অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৮ই অক্টোবর ২০২৪ | ২৩শে আশ্বিন ১৪৩১


লালমোহনে জামাতার দেয়া আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব রূপজান


লালমোহন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৬শে আগস্ট ২০২৩ রাত ১০:২২

remove_red_eye

১৪২

লালমোহন প্রতিনিধি : পঞ্চাশ বছর বয়সী রূপজান বেগম। ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ফুলবাগিচা এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার স্বামী হাদিস পরপারে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় চার বছর আগে। রূপজানের বৃদ্ধ মা-বাবা থাকেন তার সঙ্গেই। তাদের নিয়ে একটি টিনসেড ঘরে থাকতেন তিনি।

তবে গত মার্চ (বুধবার) রূপজানের সেই বসতঘরে ক্ষোভের বশে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন জামাতা। মুহূর্তের মধ্যেই বসতঘরসহ ভেতরের চাল-ডাল, হাড়ি-পাতিলসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর ঘরে। পরে জামাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এছাড়া দুই বোন এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে পুরনো ভিটায় আবার তুলেন টিনের ছাপড়ি ঘর। ঘর তুললেও দুঃখ কমেনি স্বামীহারা অসহায় রূপজানের। এখন ঘরে নেই চৌকি বা খাট। তাই মাটিতেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে ঘুমাতে হয় তাকে। পরনের কাপড়-চোপড় কিছুই নেই তার। তাই বাধ্য হয়ে গত কয়েকদিন ধরে  মানুষের পুরনো কাপড়-চোপড় খুঁজে খুঁজে পরছেন তিনি। দিন যত যাচ্ছে রূপজানের অসহায়ত্ব তত বাড়ছে। এক সময় এলজিইডির এলসিএস প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের কাজ করতেন তিনি। তবে এখন সে কাজও নেই।

লালমোহন পৌরশহরে মানুষের থেকে সহযোগিতা তোলার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। সময় তিনি বলেন, আমার সবকিছু ছিল। স্বামীর রেখে যাওয়া ঘর। রাস্তায় কাজ করে জমানো টাকা চাল। স্বর্ণালঙ্কার পরনের কাপড়-চোপড়। জামাই ঘরে আগুন দেওয়ার পর আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত কয়েক মাস কাজের সন্ধানে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। তবে কাজ পাইনি। তাই এখন বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করেছি। মানুষের এই সহযোগিতার টাকায় আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আর নিজে কোনো মতে চলছি।

রূপজান বেগম বলেন, আমার মা-বাবার নামে বয়স্ক ভাতা আর আমার জন্য বিধবা ভাতা এবং সরকারি বরাদ্দের চালের ব্যবস্থা করলে আর এমন কষ্ট করতে হতো না। তাই আমি এসব সহযোগিতা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করছি।

রূপজানের প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন জানান, মেয়ের জামাই বসতঘরে আগুন দেওয়ার পরে তিনি ভুল বুঝতে পেরে কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। বাবা-মা সঙ্গে থাকায় রূপজানের বোনেদের এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে টিনের একটি ছাপড়ি ঘর তুলে সেখানে থাকছেন রূপজান। তবে ঘরে চৌকি এবং আসবাবপত্র কিছুই নেই। বাবা মাকে নিয়ে মাটিতে ঘুমাচ্ছেন তিনি। সংসারে উপার্জনের অন্য কেউ না থাকায় এখন মানুষের সহযোগিতায় বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে কোনো মতে দিন পার করছেন তিনি। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করলে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে রূপজান বেগম কিছুটা ভালো থাকতে পারবেন বলে মনে করছি।

বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, দেশের অসহায় মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ওই নারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।