অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ঠা অক্টোবর ২০২৩ রাত ১০:৫২

remove_red_eye

১৩৯৭

মলয় দে : ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এটি ভোলার একটি স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ।১৯১৮ সালে স্কুলটির প্রতিষ্ঠা।প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই স্কুলটির সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে দায়িত্বরত বিভিন্ন  প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ চেষ্টা করে গেছেন।করোনা কালীন সময়ের পর থেকে এ বছরের শুরুর দিকে পর্যন্ত  বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দূর্বলতার কারনে স্কুলটির পরিচালনায় ব্যাপক অবনতি ঘটে। এর কারনে  প্রতিষ্ঠানটির সুনাম কিছুটা হলেও ক্ষুন্ন হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই প্রভাব পড়তে শুরু করে।শিক্ষার্থীদের স্কুলে অনুপস্থিতি ,স্কুল পালানো, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং এর মতো মারাত্মক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে প্রায়শই শোনা যেতো।
তবে এখন এর চিত্র পুরোই উল্টো।নতুন প্রধান শিক্ষক হিসেবে সফিকুল ইসলাম এর যোগদানের পর স্কুলটির সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। বিদ্যালয়টির কঠোর  প্রশাসনিক কর্মকান্ডের ফলে কমে এসেছে স্কুল পালানো,স্কুলে অনুপস্থিতির সংখ্যা। নতুন প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে কিশোর গ্যাং ও ইভটিজিং এ বিষয়ে কোনো অভিযোগের কথা শোনা যায় নি। সেই সাথে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা ও পড়াশোনার পরিবেশ।
জানা যায়, পড়াশোনার মানোন্নয়নে কিছুদিন পর পর ডাকা হচ্ছে অভিভাবক সমাবেশ।শিক্ষার্থীদের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো সেখানে তুলে ধরছে অভিভাবকগন।স্কুলে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত ও স্কুল পালানো বন্ধ করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শ্রেনী শিক্ষকরা।স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে সেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।পরামর্শে কাজ না হলে নেওয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ। এসব নানা উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে সুফল এখন মিলছে।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এখন শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।যেখানে গত কয়েক বছরে দিবা ও প্রভাতি এই দুই শিফট মিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা গড়ে ৭০০-৮০০ জন।সেখানে গত কয়েক মাসে দৈনিক গড় উপস্থিতি দাড়িয়েছে ১৪০০-১৫০০ জনে।এর পাশাপাশি স্কুল পালানো শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও অনেক নিচে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক শাওন আব্দুল্লাহ জানায়,এখন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেড়েছে। স্কুলে উপস্থিত থাকার প্রবনতা শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে।এর পাশাপাশি স্কুল পালানো কমে আসায় শ্রেনীকক্ষ গুলোতে যেনো প্রান ফিরে এসেছে।
পড়াশুনায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনার জন্য একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক ভাবে ফিট থাকা প্রয়োজন। এই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে স্কুলে অভ্যন্তরীন ক্লাস ভিত্তিক  ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের  আয়োজন করা হয়।যা দীর্ঘ দুইমাস ধরে চলছে।এর পাশাপাশি কিছুদিন আগে  ইনডোর গেমস যেমনঃ দাবা,কেরাম এর প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়।
স্কুলটির দিবা শিফটের ক্রীড়া শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল জানান,শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ে ইনডোর ও আউটডোর গেমস এর আয়োজন করা হয়েছে।এ ধরনের খেলাধুলার আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মাঝে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। স্কুলে উপস্থিতি ও বৃদ্ধি পেয়েছে।এ ধরনের খেলাধুলার আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মাদক, ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং এর প্রতি যে আসক্তি তা কমে এসেছে বলে আমি মনে করি।
এদিকে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে খুশি শিক্ষার্থীরা।পড়াশোনায় মনোনিবেশের পাশাপাশি অংশগ্রহন করছে বিভিন্ন স্কুলভিত্তিক প্রতিযোগীতাগুলোতে। অর্জন করেছে বিভিন্ন পুরস্কার।
স্কুল প্রসঙ্গে দিবা শিফটের ৯ম শ্রেনীর কয়েকজন শিক্ষার্থী  জানায়,আমাদের স্কুলের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।এতে শিক্ষার্থীদের স্কুল পালানো কমে গেছে ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে।বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশের ও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।বিদ্যালয়ে প্রবেশ পথে ফুলের বাগানটি স্কুলটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।ক্লাসরুম গুলো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে সব সময়।
তারা আরো জানায়, শিক্ষকরা আমাদেরকে অনেক সহযোগীতা করেন।তারা যে কোন বিষয় সহজ ও সাবলীলভাবে পাঠদানের মাধ্যমে তা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন।পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করে নিয়মিত পুরস্কার অর্জন করছি।
বিদ্যালয়ের দিবা শিফটের সিনিয়র শিক্ষক হুমায়ুন কবির  জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক সফিকুল ইসলাম স্যার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের বিষয়টি ভেবে  বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করেন।এর মধ্যে অভিভাবক সমাবেশের বিষয়টি অন্যতম।এছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ, খেলাধুলা,ডিবেটিং ক্লাব,কম্পিউটার ক্লাব নতুন করে গঠনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।তার প্রশাসনিক কঠোরতায় পিছিয়ে পড়া অনেক শিক্ষার্থী এখন আর পিছিয়ে নেই।এক কথায় বলতে গেলে এখন ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পরিবেশ পুরোপুরি ফিরে এসেছে।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও এমন বক্তব্য পাওয়া যায়।তারা  বলেন,স্কুলের এমন পরিবর্তনে আমরা খুব খুশি।তবে বর্তমান প্রধান শিক্ষক আরো ২/৩ বছর আগে দায়িত্ব পেলে হয়তো বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ও ফলাফল আরো ভালো হতো।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আহসান কবির জানান,স্বনামধন্য এই স্কুলটিতে এখন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।স্কুলের বাহ্যিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিসের মধ্যে খেলাধুলা,বিজ্ঞান উৎসব  সহ এমন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং তা আগামীতেও হবে।
নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়  বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে আলোচনা করে এর সমাধান করা হয়েছে।