অনলাইন সংস্করণ | ভোলা, রবিবার, ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৪ই পৌষ ১৪৩২


চরফ্যাসনে দেশের প্রথম পরিবেশ বান্ধব মসজিদ


চরফ্যাসন প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৯শে এপ্রিল ২০২৩ রাত ১০:৫১

remove_red_eye

১১২৩

                                   
এম. আবু সিদ্দিক,চরফ্যাশন থেকে: ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশ বান্ধব দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। অত্যন্ত সৌন্দর্য মন্ডিত স্থাপনার এই মসজিদ বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শহরে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ার সংলগ্ন চরফ্যাশন কেন্দ্রীয় খাসমহল জামে মসজিদ।
দেয়ালে সিরামিক ইটের গাঁথূনীর ফাঁকে ফাঁকে ডুকছে প্রকৃতির নির্মল বাতাস। উপরে মাকড়সা আকৃতির কাঁচের গন্বুজ ভেদ করে সূর্যের আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে মসজিদজুড়ে। ভিতর বাহিরে নান্দনিক এলইডি লাইটিং আর প্রকৃতিবান্ধব নির্মাণশৈলীর এই মসজিদ  ধর্মপ্রান মানুষকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ তিনতলায় সাড়ে চার হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা পর্যায়ে এই মসজিদে  মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহিলাদের জন্য আন্ডার গ্রাউন্ডে তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা রয়েছে।
২০১৮ সাল থেকে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হলেও করোনাকালীন সময়ে মসজিদের চলমান কাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। টানা প্রায় ৫ বছর চলছে মসজিদের নির্মাণকাজ। চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান বলেন,  এই মসজিদের চার দিকের দেয়ালে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টোন চিপসের সমন্বয়ে "ফেয়ার ফেস" সাদা সিমেন্টের প্লাস্টার দ্বারা পরিবেশ বান্ধব এই মসজিদের প্রতিটি দেয়াল সিরামিক ইটের গাঁথূনী। ফেয়ার ফেস প্লাস্টার, যার স্থায়ীত্ব ১০০ বছর। যাহা সম্পুর্ন প্রকৃতি বান্ধব। চরফ্যাশন পৌরসভার থেকে জ্যাকব টাওয়ার ও খাসমহল মসজিদের আশপাশে নান্দনিক সৌন্দর্য বর্ধনে মাঠ, রাস্তা ও ফুলের বাগানের কাজ চলছে।
চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র মোঃ মোরশেদ বলেন, এই প্রথম নির্মিতব্য পরিবেশবান্ধব একটি মসজিদ বাংলাদেশের বিস্ময়। মানবসেবায় এই জনপদে তাঁর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ১৭ মার্চে অনানুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই মসজিদে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ঈদ-উল-ফিতর নামাজস এই মসজিদে বিপুল সংখ্যক মুসল্লিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মসজিদের নির্মাণ কাজের ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। দেশের বিশিস্ট ওলামা আলেমদের নিয়ে পরিবেশ বান্ধব এই মসজিদ চালু হবে ইনশাল্লাহ।
মসজিদ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, খাসমহল মসজিদের ভিতর বাহিরে অনেক ফাঁকা জায়গা। ১৭ হাজার বর্গফুট আকারের মসজিদে দিনের বেলায় মসজিদে কোন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো লাগবে না। সূর্যের আলো প্রতিটি ফ্লোরে আলো ছড়াবে এবং মসজিদে বসেই সরাসরি সূর্যের আলো থেকে  ভিটামিন"ডি" পাওয়া যাবে। একত্রে নামাজরত মুসল্লিদের শ্বাস-প্রশ্বাস বহির্গমনে উপরে এবং নীচে সেন্ট্রাল একজস্ট ফ্যান ও পাইব রয়েছে। তিনদিকে দেয়ালের সিরামিক ইটের গাঁথূনী নির্মাণশৈলীতে এমনভাবে ফাঁকা রাখা হয়েছে তাতে সার্বক্ষণিক তাপমাত্রা সহনীয় থাকবে এবং বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়া কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন হবেনা। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার কম হবে। মসজিদের চার দেয়ালে স্টোন "ফেয়ার ফেস" সাদা সিমেন্টের প্লাস্টার ব্যবহার করায় কোন কৃত্তিম বা আর্টিফিসিয়ালি রং নেই এবং ভবিষ্যৎতে রং করা লাগবে না। নিচের মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে শ্বেত পাথর দ্বারা আর এসব কারনে মসজিদটি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। বাংলাদেশে এধরনের ডিজাইন ও পরিবেশবান্ধব মসজিদ দেশের কোথাও আর নেই। এটি হল বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশবান্ধব একটি মসজিদ।
মসজিদের চারপাশে সিরামিক ইটের নিখূঁতভাবে গাথুনী। তিনদিক থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ছাড়া বাহির থেকে সার্বক্ষণিক প্লাবিত হচ্ছে নির্মল প্রকৃতির বাতাস সামনে সিঁড়ি জুড়ে আলোর ঝলকানি। রাতেরবেলা সিঁড়ির আলো জলজল করছে।
এই মসজিদের মুল বৈশিষ্ট্য হল ভিতর বাহিরে প্রসস্থ খোলা জায়গা। দু’পাশে পানির ফোয়ারা, নান্দনিক লাইটিং আন্ডারগ্রাউন্ডে  আধুনিক শৌচাগার, অজুখানা  অটোপাওয়ার জেনারেটর। প্রথম ফ্লোরে পাশে সৌন্দর্য বর্ধনে দেয়ালের পাশে ফুল গাছ আর  লাইটিং পানিতে রঙ বেরঙের লাইটিং এ মাছের  একুরিয়াম। আধুনিকমানের লাইটিং ও দিনে সূর্যের আলোর সম্মিলন মসজিদ অঙ্গন। শৈল্পিক ডিজাইনের এই মসজিদ বাংলাদেশের ইতিহাস হয়ে থাকবে।
দৃস্টিনন্দন এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগতা ও স্বপ্নদ্রষ্ঠা ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, হাদিস শরিফে বর্নিত যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বলেছেন দুনিয়াতে মসজিদ নির্মাণ করবে, তার জন্য আল্লাহ পাক জান্নাতে অনুরুপ একটি ঘর তৈরি করে দিবেন। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক মানের মসজিদ নির্মাণ। গত প্রায় সাড়ে ১৪ বছরে আমার এলাকায় যত উন্নয়ন করেছি সেসকল উন্নয়নের মধ্যে সর্বসেরা উন্নয়ন খাসমহল জামে মসজিদ। এই মসজিদের প্রতিটি কাজ প্রকৃতি বান্ধব। এমন ভাবে মসজিদদের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে যা জলবায়ু সহিষ্ণু এবং বাংলাদেশের প্রথম পরিবেশ বান্ধব মসজিদ।