অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


তজুমদ্দিনে সুদখোর ইয়াকুবের প্রতারনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী


তজুমদ্দিন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ই জুলাই ২০২৩ রাত ০৮:৫৮

remove_red_eye

২৭২

তজুমদ্দিন প্রতিনিধি: ভোলার তজুমদ্দিনে এক সুদখোরের অভিনব প্রতারনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তার অভিনব প্রতারনার জালে আটকা পরা এক এসএসসি ফলপ্রার্থীর উপর হামলার ঘটনায় তার পরিবার প্রতারক ও তার স্ত্রীসহ ৫জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে তজুমদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করেন।
মামলার এজহার সুত্রে জানা যায়, উপজেলার চাচড়া ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মোতালের ছেলে ইয়াকুব (৩৫) দীর্ঘদিন এলাকায় সুদের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সুদের টাকা দিয়ে সুকৌশলে ব্যাংকের ব্যাংক চেক ও ষ্ট্যাম্প নিয়ে শুরু করেন অভিনব প্রতারনা। তার সুদের টাকা পরিশোধ করার পরও কৌশলে চেক ও ষ্ট্যাম্প আটকিয়ে রেখে কয়েকজনের নামে ভোলা আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। আবার কয়েকজনকে দেয়া হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত সুদখোর ইয়াকুব গংরা। এরই ধারাবাহিকতায় চাচড়া ৩নং ওয়ার্ডের কুট্টি মোল্লার ছেলে এসএসসি ফলপ্রার্থী মো. ইকবালকে (১৭) গত ৩/৪ মাস আগে কৌশলে অন্যজনের কাছে সুদের টাকা লগ্নি করছে মর্মে সাক্ষী হিসেবে তার স্বাক্ষর নেন। কিন্তু ৩/৪ মাস পরে ইকবাল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে দাবী করে বসেন সুদখোর ও প্রতারক ইয়াকুব। এ নিয়ে দ্বন্ধ শুরু হয় ইয়াকুব ও ইকবালের মধ্যে। গত ৫ জুলাই ইকবাল বেলায় সাড়ে ১১টার দিকে জনৈক লুতু মিয়ার বাড়ির দরজায় গেলে পূর্বে থেকে ওৎপেতে থাকা চিহ্নিত প্রতারক ও সুদখোর ইয়াকুবের নেতৃত্বে ৬/৭ জনের একটি সন্ত্রাসীদল ইকবালের উপর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পরে ইকবালের ডাকচিৎকারে তার পিতা কুট্টি মোল্লা (৭৫),  মা জরিনা বেগম (৬৫) ছেলেকে উদ্ধার করতে আসলে তাদের উপর হামলা চালায়। অন্যদিকে একই ঠিকানার আবু কালামের ছেলে রিয়াকারী (৪০) হামলার ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করায় তার মোবাইল নিয়ে পানিতে ফেলে দেয় এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হাতের কব্জি ভেঙ্গে দেয় ইয়াকুবের নেতৃত্বে থাকা সন্ত্রাসী দলটি। হামলার ঘটনায় গুরুতর আহতরা তজুমদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। পরে ইকবালের পিতা মো. কুট্টি মোল্লা বাদী হয়ে তজুমদ্দিন থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন, মো. ইয়াকুব (৩৫), তার ভাই মো. রুবেল (৩২), স্ত্রী মোসাঃ ঝর্ণা বেগম (৩০),  মো. জামাল (৪৫) ও সুমন (৩০)। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার নামীয় আসামী জামালকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। জানতে চাইলে মামলার বাদী কুট্টি মোল্লা বলেন, ইয়াকুব আমার ছেলে এসএসসি ফলপ্রার্থী ইকবালকে অন্য একজনের সুদের টাকার সাক্ষী হিসেবে ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। কিন্তু দুই মাস পরে সুদখোর ও প্রতারক ইয়াকুব দুই লক্ষ টাকা দাবী করেন। দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইয়াকুব গংরা আমাদের পরিবারের উপর হামলা করে। এতে আমাদের পরিবারের ৪/৫জন আহত হয়।গত ১২ জুলাই বিকেলে সরজমিনে চাচড়া সাংবাদিকরা গেলে সংবাদ পেয়ে ইয়াকুবের প্রতারনার শিকার অর্ধশতাধিক ভোক্তভোগী উপস্থিত হয়ে তাদের সাথে করা প্রতারনার বর্ণনা দেন। জানতে চাইলে ভোক্তভোগী ফজলু, নুরুন্নাহার, মো. রাকিব, রিজিয়া বেগম, মো. তুহিনসহ অনেকে জানান, আমরা বিভিন্ন সময় সুদখোর প্রতারক ইয়াকুবের কাছ থেকে লাভের উপর টাকা নিতাম। কিন্তু ইয়াকুব সুকৌশলে আমাদের কাছ থেকে ব্যাংক চেক ও ষ্ট্যাম্প নিয়ে যায়। পরে টাকা পরিশোধ করার পরও ষ্ট্যাম্প ও চেক ফেরত না দিয়ে আবারও মোটা অংকের টাকাদাবী করে বসেন ইয়াকুব। ভোক্তভোগীর তার দাবীকৃত টাকা দিতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হয়রানি করেন বলে দাবী ভোক্তভোগীদের।
তজুমদ্দিন থানার অফিসার ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান মুরাদ বলেন, চাচড়ার মারামারির ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এজহার নামীয় এক আসামীকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।