গে তরুণ শুভমান গিল রয়েছেন। আরেক তরুণ স্রেয়াশ আয়ারও আলোচিতা ব্যাটার।

India cricket team

চলতি বছর পাঁচটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করে দারুণ ছন্দে গিল। ভারতের ব্যাটিংয়ে সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবিন্দ্র জাদেজা নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তারা কয়েক ওভারের ঝড়ে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

বিজ্ঞাপন

ভারতের বোলিংও দুর্দান্ত। এর মধ্যে কুলদিপ যাদব, রবিন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিন আক্রমণকে টুর্নামেন্টের সেরার মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। স্পিনসহায়ক পিচে এই ত্রয়ীর জন্যই হট ফেবারিট ভারত। পেসও মন্দ নয়। জসপ্রিত বুমরাহ আগের মতো প্রাণঘাতি না হলেও এখনও বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর বোলার। এশিয়া কাপের ফাইনালে ঝড় তোলা মোহাম্মদ সিরাজ তো নয়া সেনসেশন। ব্যাটিং-বোলিংয়ের গভীরতা ও বৈচিত্র্যের জন্যই শিরোপার অন্যতম দাবিদার ভারত।

সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও সে কথা বলছে। ২০২৩ সালে ভারত ২১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। ১৫ ম্যাচে জয় তাদের। পাঁচটিতে হার, একটিতে রেজাল্ট হয়নি।

অস্ট্রেলিয়া

টবলে ব্রাজিল যেমন, ক্রিকেটে তেমন অস্ট্রেলিয়া। যে কোনো আসরেই ফেবারিটের তালিকায় রাখতে হবে তাদের। রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপার মিশনে নেমেছেন কামিন্স-স্মিথরা। তবে স্পিনের উর্বরভূমি ভারতে দেড় মাসের দীর্ঘ টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছে, অথচ দলে মাত্র দুইজন স্পিনার।

Australia cricket team

এর মধ্যে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আবার পার্টটাইমার। দলে একমাত্র বিশেষজ্ঞ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। অফ স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারের পরিবর্তে ব্যাটার মার্নাস লাবুশেনকে নেওয়ায় স্পিনার কমে গেছে। তবে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজলউডের সমন্বয়ে গড়া পেস আক্রমণ আসরের অন্যতম সেরা। অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি শক্তি হলো মিচেল মার্শ, মার্কাস স্টয়নিস, ক্যামেরন গ্রিনের মতো ক’জন দুর্দান্ত পেস অলরাউন্ডার।

এ বছর খেলা ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স সমানে সমান বলা যায়। ১১ ম্যাচের পাঁচটিতে জিতেছে তারা, হেরেছে ছয়টিতে।

ইংল্যান্ড

চমৎকার সব ব্যাটার, দুর্দান্ত পেস ডিপার্টমেন্ট ও বৈচিত্র্যপূর্ণ স্পিনারদের নিয়ে ভারতে এসেছে ইংল্যান্ড দল। সবচেয়ে বড় বিষয় তারা বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। দলের অধিকাংশ ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

জস বাটলারের নেতৃত্বে জনি বেয়ারস্টো, ডেভিড মালান, হ্যারি ব্রুক, জো রুটের সঙ্গে গত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বেন স্টোকস রয়েছেন। তাই ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড।

England cricket team

তাদের সঙ্গে দুই স্পিন অলরাউন্ডার মইন আলি ও লিয়াম লিভিংস্টোন যোগ হওয়ায় ব্যাটিং গভীরতা বেড়েছে। তবে বোলিংয়ে এ দু’জনের সঙ্গে দলের সেরা স্পিনার আদিল রশিদের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

ইংল্যান্ড এ বছর ১৩ ম্যাচ খেলে সাতটিতে জয় পেয়েছে, হার চার ম্যাচে। এক ম্যাচে রেজাল্ট হয়নি।

England cricket team

পাকিস্তান

বিশ্বকাপের আগে দারুণ প্রাণোচ্ছ্বল ছিল পাকিস্তান। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা বিমর্ষ। দলের অন্যতম বোলার নাসিম শাহ ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় বোলিং শক্তি অনেকটা কমে গেছে। তারপরও শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফরা রয়েছেন।

