মনপুরা প্রতিনিধি : ভোলার মনপুরায় গত তিন দিন ধরে মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হয়ে দশ গ্রাম সহ একের পর এক নিত্য নতুন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে বেড়ীর ভিতর ও বাহিরে ৫-৬ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।
এদিকে গত তিন দিন (বুধবার-শুক্রবার) ধরে অর্ধহারে-অনাহারে দিনযাপন করলেও এখন মেলেনি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। এতে দুর্গত এলাকায় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে মনপুরা উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন চরকলাতলী ও চরনিজামের অবস্থা চরম আকার ধারন করেছে। ওই সমস্ত এলাকায় বেড়ীবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানির তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। জোয়ারের পানি গত দুই দিনের চেয়ে শুক্রবার আরও বেশি হয়েছে বেলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেন সেখানে বসবাসরত উপজেলা ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবদুর রহমান।
ইউপি সদস্য জানান, শুক্রবারে কমপক্ষে ৬-৭ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হয় চরকলাতলী। মানুষ অনাহারে কোনমতে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। দুর্ভোগের মধ্যে সরকারি সাহায্য না পাওয়ায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে শুক্রবার মেঘনার পানি বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ। তিনি জানান, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার মেঘনার পানি বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে শুক্রবার বেলা ৩ টায় ঘুরে দেখা গেছে, মেঘনার পানি বাঁ উপচে বেড়ীর ভিতর প্রবেশ করছে। কোথাও ¯øুইজের গেইট না থাকায় সেখান জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অনকেকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। কেউ গবাধি পশু রক্ষার কাজে ব্যস্ত। কেউ আবার জোয়ারের পানিতে শিশু বাচ্ছা নিয়ে মাধ ধরায় ব্যস্ত। অনকে আজ পর্যন্ত কোন খাবার খায়নি। কেউ শুধুমাত্র পানি খেয়ে কোনমতে জীবযাপন করছে।
এদিকে জোয়ারের পানিতে হাজিরহাটোর চরমরিয়ম, দাসের হাট, সোনার চর, চরযতিন, চরজ্ঞান, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের আলমনগর, মাষ্টারহাট, মনপুরা ইউনিয়নের চরকলাতলী, কাজীরচর, পূর্ব আন্দির পাড় ও কাউয়ারটেকে বেড়ীর ভিতরে ও বাহিরে ৫-৬ ফুট জোয়ারে প্লাবিত হতে দেখা গেছে। এছাড়াও রামনেওয়াজ ঢাকা যাওয়ার লঞ্চ ঘাটি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। তখন যাত্রীদের দুর্ভোগ পৌহাতে দেখা গেছে।
এই ব্যাপারে দুর্গত এলাকার সলেয়মান, মামুন, করিম, আরজু বেগম ,নন্দিতা রাণী, অনুপম, আকাশ সহ অনেকে জানান, তিনদিন ধরে জোয়ারের পানিতে ভাসতেছি, কই কেই আমাগো খবর নিতে আইলো না। শুধুমাত্র চেয়ারম্যান আইছে। কিন্তু এহন পর্যন্ত না খাইয়া রইছি, কেউ আমাগোরে খাওনের লইগা কিছু দিলনা। আমারা এর বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম।
এই ব্যাপারে উপজেলার হাজীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, শুক্রবারে জোয়ারের পানি বেশি প্রবাহিত হয়েছে। আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি।
এই ব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্বে থাকা চরফ্যাসন উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নওরীন হক জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দুর্গত এলাকার জনগণকে সাহায্য ও সহযোগিতা করা হবে।