অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


তজুমদ্দিনে সেরা ব্রিক্সে বনের কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট


তজুমদ্দিন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৫শে মার্চ ২০২০ ভোর ০৫:০৫

remove_red_eye

৮৩৭

তজুমদ্দিন  সংবাদদাতা ॥ ভোলার তজুমদ্দিনের চাঁচড়ায় জনবসতি এবং ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরী করে দেশীয় ম্যানগ্রোভের কাঠ পোড়ানোর কারণে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। পোড়ানোর জন্য কাটানো হচ্ছে চরাঞ্চলের ম্যানগ্রোভের গাছ। আইন অমান্য করে ভাটার মধ্যে তৈরী করা হয়েছে করাত কল ও স্থাপন করা হয়েছে ড্রাম চিমনি।
 
সুত্রে জানা যায়, উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে মেঘনার নদীর সীমান্তবর্তী কাটাখালী গ্রামে কৃষিজমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কয়েক বছর পূর্বে স্থাপন করা হয় সেরা ব্রিকস নামের ইটভাটা। স্থাপনের পর থেকেই এই ভাটায় প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট তৈরীর করা হয়। বছর প্রায় ২০-৩০ লাখ ইট তৈরী জন্য  কাঠ পোড়ানো হয়। অভিযোগ রয়েছে,এসব কাঠ চোড়াইভাবে সংগ্রহ করা হয় মেঘনায় বাসনভাঙ্গা, চরমোজাম্মল ও কাঞ্চনপুরের ম্যানগ্রোভ থেকে। ইটভাটাটিতে ব্যবহার করা হয়নি পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ চিমনি। সনাতন পদ্ধতিতে ড্রামের চিমনি ব্যবহার করে দেশীয় কাঠ পুড়িয়ে তৈরী হচ্ছে ইট। ড্রামের চিমনি ব্যবহার করলে ইট পোড়াতে কাঠের প্রয়োজন হয়। আর তা সংগ্রহ করা হয় মেঘনার চরাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ কাঠ। এসব কাঠ চেরানোর জন্য ভাটার মধ্যেই একটি করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটাটিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় ইট পোড়ানোর মৌসুমে প্রচুর বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়। ফলে বিষাক্ত এই ধোঁয়ার কারণে ওই এলাকায় ধান, রবিশস্য ও বসত বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবে ভাটাটি চালানোর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি মালিকের ছেলে ও ভাটার ম্যানেজার লিটন সিকদার।

স্থানীয়রা জানান, জনবসতিপূর্ণ কৃষিনির্ভর এলাকায় ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরী করার কারণে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোতে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। এছাড়া সেরা ব্রিকস্টি  ফসলি জমির উপর স্থাপন করায় তাদের ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি  ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসহ বাগানের ফলদ গাছের ফলও কমে গেছে।

ভাটায় গিয়ে মালিক আবুল কাশেম মিয়াকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার মালিকানাধীন মেসার্স সেরা ব্রিকস্ েঅবৈধ ভাবে ইট পোড়ানোর ব্যাপারটি এড়িয়ে যান। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র ছাড়া কিভাবে ইটভাটা চালান এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেননি মালিক কাশেম মিয়া।


অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের ইটপোড়ানের নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪ ধারার ৫ উপ-ধারা অনুযায়ী আবাসিক এলাকা ও ফলদ বাগানের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। আইনে আরো বলা হয়েছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী বিনা লাইসেন্সে কেউ ইট তৈরী করতে পারবে না। ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। করলে অনধিক তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।


এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ আশ্রাফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে তার জানা নেই। খুবশীঘ্রই পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ভোলা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, ড্রামের চিমনি দিয়ে কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরী করা সম্পূর্ণ বেআইনি। তজুমদ্দিনের চাঁচড়ার অবৈধ মেসার্স সেরা ব্রিকস্টির তালিকা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতি পেলেই যে কোন মুহুর্তে তা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। তিনি আরো বলেন, সেরা ব্রিকস্রে মালিক পক্ষ ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে ভাটাটি অবৈধ হওয়ায় তাদের আবেদনটি বাতিল করা হয়।