England cricket team

যে কোনো দলের ব্যাটিং লাইন ধ্বসিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে তারা। কিন্তু স্পিনারদের নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তা পাকিস্তানের জন্য। শাদাব খান, মোহাম্মদ নওয়াজরা ছন্দে নেই। অথচ ভারতে ভালো করতে হলে এই স্পিনারদের ভালো করতে হবে। এ জন্য পেস অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফকে বাদ দিয়ে লেগস্পিনার উসামা মিরকে দলে নেওয়া হয়েছে।

ব্যাটিংয়েও সমস্যা তাদের, ধারাবাহিকতার অভাব। বিশেষ করে ওপেনাররা ছন্দে নেই। তবে পাকিস্তান দল আনপ্রেডিক্টেবল। ফাখর জামান, ইফতেখাররা জ্বলে উঠলে যে কোনো কিছু করা সম্ভব পাকিস্তানের জন্য।

পাকিস্তান এ বছর বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ১৬ ম্যাচ খেলে ১০টিতে জয় পেয়েছে। হেরেছে পাঁচ ম্যাচে। পরিত্যক্ত এক ম্যাচ।

নিউজিল্যান্ড

দুর্ভাগা একদল নিউজিল্যান্ড। অনেক দূর যায় কিন্তু শেষ সাফল্যটা পাওয়া হয় না। ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে সেমিফাইনাল খেলাটা অভ্যাসে পরিণত করেছে কিউইরা। শেষ দু’বার খেলেছে ফাইনাল।

New zealand cricket team

এবার কেন উইলিয়ামসন, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের এটাই শেষ বিশ্বকাপ। সোনালি প্রজম্মের তিনজন গত দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছেন। তবে শিরোপার দেখা পাননি। এবার সেই অপূর্ণতা ঘোচাতে পারবেন কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। তবে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাদের পক্ষে কথা বলছে না।

নিউজিল্যান্ড এ বছর হেরেছে বেশি। ২১ ম্যাচ খেলে মাত্র আটটিতে জয় তাদের। ১১ ম্যাচে হার। এক ম্যাচ পরিত্যক্ত।

দক্ষিণ আফ্রিকা

একটা সময় দারুণ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইন। তবে অ্যানরিখ নরকিয়া ছিটকে যাওয়ায় বোলিং লাইন কিছুটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে প্রোটিয়াদের। উপমহাদেশের এই উইকেটে কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিদি কতটা ভীতিজনক হতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

South Africa cricket team

তাবরিজ শামসি ও কেশব মহারাজের স্পিন আক্রমণ মোটামুটি চলনসই। এবার প্রোটিয়াদের মূল শক্তি ব্যাটিং। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন কুইন্টন ডি কক, এইডেন মারর্কাম, হেনরিক ক্লাসেন ও ডেভিড মিলাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তারা নিজেদের সেই শক্তি দেখিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তারা। এক ইনিংসেই তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। পরের ম্যাচগুলোতেও তারা জ্বলে উঠলে যে কোনো কাউকে জানাতে পারে তারা।

দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থা নিউজিল্যান্ডের মতই। চলতি বছর বিশ্বকাপের আগে ১২ ম্যাচে খেলে আটটিতে জয়, চারটিতে হার।

বাংলাদেশ

বিশ্বকাপ দল নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক হলেও উপমহাদেশে খেলা বলেই চমক দেখাতে পারে বাংলাদেশ। সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণ দলটি চমক দিতে পারে ফেবারিটদের। যে কোনো দলকে হারানোর ক্ষমতা সাকিবদের রয়েছে।

Bangladesh cricket team

তার প্রমাণ বিশ্বকাপে তো দিয়েছেই, বিভিন্ন সিরিজেও দিয়েছে। বড় বড় দলকে পেছনে ফেলে সুপার লিগে তৃতীয় হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপের আগে র্যাংকিংয়ে অবনতি হয়েছে দলটির। সাত নম্বর থেকে আটে নেমেছে।

বাংলাদেশ ২০ ম্যাচ খেলে আটটিতে জয় পেয়েছে, হেরেছে ৯ ম্যাচে। তিন ম্যাচ পরিত্যক্ত।

সুত্র জাগো