অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৩ই পৌষ ১৪৩২


দৌলতখানে নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বইয়ের সয়লাব


বাংলার কণ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ রাত ০৩:০৬

remove_red_eye

৯৬৭




দৌলতখান  সংবাদদাতা : ভোলার দৌলতখানে নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিছু অসাধু শিক্ষকের নির্দেশেই এসব বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।  শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে নতুন বছরের শুরুতেই উপজেলার বইয়ের দোকানগুলোতে খোলামেলা ভাবে চলছে এসব বইয়ের রমরমা ব্যবসা। এসব গাইড ও নোট বই কিনে না দিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না কোন অভিভাবকই। এমনকি ধার দেনা করেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বই কিনে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলায় ১০৬ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ , ১৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২১ টি মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা  ২৪-২৫টি বইয়ের দোকান থেকেই শিক্ষার্থীদের হাতে এসব বই পৌঁছে যাচ্ছে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে দোকানগুলোতে দ্বিতীয় থেকে দশম ও কলেজের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এসব গাইড ও নোট বইয়ের সয়লাব হয়ে গেছে। দৌলতখান বাজারে অবস্থিত ৬ টি  বইয়ের দোকান থেকেই এসব নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বইয়ের দোকান সহ শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।  একটি সিন্ডিকেট বইয়ের দোকান মালিকদের সাথে একত্রিত হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে নিম্নমানের এসব বই।
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকটি কোম্পানী ও বইয়ের দোকানের লোকজন বই বিক্রির জন্যে ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্কুলে গিয়ে পড়ালেখার বিঘœ ঘটাচ্ছে। তাদের বিক্রি করা গাইড ও নোট গুলোর মধ্যে রয়েছে, জননী , ফুলকুড়ি, লেকচার, পাঞ্জেরী  ও অনুপম প্রকাশনী ।  খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতখান উপজেলার  শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর এক শ্রেণির শিক্ষক এ অবৈধ বই বাণিজ্যে জড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বই কিনতে বাধ্য করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মুখস্থ বিদ্যার দিকে। এতে করে তাদের সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করা হচ্ছে।  সরকার যে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে তাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে অবৈধ গাইড ও নোট বই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক বলেন, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের জন্য স্কুলের স্যারের কথা মতো গাইড বই কিনতে হয়েছে।  সৃজনশীল ও অনুশীলনমূলক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করে মুনাফা লুটছে একটি অসাধু চক্র।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংগঠন এক নেতা জানান, আমাদের সংগঠনের সাথে কোন প্রকাশনীর যোগাযোগ নেই। এরা হয়তো গাইড ও নোট বিক্রির জন্য শিক্ষকদের কাছে বিদ্যালয় যেতে পারে। তবে কিছু কিছু অসচেতন অভিভাকরা হয়তো তাদের সন্তানদের এসব নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই তুলে দেয়।
এবিষয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নেতা জানান, বিভিন্ন প্রকাশনীর লোকজন নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই বিক্রি করতে স্কুেল স্কুলে যেতে পারে। তবে এদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই।  তারা কতিপয় শিক্ষকদের ম্যানেজ করে এসকল নিষিদ্ধ গাইড ও নোট শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে দেন। শিক্ষার্থীরা যদি ক্লাসমুখী হয় ,আর শিক্ষকরা যদি পাঠদানে মনোযোগী হন, তাহলে এ গাইড ও নোট শিক্ষার্থীদের আর প্রয়োজন হবে না। এ বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নরজদারি থাকা উচিত।
সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষক মহলের মতে, বছরের শুরুতে সরকার যেখানে বিনামূল্য বই দিচ্ছে।  সেক্ষেত্রে প্রকাশনীরা এ নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই এর নামে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। অপরদিকে মেধাশূন্য হয়ে পরছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। মূলত এগুলো প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখবাল করার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে  দৌলতখান উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষে এ যাবত কোন অভিযান হয়নি। যদি প্রশাসন অভিযান দিতো তাহলে হয়তো এরকম রমরমা বাণিজ্য হতো না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বছরের শুরুতে এরকম নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই পৌঁছে গেছে, এটা আমার জানা নেই। তবে কোন শিক্ষক এর সাথে জরিত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী শেখ বলেন, সব ধরনের নোট বা গাইড বই নিষিদ্ধ। কোনো স্কুল কর্তৃপক্ষ বা শিক্ষক গাইড ও  নোট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি প্রতিটি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের নিকট থেকে লিখিত এনেছি । যাতে গাইড বই না পড়ান। তবে গাইডের কোম্পানীর লোকজন স্কুলে গিয়ে সহায়ক বই হিসেবে শিক্ষকদের কিছু বই দেওয়া অভিযোগ রয়েছে।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জীতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, এবিষয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।