অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, মঙ্গলবার, ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৬ই পৌষ ১৪৩২


নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার: তবুও সংকট কাটে না কেন?


বাংলার কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২শে মে ২০২৩ সন্ধ্যা ০৭:৪২

remove_red_eye

৩৮৬

কয়েক বছরে একাধিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ঘোষণা আসলেও গ্যাসের সংকট কমেনি বাংলাদেশে। এমন কী বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করেও সংকট সামলানো যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে জ্বালানি নিয়ে সরকারের নেয়া ভুল নীতির কারণেই এই সংকটে পড়তে হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হলেও সেগুলো উত্তোলন প্রক্রিয়ায় সময় লাগায় পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার
সোমবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ভোলায় ইলিশা-১ নামের নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে, যেখানে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এখানে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। এটি দেশের ২৯তম গ্যাস ক্ষেত্র।

 

দেশে চলমান গ্যাস সংকট সমাধানে ভোলার এই গ্যাস আপাতত কোন সমাধান আনতে পারছে না। পাইপলাইন না থাকায় ভোলার বাইরে এই গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না। জেলাটিতে এ পর্যন্ত নয়টি কূপে ১.৭ ট্রিলিয়ন গ্যাস মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত হলেও জাতীয় গ্রিডে নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

নসরুল হামিদ বলেন, পাইপলাইন বসিয়ে ভোলার আবিষ্কার হওয়া গ্যাস দেশের মূল গ্রিডে নিয়ে আসতে সময় লাগবে। এ নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে, আশা করি, খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। আসলে ভোলা এলাকাটা নদী সংকুল হওয়ায় পাইপলাইন বসানো খুব সহজ নয়।

গ্যাসের সংকট কবে কাটবে?
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে ২৯টি। যার মধ্যে ১৯টি থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশের মজুদ থেকে প্রতিবছর এক টিসিএফ করে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই হারে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, এসব গ্যাস ক্ষেত্রে মোট মজুদ ছিল প্রায় ৩০.৮৩ টিসিএফ গ্যাস। এই মজুদের তালিকায় ১৯৬৫ সালে আবিস্কৃত যেসব গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে সেখান থেকে এতদিন পর্যন্ত ১৯.৯৪ টিসিএফের বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। গ্যাস উত্তোলনের পর বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৮.৬৮ টিসিএফ গ্যাস ।

বিদ্যুৎ, সার কারখানা, আবাসিক, পরিবহন খাতে ব্যবহারের কারণে এই মজুদও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা বড় ধরনের মজুদ পাওয়া না গেলে আগামী আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাবে।

বাংলাদেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় চারশো কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত দৈনিক সরবরাহ করে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এই গ্যাসের মধ্যে দেশীয় উৎপাদন প্রতিদিন ২৩০ কোটি ঘনফুট। বাকিটা আমদানি করা লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে মেটানো হয়।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আমাদের যে পরিমাণ গ্যাসক্ষেত্র আছে, সেখান থেকে প্রতিদিন আমরা ২২০০/২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমরা সরবরাহ করছি। আমাদের যতটুকু চাহিদা আছে, তাতে শুধু একটা গ্যাসক্ষেত্র সেখানে আসলে বিশাল কোন প্রভাব তৈরি করতে পারে না। যদি কোন এলাকায় আমরা বিপুল পরিমাণে গ্যাস পাই, সেটা হয়তো কাজে আসতে পারে, না হলে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে।

দেশে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন খাত ও অনেক শিল্প, কলকারখানা গড়ে ওঠে। ২০০১ সালের পর দেশে রাতারাতি গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জ্বালানি খাতের প্রায় ৪৬ শতাংশ গ্যাস খাত থেকে সরবরাহ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসের চাহিদা বেড়ে গেলে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিবর্তে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি করে নিয়ে আসার নীতি নিয়েছিল বাংলাদেশের সরকার। তখন দেশে অনুসন্ধান বা উৎপাদনের জন্য কূপ খননের চেয়ে আমদানি করাকে বেশি লাভজনক বলে মনে করা হয়েছিল।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলছেন, আশির দশকে যখন অনেক গ্যাসক্ষেত্রে পাওয়া গেল, তখন এমন অবস্থা ছিল যে, আপনার অনেক গ্যাস আছে, কিন্তু চাহিদা ততোটা নেই। ফলে এরপর আর গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

কি করছে কর্তৃপক্ষ?
দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে, তা দিয়ে চাহিদার পুরোটা মেটানো যায় না। এই সরবরাহের ৬০ শতাংশ, প্রায় ২১৭ কোটি ঘনফুট আসে শেভরনের ব্যবস্থাপনায় বিবিয়ানা, জালালাবাদ এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে।

বাংলাদেশের গ্যাসের চাহিদার বড় এটি অংশ যায়- বিদ্যুৎ, শিল্প, সার-কারখানা এবং গৃহস্থালি খাতে।

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া গেছে, সেখানে বিশাল কোন মজুদ নেই। কিন্তু গ্যাসের চাহিদা বেড়েই চলেছে। নতুন করে যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে গ্যাসের মজুদ কমে যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার,আমরা দেশের ভেতরে নতুন করে গ্যাসের অনুসন্ধান আর উত্তোলনে গুরুত্ব দিচ্ছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা ৪৬টি কূপ খনন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে কিছু অনুসন্ধান কূপ থাকবে, কিছু থাকবে উন্নয়ন কূপ আর কিছু ওয়ার্কওভার কূপ।

নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়। ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে উন্নয়ন কূপ খনন করা হয়। আর আগে খনন করা বা পরিত্যক্ত কূপে সেখানে পড়ে থাকা গ্যাস তোলার চেষ্টাকে বলা হয় ওয়ার্কওভার কূপ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলছেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশে এখনো অনেক গ্যাস আছে। যথেষ্ট অনুসন্ধান করা হলে এখান থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া সম্ভব। সেটা করা হলে আমদানি করা এলএনজি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা বহুলাংশে কমিয়ে দিতে পারে।

 





আরও...